ডা. মো. সাইদুল হক:
ফুসফুসের প্যারেনকাইমার প্রদাহকে নিউমোনিয়া বলা হয়। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ফুসফুসের প্রদাহের সাথে ব্রংকিওলসের প্রদাহ থাকে। তাই এ রোগকে ব্রংকোনিউমোনিয়াও বলা হয়। বাংলাদেশে গাভীতে ৭.০৯%, বাছুরে ৯.৫৭% এবং ছাগলে ৮.৭৭ % নিউমোনিয়া হবার তথ্য রয়েছে।
চিকিৎসা
রোগের কারণ নিরূপণ করে চিকিৎসার ব্যবস্থা নিতে হবে। তবে ভাইরাসজনিত নিউমোনিয়াতে কোন নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। আবার মাইকোপ্লাজমার অবস্থান অন্তঃকোষীয় হওয়ায় মাইকোপ্লাজমার নিকট ওষুধ পৌঁছতে পারে না। যদিও নিউমোনিয়ার চিকিৎসা খুবই কার্যকর এবং ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ভালো ফল পাওয়া যায়। এন্টিবায়োটিক নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রাণী চিকিৎসকের মাঠ পর্যায়ের পূর্ব অভিজ্ঞতা ভালো ফল দিত পারে। নিউমোনিয়ার চিকিৎসার ক্ষেত্রে অনুমোদিত এন্টিবায়োটিক গ্রুপ হলো অক্সিটেট্রাসাইক্লিন, ফ্লুরোকুইনোলন, ফেনিকল, ম্যাক্রোলাইড, সেফালোস্পেরিন ইত্যাদি চামড়া বা মাংসে ইনজেকশন দিতে হবে।
এছাড়া এন্টিবায়োটিক এর পাশাপাশি সহায়ক চিকিৎসা হিসেবে কর্টিকোস্টেরয়েড ও নন স্টেরয়েডধর্মী প্রদাহরোধী ওষুধ খুব ধীরে শিরায় বা মাংসে প্রদান করলে ব্যথা কমার পাশাপাশি খাদ্য গ্রহণ, জ্বর ও প্রদাহ প্রশমিত করে। এছাড়া এলার্জি প্রতিরোধে এন্টিহিস্টামিনিক, শ্লেষ্মারেচক, মূত্রবৃদ্ধিকারক ওষুধ ব্যবহার করা যায়। জ্বরবিহীন রক্তদূষণের ক্ষেত্রে ৫% ডেক্সট্রোজ স্যালাইন ১-৩ লিটার বড় পশুর শিরার মধ্যে ইনজেকশন দিতে হবে। তবে ব্যাকটেরিয়াল নিউমোনিয়াতে রোগের শেষ অবস্থায় চিকিৎসা করলে, প্লুরিসি ও ফুসফুসে ফোঁড়া হলে, ড্রাগ প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়া হলে, অপর্যাপ্ত মাত্রায় ওষুধ প্রয়োগ করলে অকৃতকার্য হওয়ার আশংকা থাকে।
প্রতিরোধ
নানাবিধ কারণে নিউমোনিয়ার সংক্রমণ ঘটতে পারে। এজন্য গবাদিপশুকে উন্নত পরিবেশের মাঝে প্রতিপালন করা আবশ্যক। এদের বসবাসের ঘর খোলা-মেলা ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হতে হবে। কারণ বদ্ধ, স্যাঁতসেঁতে ও আর্দ্র আবহাওয়ার মধ্যে গবাদিপশু পালন করা হলে যেকোন সময় এরা নিউমোনিয়াতে আক্রান্ত হতে পারে। প্রাণিদের কখনো মাত্রাতিরিক্ত পরিশ্রম করানো যাবে না। যেকোন কারণে যেন ধকলে পতিত না হয় সেদিকে দৃষ্টি রাখতে হবে। এছাড়াও দীর্ঘ সময় বৃষ্টির পানিতে ভিজতে দেয়া উচিত নয়। গবাদিপশুর ঘর এমন হতে হবে যাতে ঝড় বৃষ্টির সময় সেখানে পানি প্রবেশ করতে না পারে। গবাদিপশুকে কখনো বাসি বা পচা খাদ্য খেতে দেয়া উচিত নয় কারণ এ জাতীয় খাদ্যে ছত্রাক জন্মে যা থেকে রোগের সূত্রপাত ঘটতে পারে। এজন্য এদের খাদ্য সঠিকভাবে গুদামজাত করতে হবে। যেহেতু পরজীবীর সংক্রমণ থেকে এ রোগ সৃষ্টি হতে পারে সেজন্য নিয়ম মাফিক কৃমিনাশক ওষুধ প্রয়োগ করতে হবে। শীতকালে অতিরিক্ত ঠাণ্ডার সময় ছোট বাছুরগুলোকে সাবধানে রাখতে হবে। উন্নত বিশ্বে নিউমোনিয়া প্রতিরোধ ভ্যাকসিন প্রদান করা হয়।