আমাদের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে, পণ্যের কোয়ালিটি বা গুণগত মান বজায় রাখা। দ্বিতীয় লক্ষ্য হচ্ছে, গুণগত মান ঠিক রেখেই কীভাবে সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে যাওয়া যায়। এক্ষেত্রে প্রাইস বা মূল্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমরা চাইনা আমাদের পণ্যগুলো শুধু উচ্চবিত্ত শ্রেণীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকুক। আমরা এটিকে সাধারণ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে চাই, যাতে করে তারা মাছের বৈচিত্র্যপূর্ণ স্বাদ গ্রহণ করতে পারে এবং আমিষ চাহিদা মেটাতে পারে। এ বিষয়টি আমরা গুরুত্ব দিয়ে ভাবছি এবং বিভিন্ন ধরনের মাছের স্বাদ এবং গুণ অক্ষুণ্ন রেখে নতুন নতুন প্রোডাক্ট তৈরির ব্যাপারে গবেষণা করছি। আমরা যখন এসব বিষয়ে সফল হবো তখন আর মানুষের মধ্যে ভুল ধারণা থাকবেনা।” –জাহিদুল ইসলাম, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, এক্সোন।
মুরগি মানেই ঝোল কিংবা রোস্ট করে খাওয়া, ডিম মানেই সিদ্ধ কিংবা পোজ করে খাওয়া –বাংলাদেশের পোলট্রি এখন আর সে অবস্থানে নেই। পোলট্রিজাত মাংসের ফ্রাঞ্চাইজি, প্রক্রিয়াজাত হিমায়িত মাংসের বাজার ক্রমাগত বিস্তৃত এবং জনপ্রিয় হচ্ছে ছোট–বড় সকল বয়স, পেশা, শ্রেণীর কাছে। আজ থেকে প্রায় দেড় যুগ আগে যখন এদেশের অনেক মানুষ পোলট্রি মাংস ও ডিমের কথা শুনলে নাক সিটকাতো, ঠিক সেই সময় কিছু উদ্যোক্তা পোলট্রিজাত এসব দ্রব্যকে প্রক্রিয়াজাত করে মানুষের খাবারের টেবিলে পৌঁছে দেয়ার স্বপ্ন দেখতেন। তাঁদের মধ্যে জনাব জাহিদুল ইসলাম অন্যতম। জাহিদুল ইসলাম, এক্সোন –এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক; ওয়াপসা–বিবি’র ভাইস প্রেসিডেন্ট, ডাচ বাংলা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ, অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিল এবং বাংলাদেশ ইনডেন্টিং এজেন্টস এসোসিয়শন–এর সদস্য। বাংলাদেশে পোলট্রির প্রক্রিয়াজাত হিমায়িত মাংসের ব্যবসার সাথে যে ক’টি কোম্পানি বর্তমানে জড়িত তাদের বেশিরভাগেরই কারিগরি এবং যান্ত্রিক সহযোগিতা এক্সোন –এর কাছ থেকে নেয়া। শুধু পোলট্রি ফার্মে মেশিনারি সরবরাহ নয় বরং সার্বিক কারিগরি সমাধানে ‘এক্সোন’ বাংলাদেশের পোলট্রি সেক্টরে একটি সুপরিচিত নাম।
এক্সোন– ইউরোপ, আমেরিক, অস্ট্রেলিয়া এবং এশিয়ার বিশ্বখ্যাত ৩০টিরও অধিক কোম্পানি যেমন– ROXELL, PASREFORM, SKOV, TECHNO, MAREL-STORK, CHIEF, OITTEVANGER, ABBI, GOGEMAT, VISCOFAN, DEIGHTON, NOWICKI, MAINCA, ROSER GROUP, DADUX, BOSS, LAPPAS, CARRIER, CONNECT, BYOND, SHINELONG, HELPER, ZELTECH, STEEN, GROSS, GREENLIFE OIL, JOE BLACK সহ ৩০টির অধিক কোম্পানির স্থানীয় এজেন্ট। জাহিদুল ইসলাম পড়াশেনা করেছেন আমেরিকাতে এবং জীবনের বেশিরভাগ সময়ই কাটিয়েছেন ইউরোপ, আমেরিকা এবং অস্ট্রেলিয়াতে। উন্নত প্রযুক্তি, মেশিনারি এবং প্রয়োজনীয় পণ্য গুণগতমানের নিশ্চয়তার জন্য চষে বেরিয়েছেন ইউরোপ–আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্য, অস্ট্রেলিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে। শুধ পোলট্রি নয়; ডেইরি, ফিশারি ছাড়াও মেডিকেল যন্ত্রপাতি ও মেশিনারি আমদানির বিশ্বখ্যাত কোম্পানিগুলোর স্থানীয় এজেন্ট এক্সোন। এছাড়াও প্রক্রিয়াজাত হিমায়িত খাদ্য তৈরির বিভিন্ন উপাদান আমদানি এবং স্থানীয় বাজারে সরবরাহ করেন তারা। সম্প্রতি এক্সোন প্রবেশ করেছে মাছের প্রক্রিয়াজাত হিমায়িত খাদ্য তৈরি ও বিপণনে যার ব্র্যান্ড নাম CHHIP (সিপ)। জনাব জাহিদুল ইসলাম –এর সাথে এগ্রিনিউজ২৪.কম এর সম্পাদক ও সিইও মো. খোরশেদ আলম জুয়েল–এর আলাপ হয় দেশে হিমায়িত পণ্যের বাজার, নতুন কোম্পানির পণ্য, বাজার ব্যবস্থাপনা, সমস্যা, সম্ভাবনা খুঁটিনাটি নানা বিষয় নিয়ে। সাক্ষাৎকারের চুম্বক অংশ পাঠকদের উদ্দেশ্যে এখানে তুলে ধরা হলো–
এগ্রিনিউজ২৪.কম : CHHIP (সিপ) নামকরণ, কোম্পানির কার্যক্রম এবং উদ্দেশ্য সম্পর্কে কিছু বলুন?
জাহিদুল ইসলাম : সিপ মূলত ইংরেজী শব্দ যার অর্থ বড়শি। বড়শি দিয়ে আবহমানকাল ধরে বাংলায় মাছ শিকার করা হয় এবং যেহেতু আমাদের পণ্য মাছের তৈরি সেহেতু আমরা নামটি নির্বাচন করেছি। মূলত আমাদের দেশে যে মিঠা ও লবণ পানির মাছ রয়েছে সেগুলোকে প্রক্রিয়াজাত করে যে বাই প্রোডাক্ট তৈরি করা হয় সেটিকে প্রসেসড ফিস বা প্রক্রিয়াজাত মাছ বলা হয়। কিন্তু এ জাতীয় প্রসেসকৃত পণ্যগুলোকে যখন ফারদার প্রসেস বা অধিকতর প্রকিয়াজাত করা হয় সেটিকেই আমরা ফ্রোজেন বা হিমায়িত পণ্য বলে থাকি। মাছের তৈরি এসব হিমায়িত খাদ্যই মূলত সিপ (CHHIP) প্রোডাক্টস। বর্তমানে দেশে পোলট্রি মাংস দিয়ে তৈরি যেসব হিমায়িত পণ্য পাওয়া যাচ্ছে আমরা ঠিক তার বিকল্প মাছের তৈরি পণ্য তৈরি করছি।
এগ্রিনিউজ২৪.কম : আপনিতো দীর্ঘদিন যাবত পোলট্রি শিল্পের সাথে জড়িত। পোলট্রি বা মুরগি রেখে হঠাৎ মৎস্যজাত হিমায়িত পণ্য উৎপাদনের দিকে নজর দিলেন কেন?
জাহিদুল ইসলাম : দেখুন মাছের প্রতি এক ধরনের দুর্বলতা রয়েছে আমার ছোটবেলা থেকেই। মাংস আমি পছন্দ করি তবে মাছকে একটু বেশিই করি বলতে পারেন। সেটা হতে পারে নাড়ির টান কিংবা অঞ্চলভিত্তিক একটা সম্পর্কের কারণে। যদিও আমি বিদেশে বড় হয়েছি তবুও নদী বিধৌত অঞ্চল বরিশালের লোক হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিতে ভালোবাসি। বুঝতেই পারছেন, নদী এলাকার লোক, মাছের প্রতি একটু বাড়তি টান থাকবেই।
তাছাড়া বাংলাদেশ যেহেতু একটি নদী মাতৃক দেশ সেক্ষেত্রে মাছের বা মাছ খাওয়ার প্রবণতা একটু বেশি থাকবে এটি স্বাভাবিক। আমি খেয়াল করেছি, বহুকাল থেকে মাছকে সাধারণভাবে আমরা যেভাবে খেয়ে আসছি সেভাবেই চলছে। কিন্তু আমরা এই মাছ দিয়ে যদি আরো বৈচিত্র্যপূর্ণ পণ্য তৈরি করতে পারি তবে মৎস্য খাতকে আরো বেশি ডেভেলপ করা যাবে। আমরা যদি মুরগি দিয়ে বিভিন্ন ধরনের হিমায়িত খাদ্য উৎপাদন করতে পারি এবং ভোক্তা মহলে ব্যাপক সাড়াও ফেলতে পারি তবে মাছ দিয়ে সেটি কেন সম্ভব হবে না। মাছ দিয়ে বৈচিত্র্যপূর্ণ সুস্বাদু বিভিন্ন খাদ্য পণ্য তৈরি এবং মাছের প্রতি মানুষকে আরো বেশি আগ্রহী করে তোলার চ্যালেঞ্জ হিসেবেই এটিকে আমি নিয়েছি এবং সেজন্যই এ খাতে প্রবেশ করা।
এগ্রিনিউজ২৪.কম : এসব হিমায়িত পণ্য তৈরি করতে যে মাছের প্রয়োজন হয় সেটি কি আপনাদের নিজস্ব খামার থেকে আসে নাকি আউটসোর্সিং করেন।
জাহিদুল ইসলাম : যেহেতু আমরা সদ্য শুরু করেছি সেজন্য আপাতত আমরা বাইরের মৎস্য চাষিদের কাছ থেকে মাছ সংগ্রহ করছি। নির্দিষ্ট কিছু নির্ভরযোগ্য এবং বিশ্বস্ত উৎস থেকে এগুলো আমরা সংগ্রহ করে থাকি। ভবিষ্যতে ব্যবসার পরিধি এবং ভোক্তাদের চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনানুযায়ী আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে নিজস্ব উৎস থেকে সংগ্রহ করার। তবে এখানে একটি কথা বলে রাখা জরুরি, এ ধরনের পণ্য তৈরিতে শতভাগ নিজস্ব উৎস থেকে সংগ্রহ করা সম্ভব না।
এগ্রিনিউজ২৪.কম : সিপ পণ্য তৈরি করতে আপনারা কোন ধরনের মাছ ব্যবহার করেন। মিঠা বা স্বাদু পানির মাছ নাকি লবণ বা সামুদ্রিক পানির মাছ?
জাহিদুল ইসলাম : একটু আগে যে কথা বলছিলাম, এ ধরনের পণ্য তৈরিতে শতভাগ নিজস্ব উৎস থেকে সংগ্রহ করা সম্ভব না। কারণ এসব পণ্য তৈরিতে মিঠা এবং লবণ পানি দু’ ধরনের মাছই ব্যবহার করা হয়। কেউ চাইলে হয়তো স্বাদু পানির মাছ নিজস্ব উৎস থেকে সংগ্রহ করতে পারবেন কিন্তু সামুদ্রিক মাছতো আর সম্ভব না।
সুতরাং আমরা দুই ধরনের মাছই ব্যবহার করি। আমরা যেসব পণ্য তৈরি করছি সবগুলো কিন্তু একই ধরনের বা একই উৎসের মাছ দিয়ে তৈরি সম্ভব না। আমাদের কিছু পণ্য আছে যেমন শক্ত বা হার্ড ধরনের সেগুলো তৈরি করতে সামুদ্রিক টুনা মাছ সবচেয়ে উপযোগী। কিছু পণ্য নরম বা সফট এক্ষেত্রে পাঙ্গাস, লিঠা, মাগুর জাতীয় মাছ ব্যবহার করা অত্যাবশ্যকীয়। আবার কিছু রয়েছে মাঝারি নরম বা শক্ত সেসব ধরনের পণ্যের ক্ষেত্রে তেলাপিয়া জাতীয় মাছ উপযোগী। আসলে সামগ্রিক বিষয়টাই নির্ভর করবে আপনি কোন ধরনের পণ্য তৈরি করতে চান এবং সে অনুযায়ী মাছ ব্যবহার করতে হবে।
এগ্রিনিউজ২৪.কম : আমাদের দেশে অনেকেই পাঙ্গাস, তেলাপিয়া বা পুকুরে চাষকৃত মাছ খেতে চান না। আপনাদের সংশ্লিষ্ট শিল্প এক্ষেত্রে কী ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করেন?
জাহিদুল ইসলাম : দেখুন এক্ষেত্রে শুধু ভোক্তাদের দোষ দিলে চলবেনা। আমরা হয়তো ভোক্তাদের এসব মাছ খাওয়ার ব্যাপারে সচেতন ও আগ্রহী করে তুলতে পারছিনা। আমাদের খাবারের মধ্যে বৈচিত্র্য আনতে হবে এবং ভোক্তাদের খাবার টেবিলে সেটি পৌঁছানোর ব্যবস্থা করতে হবে। আমাদের পণ্য সিপ তাই মাছ খাওয়ার ক্ষেত্রে স্বাদ অটুট রেখে নিত্যনতুন বৈচিত্র্য আনার চেষ্টা করবে।
সেজন্য আমাদের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে, পণ্যের কোয়ালিটি বা গুণগত মান বজায় রাখা। দ্বিতীয় লক্ষ্য হচ্ছে, গুণগত মান ঠিক রেখেই কীভাবে সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে যাওয়া যায়। এক্ষেত্রে প্রাইস বা মূল্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমরা চাইনা আমাদের পণ্যগুলো শুধু উচ্চবিত্ত শ্রেণীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকুক। আমরা এটিকে সাধারণ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে চাই, যাতে করে তারা মাছের বৈচিত্র্যপূর্ণ স্বাদ গ্রহণ করতে পারে এবং আমিষ চাহিদা মেটাতে পারে। এ বিষয়টি আমরা গুরুত্ব দিয়ে ভাবছি এবং বিভিন্ন ধরনের মাছের স্বাদ এবং গুণ অক্ষুণ্ন রেখে নতুন নতুন প্রোডাক্ট তৈরির ব্যাপারে গবেষণা করছি। আমরা যখন এসব বিষয়ে সফল হবো তখন আর মানুষের মধ্যে ভুল ধারণা থাকবেনা।
এগ্রিনিউজ২৪.কম : জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ–২০১৭ উপলক্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দেয়া প্রদত্ত ভাষণে, মৎস্য ব্যবসায়ীদের মাছে ভেজাল না দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। একসময় আমরা ভাবতাম ‘খাদ্য নিরাপত্তা’ নিয়ে এখন সেই সাথে যোগ হয়েছে ‘নিরাপদ খাদ্য’ উৎপাদনের বিষয়। এক্ষেত্রে নিরাপদ খাদ্য পণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে আপনাদের পণ্যে কতটুকু নিশ্চয়তা প্রদান করে থাকেন?
জাহিদুল ইসলাম : আমরা এ ব্যাপারে অত্যন্ত সজাগ। মানুষের স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয় এমন কোনো কিছুই আমরা করবোনা। সে কারণে আমরা বিশ্বস্ত এবং নির্ভরযোগ্য চাষিদের কাছ থেকে মাছগুলো সংগ্রহ করে থাকি। আমাদের নিজস্ব একটি রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট উইং আছে যেটি অত্যন্ত দক্ষ, প্রশিক্ষিত এবং উচ্চশিক্ষিত ফুড ইঞ্জিনিয়ার, টেকনোলজিস্ট দ্বারা পরিচালিত। তাঁদের দ্বারা মাছগুলোকে পরীক্ষা–নিরীক্ষা করা হয়, সেগুলোতে কোনো ক্ষতিকর ক্যামিকেল বা পদার্থ আছে কী না। এরপর এগুলোকে আমরা সঠিক নিয়মে পরিষ্কার করি এবং এরপর স্যানিটাইজ করা হয়। যে জায়াগাতে এ কাজগুলো করা হয় সেখানে শতভাগ জৈব নিরাত্তা নিশ্চিত করা হয়। শুধু তাই নয়, আমাদের প্রতিটি প্রোডাক্টই সায়েন্স ল্যাবরেটরী পরীক্ষিত এবং অনুমোদিত। সুতরাং আমি এ কথা নিশ্চয়তা দিয়ে বলতে পারি, নিরাপদ, স্বাস্থ্যকর পণ্য উৎপাদনই আমাদের প্রধান লক্ষ্য।
মাছে সবচেয়ে বেশি উপকারী যে দুটি উপাদান আছে তা হলো ওমেগা–৩ এবং ওমেগা–৬। আমাদের এসব পণ্যে অত্যন্ত উচ্চমানের উক্ত দুটি উপাদান বিদ্যমান এবং এটি সায়েন্স ল্যাব পরীক্ষিত। এখন আপনি প্রোটিন ঘাটতির যে প্রশ্নটি করেছেন সেটি পূরণে এসব পণ্য গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। এসব পণ্যের কারণে মাছের বৈচিত্র্যপূর্ণ খাবারের প্রতি মানুষের আগ্রহ তৈরি হবে। বিশেষ করে আমাদের বাড়িতে অনেক ছোট বাচ্চারা মাছ খেতে চায় না তাদের জন্য। বাচ্চাদেরকে এসব পণ্য দেয়া হলে তারা ঠিকই আগ্রহ নিয়ে খাবে। এর ফলে পরোক্ষভাবে তারা মাছের প্রতি আগ্রহী হবে। কারণ আমরা সচরাচর মাছকে যেভাবে রান্না করি হয়তো তাদের সেটি পছন্দ না।
এগ্রিনিউজ২৪.কম : মাছ প্রোটিন চাহিদা পূরণের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস। দেশে প্রোটিন ঘাটতি পূরণে এসব পণ্য কীভাবে অবদান রাখতে পারে বলে মনে করেন?
জাহিদুল ইসলাম : মাছে সবচেয়ে বেশি উপকারী যে দুটি উপাদান আছে তা হলো ওমেগা–৩ এবং ওমেগা–৬। আমাদের এসব পণ্যে অত্যন্ত উ””মানের উক্ত দুটি উপাদান বিদ্যমান এবং এটি সায়েন্স ল্যাব পরীক্ষিত। এখন আপনি প্রোটিন ঘাটতির যে প্রশ্নটি করেছেন সেটি পূরণে এসব পণ্য গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। এসব পণ্যের কারণে মাছের বৈচিত্র্যপূর্ণ খাবারের প্রতি মানুষের আগ্রহ তৈরি হবে। বিশেষ করে আমাদের বাড়িতে অনেক ছোট বাচ্চারা মাছ খেতে চায় না তাদের জন্য। বাচ্চাদেরকে এসব পণ্য দেয়া হলে তারা ঠিকই আগ্রহ নিয়ে খাবে। এর ফলে পরোক্ষভাবে তারা মাছের প্রতি আগ্রহী হবে। কারণ আমরা সচরাচর মাছকে যেভাবে রান্না করি হয়তো তাদের সেটি পছন্দ না।
তাছাড়া আমাদের চিকেন ফ্রোজেন ফুড ইতোমধ্যে দেশে বেশ জনপ্রিয় হয়েছে এবং প্রোটিন ঘাটতি পূরণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। আমি বিশ্বাস করি মাছের ক্ষেত্রেও সেটি করা সম্ভব। কারণ, মাছ বা মাংস যাই বলুন না কেন, আইটেম বা বাহারি পদ এবং রান্না একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যারা মাছ খায়না, তাদেরকে এসব পণ্য দিয়ে দেখুন তারা ঠিকই খাবেন। শুধু তাই নয়, পরবর্তীতে তারা আগ্রহী হবেন। এর ফলে আমাদের মাছের কনজাম্পশন বেড়ে যাবে। সুতরাং মাছ খাওয়া বেড়ে গেলে স্বাভাবিকভাবেই সেটি প্রোটিন ঘাটতি পূরণে গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক হবে।
এগ্রিনিউজ২৪.কম : এ ধরনের শিল্প মাছের ন্যায্য মূল্য প্রাপ্তিতে চাষিদের কীভাবে সহায়তা করতে পারে বলে আপনি মনে করেন?
জাহিদুল ইসলাম : যেকোনো ব্যবসার ক্ষেত্রে চাহিদা এবং যোগান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তবে মাছ এবং মুরগির ক্ষেত্রে বিষয়টি একটু ব্যতিক্রম কারণ এগুলো দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায় না। সেজন্য মাছ বলেন আর ডিম কিংবা মুরগি; এগুলোর নিত্য নতুন বৈচিত্র্যপূর্ণ পণ্য তৈরি করতে হবে। এজন্য আমাদেরকে মানুষকে আরো বেশি বুঝাতে হবে, সচেতন করে তুলতে হবে এবং এসব পণ্যের দাম সাধারণের হাতের নাগালে নিয়ে আসার চেষ্টা করতে হবে। এর ফলে একদিকে যেমন মানুষের পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে অপরদিকে চাষিদের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তিতেও নিশ্চয়তা তৈরি হবে। চাষিরা যখন দেখবে তাদের উৎপাদিত মাছ শুধু সরাসরি ভোক্তাদের কাছেই যাচ্ছেনা, ফ্যাক্টরি পর্যায় পর্যন্ত পোঁছাচ্ছে তখন অটোমেটিক্যালী তাদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য প্রাপ্তিতে একটা পথ তৈরি হবে। তাই, আমাদের অবশ্যই হিমায়িত খাদ্য শিল্প আরো বেশি বিস্তৃত হওয়া দরকার।
আমাদেরকে মানুষকে আরো বেশি বুঝাতে হবে, সচেতন করে তুলতে হবে এবং এসব পণ্যের দাম সাধারণের হাতের নাগালে নিয়ে আসার চেষ্টা করতে হবে। এর ফলে একদিকে যেমন মানুষের পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে অপরদিকে চাষিদের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তিতেও নিশ্চয়তা তৈরি হবে। চাষিরা যখন দেখবে তাদের উৎপাদিত মাছ শুধু সরাসরি ভোক্তাদের কাছেই যাচ্ছেনা, ফ্যাক্টরি পর্যায় পর্যন্ত পোঁছাচ্ছে তখন অটোমেটিক্যালী তাদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য প্রাপ্তিতে একটা পথ তৈরি হবে।
এগ্রিনিউজ২৪.কম : বর্তমানে আপনাদের উৎপাদন ক্যাপাসিটি, কী কী পণ্য এবং কোথায় কোথায় এসব পণ্য পাওয়া যাবে?
জাহিদুল ইসলাম : আমাদের ফ্যাক্টরিতে উৎপাদন ক্ষমতা আপাতত সপ্তাহে দ্ইু টনের মতো। তবে এটিকে দ্বিগুণ করার সুযোগ রয়েছে। ইতোমধ্যে ঢাকা শহরের মীনা বাজার, আগোরা, নন্দনসহ ৩৬টি আউটলেটে আমাদের পণ্য রয়েছে এবং দিনকে দিন চাহিদা রয়েছে। আমরা আশা করছি, ভবিষ্যতে সাভারের নিজস্ব জমিতে নতুন ফ্যাক্টরি করতে পারবো। এক্ষেত্রে একটি বিষয় বলে রাখা দরকার, ফ্রোজেন পণ্য তৈরিতে যেসব উপাদান ব্যবহার করা হয় দেশে সেগুলোর বড় সরবরাহকারী এক্সোন লিমিটেড। সেক্ষেত্রে পণ্যের গুণগত মান অক্ষুণ্ন রাখা এবং বৈচিত্র্যতা নিয়ে আসা আমাদের জন্য সহায়ক।
আমরা আপাতত ৬টি প্রোডাক্ট দিয়ে যাত্রা শুরু করেছি। এর মধ্যে ফিস বল, স্রিম্প বল, ফিস নাগেঁস, ক্যাজুয়ান, স্রিম্প বাইটস, ক্রিসপি ফিস বল এবং প্রত্যেকটি প্রোডাক্টের আবার স্পাইসি ভার্সন রয়েছে।
এগ্রিনিউজ২৪.কম : আপনি দেশের বাইরে পড়াশোনা করেছেন, বেড়েও উঠেছেন। আপনার পারিবারিক ব্যাকগ্রাউন্ডও অনেক অভিজাত। ইউরোপ–আমেরিকার জাঁকজমক ছেড়ে দেশে কেন?
জাহিদুল ইসলাম : আমি বাইরে পড়াশোনা করেছি, বড় হয়েছি এ কথা ঠিক তবে এদেশটাতে আমার জন্ম। এটি আমার জন্মভূমি। নিজের জন্মভূমিতে কোনো কিছু করার জন্য যে মানসিক প্রশান্তি আপনি অন্য কোথাও সেটি পাবেননা।
এদেশে খুব বেশি সুযোগ সুবিধা যে আছে সেটি বলা যাবেনা। তবে যেটুকু সুযোগ সুবিধাই আছে সেটিকে যদি কাজে লাগানো যায় তবে আমাদের এগুতে সময় লাগবেনা। আমি দেশে এসে প্রথমেই যে বিষয়টি উপলব্ধি করেছি সেটি হলো এদেশে বহু সুযোগ সুবিধা না থাকলেও সেগুলো তৈরির বহু পথ আছে। আমি সে বিশ্বাস রেখেই আমার কাজ করে যাচ্ছি।
এগ্রিনিউজ২৪.কম : মূল্যবান সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
জাহিদুল ইসলাম : আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।