রাঙামাটি সংবাদদাতা : মানুষ যখন খুব খারাপ কোন কাজ বা অপকর্ম করে তখন তাকে অনেক সময় পশুর সাথে তুলনা করা হয়। বলা হয় তুমি মানুষ না, তুমি একটা পশু বা জানোয়ার। কিন্তু মানব অবয়বে জন্ম নেয়া কিছু অমানুষের অপকর্ম এতটাই নিচু পর্যায়ে চলে যায় যে, তখন তাকে পশু বললেও পশজাতির অপমান করা হয়।
এ রকমই এক অতি পাশবিক ঘটনা ঘটেছে রাঙামাটি জেলার কাউখালীর নাইল্যাছড়ি গ্রামে ‘সামিয়া ডেইরি ফার্ম’ নামক একটি গরুর খামারে। প্রতিষ্ঠানটির মালিক তরুন বয়সী নজরুল ইসলাম তাজল, পিতার নাম আব্দুল আউয়াল। খামারে মোট ২২টি গরু ছিল, এছাড়াও বাইরে বর্গা দেয়া রয়েছে ১০টি। বুধবার সন্ধ্যায় প্রতিষ্ঠানটির মালিক নজরুল ইসলাম যখন মাগরিবের নামাজ পড়তে যান সেই ফাকে কে বা কারা গরুর খাদ্যে বিষ মিশিয়ে দিয়ে যায়। নামাজ পড়া শেষে নজরুলের ফোনে খবর আসে ৮টি গরু মারা গেছে বাকীগুলো মুমূর্ষ।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে খামারের মালিক নজরুল ইসলাম তাজল জানান, অনেক স্বপ্ন নিয়ে ফার্মটি শুরু করেছিলাম। চট্টগ্রাম পলিটেক কলেজ থেকে মেকানিক্যাল ডিপ্লোমা কোর্স করার পর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম বিদেশ চলে যাবো। কিন্তু প্রবাসি বড় ভাইয়ের পরামর্শে এক সময় দেশেই কিছু করার সিদ্ধান্ত নিই। গরুর পাশাপাশি হাঁস, মুরগি, ভেড়া, ছাগলের খামার করবো বলে কাউখালি উপজেলা, কৃষি ব্যাংক থেকে ১৬ লাখ টাকা ঋণ নিই। কিন্তু এখন আমার সব শেষ।
নজরুল ইসলাম জানান, আগামী কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে নিজের অধীনে ২২টি গরু মোটাতাজা করছিলাম। দেশিসহ, নেপালী, পাকিস্তানী উন্নত জাতের গরু ছিল সবগুলো। যে ৮টি গরু মারা গেছে সেগুলোর বাজারমূল্য প্রায় ১০-১২ লাখ টাকা। বাকীদের মধ্যে ৪টি গরুর অবস্থা আশঙ্কাজনক এবং ১০টি এখনো পুরোপুরি সুস্থ হয়নি। এগুলো মারা গেলে আমি পথের ফকির হয়ে যাবো। ব্যাংক ঋণের চিন্তায় এখন আমি দিশেহারা। এ ব্যাপারে আমি সকলের সহযোগিতা চাই।
কাউকে সন্দেহ করেন কী না জানতে চাইলে নজরুল জানান, যেহেতু আমি নিজের চোখে কাউকে দেখিনি সুতরাং কারো নাম নির্দিষ্ট করে বলতে পারছিনা। তবে আমার উন্নতি দেখে এলাকার কেউই হয়তো হিংসার বশবর্তী হয়ে এমনটি করেছে। কাউখালি থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছি (জিডি নং ৮৮০/ ২১-৭-২০১৭ইং)। আমি চাই তদন্ত করে প্রকৃত আসামীদের দ্রুত বিচার করা হোক।
ঘটনাটি সম্পর্কে জানতে চাইলে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মঈনুল ইসলাম জানান, আমরা ঘটনাস্থলে পৌঁছানের আগেই আটটি গরু মারা যায়। যে গরুগুলো অপেক্ষাকৃত কম খাবার খেয়েছে সেগুলো কম আক্রান্ত হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি খুব বিষাক্ত কোন বিষক্রিয়ার কারণেই এমনটি হয়েছে। পরীক্ষা রিপোর্ট পাওয়ার পর সবকিছু জানাতে পারবো।
রিপোর্ট কবে নাগাদ পাবেন বলে আশা করছেন জানতে চাইলে বলেন, নমুনা আজকে (রবিবার) ঢাকায় পৌঁছে গেছে। এখনো পর্যন্ত নির্দিষ্ট করে বলতে পারছিনা কবে নাগাদ রিপোর্ট হাতে পাবো। রিপোর্ট পেলেই আপনাদের প্রকৃত বিষয় জানাতে পারবো।
এ ব্যাপারে জানার জন্য, কাউখালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল করিমের নাম্বারে দুইবার ফোন রিসিভ করা হয়নি এবং ক্ষুদে বার্তা পাঠানোর পরও এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কোন ফিরতি বার্তা পাওয়া যায়নি।