রবিবার , সেপ্টেম্বর ৮ ২০২৪

জনাব মসিউর রহমান

জনাব মসিউর রহমান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, প্যারাগন গ্রুপ।

মো. খোরশেদ আলম জুয়েল : কৃষির অন্য যেকোনো উপখাতের চেয়ে পোলট্রি শিল্প অনেক বেশি এগিয়ে এবং একটি স্বতন্ত্র অবস্থান তৈরি করে নিয়েছে, এটি অস্বীকার করার উপায় নেই। প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ৬০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে এ শিল্পে। পোলট্রি শিল্পের বর্তমান এ অবস্থান উদ্যোক্তা, খামারি, সরকার, বিভিন্ন এনজিও এবং কৃষি বিজ্ঞানীদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল। পোলট্রিকে শিল্প হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য রয়েছে উদ্যোক্তাদের পরিশ্রম, ভালোবাসা, আন্তরিকতা ও সংগ্রামের ইতিহাস। যাদের প্রানান্ত প্রয়াসে পোল্ট্রি শিল্পের উন্নতি ঘটেছে তাঁদের মধ্যে জনাব মসিউর রহমান অন্যতম।

জনাব মসিউর রহমান প্যারাগন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্টিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি) এবং ফিড ইন্ডাস্ট্রিজ এসোসিয়েশন বাংলাদেশ(ফিআব) -এর সভাপতি। ওয়ার্ল্ডস পোলট্রি সায়েন্স এসোসিয়েশন -বাংলাদেশ শাখা (ওয়াপসা-বিবি) এবং ব্রিডার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (বিএবি)-এর সাবেক সভাপতি।

জনাব মসিউর রহমান -এর জন্ম পহেলা জানুয়ারি ১৯৬১ সনে পুরাতন ঢাকার তাঁতী বাজারে। পিতা মরহুম মিজানুর রহমান এবং মাতা মরহুম সুফিয়া রহমান। পৈতৃক আদি নিবাস কুমিল্লা জেলায়। পড়াশোনা শেষে পৈতৃক ব্যবসা; এক সময়ের স্বনামধন্য উদয়ন প্রেসের সাথে জড়িত হন। এরপর ১৯৮৯ সনে নিজেই প্রতিষ্ঠা করেন প্যারাগন প্রেস লিমিটেড। একসময় সরাসরি উৎপাদনশীল ব্যবসা করার বিষয় মাথায় চেপে বসে। একবার সিদ্ধান্ত নেন গার্মেন্টস করবেন। কীভাবে যেন কোনো এক বন্ধুর মাধ্যমে শোনেন পোলট্রি ব্যবসার সম্ভাবনার কথা।

১৯৯৩ সনে স্ত্রী ইয়াসমিন রহমানকে নিয়ে গাজীপুরের বানিয়ারচালায় গড়ে তোলেন ২০ হাজার লেয়ার (ডিমপাড়া মুরগী) মুরগীর খামার। শুক্র, শনি কিংবা বন্ধের দিন নেই, চলে যেতেন ফার্মে। মুরগীকে খাওয়ানো থেকে শুরু করে অনেক কিছুই করতেন নিজ হাতে। ছেলে-মেয়েদেরকেও সঙ্গে করে ফার্মে নিয়ে যেতেন। গড়ে তুলেছেন গ্রাণ্ড প্যারেন্ট স্টক (জিপি) ফার্ম, প্যারেন্ট স্টক (পিএস) ফার্ম ও হ্যাচারি। প্যারাগন গ্রুপ বর্তমানে দিনে প্রায় ২ লাখ ডিম, সপ্তাহে প্রায় ১০ লাখ একদিন বয়সী ব্রয়লার/লেয়ার বাচ্চা এবং মাসে ৩৫ হাজার প্যারেন্ট স্টক বাচ্চা উৎপাদন করে। পোলট্রি, মাছ ও অন্যান্য পশু খাদ্য উৎপাদন হয় মাসে প্রায় ২৫ হাজার টন। বার্ষিক টার্নওভারের পরিমাণ প্রায় ৮০০ কোটি টাকা।

পরিবেশ সংরক্ষণ ও আধুনিক প্রযুক্তির কথা মাথায় রেখে পোলট্রি ও অন্যান্য বর্জ্যকে কাজে লাগিয়ে গড়ে তুলেছেন বায়ো এনার্জি প্রজেক্ট। উৎপাদিত হচ্ছে জৈব সার, বায়ো গ্যাস এবং বিদ্যুৎ। বর্তমানে তাঁর কোম্পানিতে কাজ করছেন প্রায় ৫ হাজার কর্মী। পরোক্ষভাবে জড়িত আছেন আরো প্রায় ২০ হাজার কর্মী। এছাড়াও রয়েছে প্রেস, হিমায়িত খাদ্য, প্লাস্টিক, চা বাগান, ইন্স্যুরেন্স, টেক্সটাইল, স্পিনিং এবং সোলার প্যানেল ব্যবসা।

অবসর সময়ে জনাব মসিউর রহমান গলফ খেলা, ছবি তোলা এবং দেশ-বিদেশে ভ্রমণ করতে পছন্দ করেন। ব্যাক্তিগত জীবনে জনাব মসিউর রহমান দুই ছেলে ও এক মেয়ের জনক। ব্যবসায়িক কর্মকা- ছাড়াও বহু সামাজিক ও সাংগঠনিক কাজে তিনি জড়িত।

This post has already been read 14614 times!