মো. খোরশেদ আলম জুয়েল : ‘এই কয়েকদিন বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে গিয়েছি। খামারিদের সাথে মিশেছি, জেনেছি, কথা বলেছি উদ্যোক্তাদের সাথে, সত্যিই আমি বিস্ময়ে অভিভূত হয়েছি। পোলট্রি শিল্পে বাংলাদেশের অগ্রগতি চোখে পড়ার মতো। আমরা সাধারণত কোন দেশে ব্যবসা করতে গেলে সেখানকার পূর্বাপর তথ্য বিশ্লেষণ করি। জানার চেষ্টা করি সেখানকার সার্বিক পরিস্থিতি। বাংলাদেশে পোলট্রি শিল্পের যে বিষয়টি আমাকে রীতিমতো অবাক করেছে সেটি হলো এর প্রবৃদ্ধি অর্জন। শিল্প সংশ্লিষ্টদের সাথে আলাপ করে জেনেছি, বাংলাদেশের পোলট্রি শিল্প বিগত পাঁচ বছরে একশ’ ভাগ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। পোলট্রি শিল্পে শতভাগ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে যেখানে সময় লেগেছে পাঁচ বছর বাংলাদেশে নেদারল্যান্ডের সেখানে লেগেছে পচিশ বছর।’
উপরোক্ত কথাগুলো বলছিলেন ন্যাদারল্যান্ডভিত্তিক কোম্পানি ফ্রামেলকো (FRAMELCO) -এর মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা এবং দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের টেকনিক্যাল সেলস ডিরেকটর ফারজিন ওয়াফাদার (Mr. Farzin Wafadar)। বুধবার (১২ জুলাই) রাজধানীর এসিআই সেন্টারে এসিআই এনিমেল হেলথ্ আয়োজিত “EUBIOTIC NUTRITION : Another way to manage the gastro microflora in animal Nutrition” শীর্ষক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন। এছাড়াও তিনি এন্টিবায়োটিকের ব্যবহার, ফিড এডিটিভস সম্পর্কেও বিস্তারিত আলোচনা করেন।
সেমিনারে এসিআই এনিমেল হেলথ্ এর বিজনেস ডিরেক্টর মোহাম্মদ শাহীন শাহ স্বাগত বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশের পোলট্রি শিল্পের প্রবৃদ্ধি দ্রুত হারে বাড়ছে, সেই সাথে সম্প্রসারিত হচ্ছে এর বাজার। তাছাড়া ডেইরি ও মৎস্য সেক্টরেও আমরা আশাতীত সাফল্য অর্জন করেছি। এ সাফল্যের অংশীদার প্রত্যন্ত অঞ্চলের খামারি থেকে আমরা আপনারা সবাই।
তিনি আরো বলেন, এসিআই সব সময় নতুন নতুন প্রযুক্তি অনুসন্ধান করে এবং এটিকে গুরুত্ব দেয়। নিত্যনতুন প্রযুক্তি খামারিদের মাঝে ছড়িয়ে দেয়া আমাদের লক্ষ্য যাতে তারা উপকৃত হতে পারেন। পোলট্রি শিল্পে আমাদের প্রবৃদ্ধি চমৎকার হলেও পিছিয়ে রয়েছি মাথাপিছু প্রোটিন গ্রহণের ক্ষেত্রে। আপনাদের সহযোগিতায় আমরা বাংলাদেশের প্রোটিন স্বল্পতা পূরণে অবদান রাখতে চাই।
সেমিনারে “EUBIOTIC NUTRITION : Another way to manage the gastro microflora in animal Nutrition” শীর্ষক প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন FRAMELCO –এর সিনিয়র নিউট্রনিস্ট Mr. Ir. Andre Meeusen. উক্ত প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে তিনি পোলট্রি খাদ্যের বিভিন্ন উপাদান, রোগবালাই এবং চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করেন।
Mr. Ir. Andre Meeusen জানান, ইউরোপের দেশগুলোতে ২০০০ সন থেকে পোলট্রি ও পশু খাদ্যে এনিমেল মিল ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে। গরুর ম্যাড কাউ ডিজিজ ছড়িয়ে পড়ার কারণে এমন সিদ্ধান্ত নেয় ইইউ। এরপর তারা ২০০৬ সনে পোলট্রিতে এন্টিবায়োটিক গ্রোথ প্রমোটর ব্যবহার সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করে।
তিনি আরো বলেন- শুধু বাংলাদেশ নয়, সারাবিশ্বের জন্যই এন্টিবায়োটিক বর্তমানে একটি চিন্তার বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে। যত্রতত্র এর ব্যবহারের কারণে মানবদেহে রেজিস্ট্যান্স তৈরি হচ্ছে, বাড়ছে মাইক্রোবায়াল চ্যালেঞ্জ। মানুষ এখন সচেতন হচ্ছে, বর্তমানে আদর্শ পোলট্রির অন্যতম শর্তই হলো এন্টিবায়োটিক রেসিড্যুয়াল ফ্রি চিকেন।
উল্লেখ্য, এসিআই এনিমেল হেলথ আয়োজিত উক্ত সেমিনারে পোলট্রি শিল্পের সাথে জড়িত বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, উদ্যোক্তা, কোম্পানি প্রতিনিধি, সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা, খামারিসহ প্রায় দেড় শতাধিক লোক অংশগ্রহণ করেন। প্রেজেন্টেশনের পাশাপাশি সেমিনারে ছিল উন্মুক্ত প্রশ্নোত্তর পর্ব।