বৃহস্পতিবার , ডিসেম্বর ২৬ ২০২৪

ভারতীয় গরু ও মাংস আমদানি বন্ধসহ ৯ দফা দাবীতে সোচ্চার খামারিরা

goru01এগ্রিনিউজ২৪.কম রিপোর্ট : ভারত  থেকে গরু ও মাংস আমদানীর উদ্যোগ বন্ধ , গুড়া দুধের আমদানী কমিয়ে দেশেই গুড়ো দুধ তৈরীর প্লান্ট করা এবং ভেজাল “কনডেন্সড মিল্ক” পুরোপুরিভাবে বন্ধ, দুধের ন্যায্য মূল্য ও বাজারজাতকরন নিশ্চিত করা, দুগ্ধ ও মাংস শিল্পকে কৃষি বিদ্যুতের আওতায় আনা, দেশীয় পশুতে হবে কোরবানী, গো-খাদ্যের মূল্য কমানো, দুধ এবং মাংস শিল্প উভয় রক্ষা হবে এমন “ডুয়েল পারপাস” জাত উন্নয়ন, দুগ্ধ শিল্পে খামারীদের ভর্তুকি প্রদান এবং সুদমুক্ত দীর্ঘমেয়াদী ঋন প্রদান এবং পশু সম্পদের চিকিৎসা সেবা অত্যন্ত অপ্রতুলতা নিরসন সহ “ ৯ দফা দাবী সম্বলিত শনিবার (২৯ জুলাই) জাতীয় প্রেসক্লাবে  “দুগ্ধ ও গো-মাংস শিল্পকে রক্ষার জন্য এখন করনীয় কি হতে পারে” শীর্ষক প্রেস কনফারেন্স এবং অবস্থান কর্মসূচি পালন করে করে বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস এসোসিয়েশন। কর্মসূচিতে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সভাপতি মো. ইমরান হোসেন, সাধারণ সম্পাদক শাহ এমরান, সহ সভাপতি মলিক মোহাম্মদ ওমর, মো. আলী আযম শিবলী এবং আবু আহমেদ আবদুল্লাহ রাজু ছাড়াও  দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে ডেইরি খামারি এবং উদ্যোক্তারা এতে অংশগ্রহণ করেন।

goru02কর্মসূচিতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শাহ এমরান। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, খাদ্য নিরাপত্তার কথা চিন্তা করলে চাউলের পরে একমাত্র প্রানীসম্পদই হতে পারে আরেকটি পথ যা দেশের বেকার সমস্যা, দেশের অর্থনৈতিক অবকাঠামো দৃড়তার সহিত প্রতিষ্ঠিত করতে পারে। বর্তমানে ২০১৫-১৬ ক্রমবর্ধমান জিডিপিতে পশুসম্পদের অবদান আছে ৩.২১%, দেশের মোট কর্মসংস্থানের প্রত্যক্ষভাবে ২১% এবং দেশের মোট আমিষের ৮% আসে এই মাংস এবং দুধ থেকে।

তিনি জানান, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিগত ৫ বছরে দেশের  “একটি বাড়ি, একটি খামার” প্রকল্পের আওতায় বেকার জনগোষ্ঠী, প্রবাসী সহ লাখ কোটি মানুষ ডেইরি সেক্টরে বিনিয়োগ করেছে। সরকারী হিসেব মতে, দুগ্ধ খামারের সংখ্যা ২০১০-১১ তে ছিল ৭৯,৯৪২ এবং ২০১৫-১৬ তে এই সংখ্যা বেড়ে গিয়ে দাড়িয়েছে ১২,০১,৪৩২ টি। মোটাতাজা খামারের সংখ্যা ২০১০-১১ তে ছিল ৩৩,২৩১ টি এবং ২০১৫-১৬ তে এই সংখ্যা বেড়ে গিয়ে দাড়িয়েছে ১৯,২৪,৩৩৭ টি।

কর্মসূচিতে বক্তারা জানান, দুগ্ধ এবং মাংস শিল্প লাখো কোটি মানুষের সংযুক্তি এটাই প্রমান করে দেশ অনেক এগিয়েছে। খামার ব্যবসায়ীরা আশার আলো দেখছেন, আগামী ৫ বছরের মধ্যে এ সেক্টরে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের। এমতাবস্থায় সরকারী পর্যায়ের নিম্নলিখিত সহযোগিতা ছাড়া কোনভাবেই সামনের দিকে আগানো সম্ভব নয়।

goru000লিখিত বক্তব্যে জানানো হয়, গত ০৯ জুলাই রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে এফবিসিসিআই, আইবিসিসিআই এবং ইন্ডিয়ান চেম্বার অব কমার্সের (আইসিসি) যৌথ উদ্যোগে কৃষি ও কৃষি প্রক্রিয়াজাকরণ খাদ্য শিল্পের উপর দুই দিন ব্যাপী ব্যবসায়িক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই সম্মেলনে বাংলাদেশের যেসব ব্যবসায়ী ভারত থেকে পণ্য আমদানি করে থাকেন তারা এসব পণ্যের বিষয়ে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। শীঘ্রই দু’দেশের এই ব্যবসায়িক কার্যক্রম এগিয়ে নিতে আইবিসিসিআই এবং আইসিসি’র মধ্যে যৌথ এগ্রিমেন্ট বা চুক্তি করা হবে মর্মে সম্মেলনে সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। এ অবস্থায় প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত থেকে হিমায়িত গরুর মাংস আমদানির উদ্যোগ কতটুকু ক্ষুদ্র খামারীর ব্যবসা-বান্ধব হবে, তা আমাদের বোধগম্য নহে।

আরো জানানো হয়,  ভারতের গো-মাংস রফতানির সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন ব্যবসায়ী এখন বাংলাদেশ সফর করছেন। দেশে এখন প্রতিকেজি গরুর মাংস ৫০০ থেকে ৫২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। উচ্চমূল্যের এই বাজারে, ভারতের হিমায়িত গরুর মাংস সহজে বাজারজাত করলে গরুর ব্যবসায়ী, কসাই ও, ক্ষুদ্র খামারীগণ তাদের মুলধন হারিয়ে পথে বসবে । এই দিদ্ধ্যান্ত যেন গৃহীত না হয় সে জন্য সরকারের কাছে দাকী জানাচ্ছি। স্বনির্ভরতার এই পূর্ব মুহূর্তে যদি ভারত থেকে মাংস আমদানী করা হয় তা হবে আমাদের দেশের মাংস সেক্টরের জন্য আত্বঘাতী।

বক্তারা জানান, ২০১০-১১ সালে বাংলাদেশে দুগ্ধ খামারের সংখ্যা ছিল রেজিষ্টার্ড ৭৯,৯৪২, ২০১৫-১৬ তে এই সংখ্যা বেড়ে দাড়িয়েছে ১২,০১,৪৩২ টি। ২০১০-১১ অর্থ বছরে দেশে দুধের চাহিদা ছিল ১৩.০১ মিলিয়ন মেট্রিকটন এবং উৎপাদন হয়েছে ২.৯৫ মিলিয়ন মেট্রিকটন। ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে দেশে দুধের চাহিদা ছিল ১৪.৬৯ মিলিয়ন মেট্রিকটন এবং উৎপাদন হয়েছে ৭.২৭ মিলিয়ন মেট্রিকটন। (তথ্য সূত্রঃ প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর-২০১৭)।

২০১০-১১ তে আমরা দেশের মোট চাহিদার ২২.৬৭% দেশে উৎপাদন হয়েছে এবং ২০১৫-১৬ তে সেটি ৪৯.৪৮% এ দাড়িয়েছে। এমতাবস্থায় দিন দিন গুড়া দুধের আমদানী বৃদ্ধি আমাদের দেশের দুগ্ধ খামার শিল্পের প্রধান অন্তরায়। দেশেই গুড়া দুধের প্ল্যান্ট বসিয়ে এবং মিল্কভিটা সহ যেসব প্ল্যান্ট আছে তা আরো কার্যকরি করে সঠিক বাজারজাত করনের ব্যবস্থা নিতে এ সময় সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।

এছাড়াও দেশে কনডেন্সড মিল্কের উৎপাদন বন্ধ ও লাইসেন্স বাতিলের উদ্যোগের ব্যাপারে হাইকোর্টের যে রীট বহাল আছে  সেটি বাস্তবায়ন করার আহ্বান জানানো হয় এ সময়।

This post has already been read 6177 times!

Check Also

বিএলআরআইতে ‘বার্ষিক গবেষণা পর্যালোচনা কর্মশালা-২০২৪’ অনুষ্ঠানের সমাপনী অনুষ্ঠিত

নিজস্ব সংবাদদাতা: বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএলআরআই) কর্তৃক ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে সমাপ্ত গবেষণাসমূহের ফলাফল ও অগ্রগতি …