কাজী কামাল হোসেন, নওগাঁ
গত কয়েক দিনের একটানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে নওগাঁর মান্দায় আত্রাই নদীর বাঁধ ভেঙ্গে ১১টি ইউনিয়নের ৪২টি গ্রামের ১৮ হাজার ৬২০টি পরিবারের ৭০ হাজার ৪৮০ জন মানুষ এখন পানি বন্দি। এখানে সরকারিভাবে নগদ ২৫ হাজার টাকা ১ মে.টন চাল প্রদান করা হয়েছে। আত্রাই নদীর শহরবাড়ী ভাংগীপাড়া, কয়লাবাড়ি, চকরামপুর, চকবালু, শামুকখোল হাতিয়ানদহ, প্রসাদপুর খেয়াঘাট, কামারকুড়ি, কালিকাপুর বাজার, কয়াপাড়া বেড়িবাঁধ, পারলক্ষ্মীরামপুর, মদনচক, নান্নুরঘাট ও আয়াপুর পাগলীতলা এবং রানী নদীর নরুল্য¬াবাদ মন্ডলপাড়া, চকহরি নারায়ন, নিখিরাপাড়া, গোয়ালমান্দা ও করাতিপাড়া। এছাড়া শিবনদের বাদলঘাটা, কোঁচড়া, দুর্গাপুর, শগুনিয়া, ডেবরা, বলাক্ষেত্র, শিমলাদহ, বাঁকাপুর, শংকরপুর, রুয়াই, ভাতহন্ডা এলাকার বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এসব ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্টগুলো টিকিয়ে রাখতে স্বেচ্ছাশ্রমে রাতদিন কাজ করে যাচ্ছে গ্রামপুলিশসহ স্থানীয়রা। এদিকে রানী নদীর বামতীর নুরুল্লাবাদ মন্ডলপাড়া নামকস্থানে বেড়িবাঁধ উপচে পানি পার হচ্ছে। স্থানীয়রা বাঁধটি টিকিয়ে রাখতে কাজ করে যাচ্ছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে বাঁধটি টিকিয়ে রাখা অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে এবং নুরুল্লাবাদ, কশব ও বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হবে।
মঙ্গলবার দুপুরে এলাকার সংসদ সদস্য বস্ত্র ও পাট মান্ত্রী মুহাম্মদ ইমাজ উদ্দিন প্রমানিক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেন এবং ক্ষতিগ্রস্তদের দ্রুত ক্ষতি পূরনের ব্যবস্থা করার আস্বাস প্রদান করেন। এ সময় উপজেলা নির্বাহী অফিসার নুরুজ্জামান, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম প্রামানিক, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা রেজাউল করিম, মান্দা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আনিছুর রহমান উস্থিত ছিলেন। বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী জরুরি ভিত্তিতে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ও ফসলের ক্ষয়ক্ষতির তালিকা তৈরি করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ প্রদান করেন।
এদিকে গত দু’দিন ধরে নওগাঁ শহরের ছোট যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে শহরেও পানি ঢুককে পড়েছে। এতে করে নওগাঁ পৌরসভা সহ ৮টি ইউনিয়নের ১৫০ গ্রামে ২৭৪০পরিবার ও ১৮হাজার মানুষ এখন পানি বন্দি হয়েছে। শহরের বাঙ্গাবাড়িয়া, কেডির মোড়, সুপারিপট্টি, কালিতলাসহ শহরের বেশ কিছু এলাকা বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে।
রানীনগর উপজেলায় গোনা, কাশিমপুর, মিরাট ও রাণীনগর সদর ইউনিয়ন সহ ৫টি ইউনিয়নে ৪৫টি গ্রামে ৩ হাজার ২০০ শ’ পরিবার ও ১২ হাজার ৮৭০ জন মানুষ এখন পানি বন্দি রয়েছে।
আত্রাই উপজেলায় ৬টি ইউনিয়নে ২৫টি গ্রামে ২ হাজার ৫৮০পরিবার ও ১৩ হাজার মানুষ এবং সাপাহার উপজেলায় ১টি ইউনিয়নে ২০টি গ্রামে ১১শ পরিবার ও ৩হাজার ৪শ মানুষ এখন পানি বন্দি অবস্থায় আছে।
পত্নীতলা উপজেলায় ৩টি ইউনিয়নে ২০টি গ্রামে ১৩৫০ পরিবার ও ৭ হাজার ৫০০শ’ মানুষ এখন পানি বন্দি। কৃষ্ণপুর ইউপির গোপীনগর, পানবোরাম, মিরাপুর, শালডাঙ্গা, মহিমাপুর, পাগলীডাঙ্গা, বিষ্টপুর, শালবাড়ি, চকমুলি, ডাঙ্গাপাড়া, আমাইপুকুর, সোনাডাঙ্গা, চকগোবিন্দ, চক আক্রাম, গয়ারপুর, কৃষ্ণবল্লভ, পতœীতলা ইউপির পত্নীতলা, ইছাপুর, কাঁটাবাড়ি, কল্যানপুর, কঞ্চিপুকুর, নজিপুর ইউপির কাঞ্চন, রাজপাট, পলিপাড়া, চাঁদপুর, পাটিচরা ইউপির ছালিগ্রাম, পাটিচরার নদী তীরবর্তী এলাকায় বন্যার পানি ফুকে এসব নিচু এলাকার প্রায় ৫ শতাধিক বাড়িঘর সহ প্রায় ৫শ’ হেক্টর ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে।
ধামইরহাট উপজেলায় ৪টি ইউনিয়নে ১৩টি গ্রামে ১৭৮৫পরিবার ও ১১হাজার ৫শ মানুষ এখন পানি বন্দি হয়েছে। বদলগাছী উপজেলায় ৫টি ইউনিয়নে ১০টি গ্রামে ১১২০পরিবার ও ৬হাজার ২শ মানুষ এখন পানি বন্দি হয়েছে। মহাদেবপুর উপজেলায় ৮টি ইউনিয়নে ৬৯টি গ্রামে ৭পরিবার ও ৪২হাজার মানুষ এখন পানি বন্দি হয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষে তেমন ত্রান সমগ্রী পৌছায়নি।