মো. খোরশেদ আলম জুয়েল : ‘আমি এখন কোথায় যাবো। বানের জলে সব ভেসে গেছে। মাথায় এনজিও ঋণের চড়া সুদের বোঝা। ইতোমধ্যে ৩০-৩৫ লাখ টাকার মুরগি মারা গেছে। বাকীগুলো রক্ষা করাও কস্টকর হয়ে গেছে। আল্লাহ ছাড়া এখন আর আমাদের কোন ভরসা নেই’ -কথাগুলো বলছিলেন টাঙ্গাইল জেলার গোবিন্দদাস কষ্টাপাড়া গ্রামের আবদুল মালেক। আবদুল মালেক একজন লেয়ার (ডিমপাড়া মুরগি) খামারি। প্রায় পনেরো হাজার লেয়ার মুরগির খামারের ৪-৫ হাজার ইতোমধ্যে মারা গেছে। বাকিগুলো রক্ষা করা এখন কঠিন হয়ে পড়েছে।
শুধু আবদুল মালেক নয়, একই উপজেলার নাজমুল হোসেন -এর প্রায় ৩ হাজার, হালিম মন্ডলের ৪ হাজার এবং শামীম পোলট্রির প্রায় ৭-৮ হাজার লেয়ার মুরগি বন্যার পানিতে এখন আক্রান্ত। উল্লেখ্য, এক একটি লেয়ার বা ডিমপাড়া মুরগি উৎপাদনে আসতে প্রায় খরচ হয় প্রায় ৭০০-৮০০ টাকা। সেই হিসেবে একটি গ্রামেই প্রায় কোটি টাকার ওপরে মুরগির খামার এখন হুমকির সম্মুখীন।
পোলট্রি খামারে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে একই জেলার গোবিন্দ দাস উপজেলার কস্টাপাড়া গ্রামের। এখানে প্রায় ১০০টি লেয়ার খামার বন্যায় আক্রান্ত। এছাড়াও কালিহাতি এলেঙ্গার প্রায় ৫০-৬০টি লেয়ার খামার, নাগরপুর উপজেলার প্রায় ১০০টি ব্রয়লার খামার এবং টাঙ্গাইল সদর উপজেলার ৫০-৬০টি ব্রয়লার খামার বন্যার পানিতে আক্রান্ত হয়েছে বলে জানান টাঙ্গাইল জেলার পোলট্রি খামার রক্ষা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আব্দুল আউয়াল যিনি নিজেও একজন লেয়ার খামারি।
তিনি জানান, সমগ্র টাঙ্গাইল জেলায় এ ক্ষতির পরিমাণ কয়েক কোটি টাকা। খামার ডুবে যাওয়াতে অনেকেই বাড়ির উঠোনে কিংবা উচু কোন জায়গায় পোলট্রি খাঁচা রাখতে বাধ্য হচ্ছেন। কিন্তু বেশিরভাগের সে সুযোগ নেই। তাছাড়া এগুলো সঠিক জৈব নিরাপত্তা বিধান না করতে পারলে সেগুলোও মারা যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আব্দুল আউয়াল আরো বলেন, গত রাত থেকে বন্যার পানিতে আমাদের পৌলি গ্রামের পাশের রেললাইন ভেঙ্গে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। স্থানীয় জনসাধারণ, প্রশাসন, পুলিশ, স্বেচ্ছাসেবীরা চেষ্টা করছেন রাস্তাটি মেরামতের। যদি এটি ভেঙ্গে যায় তাহলে এলেঙ্গা উপজেলার শুধুমাত্র পোলট্রি খামার হুমকির সম্মুখীন হবে কোটি টাকারও উপরে।