মো. খোরশেদ আলম জুয়েল : বেশ কয়েক মাস ধরে ইউটিউবে প্লাস্টিকের চালের কিছু ভিডিও রীতিমত ভাইরাল। ভোক্তাদের মাঝেও এ নিয়ে এক ধরনের আতঙ্ক বিরাজ করছে। চীন নাকি এসব নকল চাল তৈরি করছে। আফ্রিকান দেশগুলোতে চলছে এ নিয়ে তোলপার। সেনেগাল, গাম্বিয়া আর ঘানায় এই গুজব মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছেছে। বাধ্য হয়ে ঘানার ‘ফুড এন্ড ড্রাগ অথরিটি’ কিছুদিন আগে একটি তদন্ত চালায়।
ঘানার ‘ফুড এন্ড ড্রাগ অথরিটি’ সে দেশের জনগণকে প্লাস্টিকের চাল বলে সন্দেহ করছে এমন চালের নমুনা পেশ করতে বলে এবং সেটি নিয়ে তারা তদন্ত শুরু করে।কিন্তু তদন্তে শেষে তারা কি দেখলো?
মজার ব্যাপার হলো, ঘানার ফুড এন্ড ড্রাগ অথরিটি প্লাস্টিকের চাল বিক্রি হচ্ছে এমন কোন প্রমাণ পায়নি বলে জানা গেছে বিবিসি সূত্রে।
গুজবের সূত্রপাত তাহলে কিভাবে?
২০১০ সালে চীন থেকে প্রথমে এই গুজবের সূত্রপাত হয়। সে সময় সেখান থেকে গুজব ছড়ানো হয় যে, প্লাস্টিকের চাল তৈরি হচ্ছে এবং তা সাধারণ চালের মধ্যে মিশিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। বিশ্বের প্রায় সব দেশে ইন্টারনেট সহজলভ্য হওয়া দ্রুতগতিতে বিশ্বব্যাপী এটি ছড়িয়ে যায়। ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউবসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে এটি ছড়িয়ে পড়াতে সাধারণ মানুষের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক বিরাজ করছে। আফ্রিকার দেশগুলোতে এই গুজব মহামারি আকারে রুপ নেয় যে কারণে ঘানা’র সরকারি বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চালাতে বাধ্য হয়।
তবে আফ্রিকার দেশগুলোতে এই গুজব বেশি ছড়ানোর পেছনে ভূমিকা রাখে ২০১৬ সালের এক ঘটনা। নাইজেরিয়ান কাস্টমস কর্তৃপক্ষ আড়াই টন চাল আটক করে এবং শুরুতে তারা দাবি করে আটককৃত চাল নকল বা প্লাস্টিকের তৈরি। কিন্তু পরে তারা সেই দাবি যে ভুল ছিল তা স্বীকার করে। নাইেজরিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, প্লাস্টিকের চালের কোন প্রমাণ তারা পাননি। কিন্তু ততক্ষণে যা হওয়ার হয়ে গেছে, ইউটিউবে ভাইরাল হয়ে যায় কথিত প্লাস্টিক চালের কাহিনী।
আসল ঘটনা তবে কী?
প্লাস্টিকের চাল বলে একটি জিনিস আসলে তৈরি করা হয় কিন্তু সেটি খাওয়ার জন্য নয়। ডাকে বা কুরিয়ারে বাক্সে ভরে বিভিন্ন জিনিসপত্র পাঠানোর কাছে এটি এটি ব্যবহৃত হয় যাতে জিনিসপত্র নস্ট না হয়। খাবার চাল -এর সঙ্গে এর কোন সম্পর্ক নেই। তাছাড়া প্লাস্টিকের চাল তৈরির খরচ সত্যিকারের চালের উৎপাদন খরচের তুলনায় বহুগুণ বেশি।
বিবিসি সূত্রমতে, ‘ফ্রান্স টুয়েন্টি ফোর’ চ্যানেলের একজন সাংবাদিক আলেক্সান্দ্রে ক্যাপরন এই প্লাস্টিকের চালের মিথ্যে গল্পের পেছনের কাহিনি অনুসন্ধান করেছেন।
তিনি বলছেন, স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত চাল বাদ দিয়ে বিদেশ থেকে আমদানি করা চাল যাতে ভোক্তারা না কেনে, সেটা এই গুজব ছড়ানোর পেছনে একটি কারণ। তবে আফ্রিকার কোন কোন দেশে এই গুজব এতটাই ব্যাপক প্রচার পেয়েছে যে সরকারগুলো কথিত প্লাস্টিকের চাল বলে যে কিছু নেই, সেই ঘোষণা দিতে বাধ্য হচ্ছে।