রবিবার , ডিসেম্বর ২২ ২০২৪

ই-ফিশারি : মাছের খাদ্য খরচ কমাবে ২১ ভাগ

efishery-di-indonesiaproud-wordpress-comমো. খোরশেদ আলম জুয়েল : জাতি সংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার সর্বশেষ (এফএও) প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মাছ উৎপাদনে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ। এক্ষেত্রে বর্তমানে চীন বিশ্বসেরা, দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে আছে যথাক্রমে ভারত ও মিয়ানমার এবং তারপরই বাংলাদেশ। এফএও পূর্বাভাস দিয়েছে, ২০২২ সন নাগাদ বিশ্বের যে চারটি দেশ মাছ চাষে বিপুল সাফল্য অর্জন করবে তার মধ্যে প্রথম দেশটি হচ্ছে বাংলাদেশ। পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসেবে বলা হয়েছে, ২০১৩-১৪ সনে বাংলাদেশে ৩৪ লাখ ৫৫ হাজার টন মাছ উৎপাদন হয়েছে। এর মধ্যে চাষের মাছের পরিমাণ ছিল প্রায় ২০ লাখ টন। বর্তমানে দেশে মাছ উৎপাদন হচ্ছে বছরে প্রায় ৩৬ লাখ মেট্রিক টন আর চাহিদা জনপ্রতি দৈনিক ৬০ গ্রাম হিসেবে বছরে ৪২ লাখ মেট্রিক টন। এর মধ্যে মাছ রপ্তানির পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ১৩৫ গুণ।

স্বল্প আয়তন, সীমিত সম্পদের মধ্যেও বাংলাদেশের এমন অবস্থানে পৌঁছানের কারণ কী হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে- স্থানীয় বাজারে চাহিদা, মাছ চাষ সম্পর্কে মানুষের আগ্রহ, কারিগরী জ্ঞানের সম্প্রসারণ এবং প্রযুক্তির উন্নয়নের মাধ্যমেই এটি সম্ভব হয়েছে। সরকার এবং বেসরকারি উদ্যোক্তারা চেষ্টা করছেন মাছের উৎপাদন আরো বাড়ানোর এবং এফএও’র পূর্বাভাসকে বাস্তবে রূপ দিতে। প্রতিযোগী বিশ্বে টিকে থাকার জন্য মাছের উৎপাদন খরচ কমানোর বিকল্প নেই এক্ষেত্রে। মাছ উৎপাদনের মোট খরচের সিংহভাগ (৭৫-৮০ ভাগ) খরচ হয় খাদ্য বাবদ। এই খাদ্য খরচ কমাতে গেলে লাগসই প্রযুক্তির ব্যবহারের ব্যাপারে আরো বেশি মনোযোগী হতে হবে। এবার আসুন তাহলে এক নতুন প্রযুক্তির কথা জানি–

একবার ভাবুনতো- আপনি বসে আছেন শত মাইল দূরে। মাছ চাষ করেন প্রত্যন্ত অঞ্চলের কোন পুকুরে। তাই বলে মাছকেতো আর না খাইয়ে রাখা যাবেনা। যেহেতু বাণিজ্যিকভাবে চাষ করছেন সুতরাং মুনাফা করতে চাইলে তার যত্মআত্মি নিতেই হবে। কিন্তু আপনিতো দূরে বসে আছেন। মাছের খাবার দিবেন কীভাবে? ভাবছেন, কর্মচারী রেখো দেবো, সমস্যা কী। নাহ্, সেটির আর দরকার নেই। রূপকথার গল্পের মতো, খাবার চলে যাবে মাছের কাছে। বেশিও নয় কমও নয়, নির্দিষ্ট পরিমাণ খাবার ঠিক যতটুকু মাছের জন্য দরকার ততটুকুই।

টেনশনে আছেন, আপনার পুকুরের মাছ ঠিকমতো খাবার খেলো কিনা। চিন্তা নেই, গোয়েন্দাদের মতো সে খবরও পৌঁছে যাবে আপনার কাছে। শুধু তাই নয়, পুকুরের খাবারের আয়-ব্যায় সম্পর্কিত সমস্ত খবর জানতে পারবেন দূরে বসেই। এমনকি পুকুরের অবস্থা কেমন আছে বিশেষ করে পানির অবস্থা, তাপমাত্রা, পিএইচ মাত্রা, মাত্রাতিরিক্ত গ্যাস হলে সেগুলো বিশ্লেষণ করে এর কারণ নিরূপন করা যাবে এবং সে অনুযায়ী বাবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হবে। এসবই জানা এবং ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে আপনার মুঠোফোনের ইনস্টল করা একটি অ্যাপস এর মাধ্যমে এবং যে যন্ত্রটির মাধ্যমে উক্ত অ্যাপসটি এসব কাজ করবে সেটি থাকবে পুকুরে স্থাপন করা। আপনার পুকুরের মাছ কোন কারণে খাবার কম খেলে পুকুরে স্থাপন করা মেশিনটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যাবে। ভাবুনতো এমন একটি ব্যাপার হলে কেমন হবে? নাহ কোন কাল্পনিক কাহিনী নয়, এটি এখন বাস্তবতা। আর এই বাস্তবতার কাজটি করেছে ইন্দোনেশিয়া’র ই-ফিশারি নামে একটি যন্ত্র। যন্ত্রটি মূলত মাছের অটোফিডার।

ই-ফিশারি ওয়েবসাইট পর্যালোচনা করে দেখা যায়, মেশিনটি ব্যবহারে এফসিআর বা খাদ্য রূপান্তর হার কমপক্ষে ২১ ভাগ পর্যন্ত সাশ্রয় হবে। আমাদের দেশের মাছের খাদ্য উৎপাদন ও বিপণনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর দাবী অনুযায়ী সাধারণভাবে তাদের তৈরিকৃত খাদ্যের এফসিআর রেট ১.৫। মাঠ পর্যবেক্ষকদেও দাবী প্রকৃত এফসিআর ১.৭। এক্ষেত্রে ই-ফিশারি অটোফিডার ব্যবহার করলে এফসিআর রেট কমে দাড়াবে ১.৩-১.৪ বলে দাবী করা হয়েছে বাংলাদেশে যন্ত্রটির আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান এসিআই লিমিটেড।

এছাড়াও যন্ত্রটি ব্যবহারের ফলে প্রতিকেজি মাছ উৎপাদনে ২০০-৩০০ গ্রাম খাদ্য কম লাগবে বলে জানান, আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান এসিআই লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. এফএইচ আনসারি।

তিনি জানান, যন্ত্রটি ব্যবহারের ফলে শুধুমাত্র মাছের খাদ্য খরচ কম হবে তা-ই নয় পুকুরের ভৌত অবস্থাও জানা যাবে। যার ফলে মাছের রোগবালাইও কম হবে। সুতরাং এক্ষেত্রে চিকিৎসা খরচ কমে যাবে প্রায় ৩০ ভাগ। অন্যদিকে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে মাছের খাবার সরবরাহ করার জন্য শ্রমিক খরচ সাশ্রয় হবে প্রায় ৩০-৪০ ভাগ।

ড. আনসারি আরো বলেন, এতে করে মাছের স্যাম্পল সংগ্রহ এবং অন্যান্য যাবতীয় হিসেব রাখাও সহজ হবে। আপনি ঢাকা কিংবা অন্য কোন শহরে বসে আছেন অথচ আপনার পুকুরের অবস্থান প্রত্যন্ত কোন এক গ্রামে। সমস্যা নেই, সেখানে বসেই পুকুরের সব খবরাখবর নিতে পারবেন। খাবার সময়মতো দেয়া হলো কী না; মাছ খাবার খেলো কী খেলো কী না, সামগ্রিক বিষয়ই খোঁজ রাখতে পারবেন শত শত মাইল দূরে বসেই।

যন্ত্রটির দাম পড়বে ১ লাখ ১০ থেকে ২০ হাজার টাকার মধ্যে। এই দাম খামারিদের জন্য ব্যায়বহুল হবে কীনা জানতে চাইলে ড. আনসারি জানান, আমরা মোট মূল্যের ২০% অগ্রীম জমা দিয়ে ডাউন পেমেন্ট সিস্টেমে খামারিদের কাছে অটোফিডারটি সরবরাহ করবো। বাকী টাকা ৪ মাস পর মাসিক কিস্তিতে পরিশোধ করতে হবে। এছাড়াও রয়েছে স্থাপনা খরচ ফ্রি এবং ৫ বছর পর্যন্ত যেকোনো সমস্যায় ফ্রি সার্ভিস দেয়া হবে। সুতরাং এটি ব্যায়বহুলতো হবেইনা বরং দুই বছরের মধ্যে এই খরচ উঠে আসবে। এছাড়াও এসিআই অভিজ্ঞ মৎস্য বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি সার্ভিস টিম গঠন করেছে, যারা ই-ফিশারি অটোফিডার ব্যবহারকারিদের এপ্লিকেশন এনালাইসিসের মাধ্যমে মাছ ও পুকুরের যেকোনো সমস্যার জন্য ফ্রি পরামর্শ দিবেন।

This post has already been read 15077 times!

Check Also

হাওরে ইজারা অবিলম্বে বন্ধ করা উচিত -মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা

নিজস্ব প্রতিবেদক: মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা মিজ্ ফরিদা আখতার বলেছেন, ‘আমি মনে করি, হাওরে ইজারা …