রবিবার , ডিসেম্বর ২২ ২০২৪

বন্যা পরবর্তীতে মাছ চাষি ভাইদের করণীয়

Nur-islam-p-1মোহাম্মদ তারেক সরকার : এ বছরের বন্যায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে জানমালের ব্যাপক ক্ষতির মধ্যে মৎস্য সেক্টরেও নজিরবিহীন ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। বানভাসী মানুষের ঘরবাড়ি ও সম্পদের ক্ষতির সাথে তাদের কৃষিজমি ও মাছের পুকুর বা ঘের ভেসে যাওয়ায় এ ক্ষতি হয়তো অনেকে সঠিকভাবে নিরূপন করতেও পারছেন না। কারো পুকুরে পাড় ভেঙ্গে গেছে, কারো পুকুর তলিয়ে গেছে, কারো মাছ বেরিয়ে গেছে। তবে যাদের বড় মাছ ছিল বা বিক্রয় উপযোগী মাছ ছিল তাদের ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি। এ সময় নতুন করে পোনা মাছ মজুত করে এ ক্ষতি কাটিয়ে উঠা খুব সহজ নয়। তারপরও নতুন করে জেগে উঠার জন্য বন্যা পরবর্তী প্রয়োজনীয় কিছু টিপস এখানে দেয়া হলো-

যাদের পুকুরের পাড় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে
যাদের পুকুরের পাড় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অথচ মাছ বেরিয়ে যায়নি তাদের ক্ষতি অনেক কম। হয়তো চারদিকে ব্লুনেট দিয়ে বা বাঁশের বানা দিয়ে অনেকে মাছ রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছেন বা চাষ করেছেন। পুকুরের পাড় মেরামত বা পাড়ে মাটি দিয়ে সংস্কার করা জরুরি। এ অবস্থায় মাটি পাওয়া যায় কিনা সেটিও এক প্রশ্ন। তারপরও পাড় মেরামতের ব্যবস্থা নিতে হবে।

যাদের পুকুর তলিয়ে গেছে
এত চেষ্টা করেও যাদের পুকুর রক্ষা করা যায়নি বা পুকুর তলিয়ে গেছে তাদের ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি। এতদিন মাছকে খাবার দিয়ে বড় করার পর তলিয়ে যাবার কারণে বেশিরভাগ পুকুরের মাছ ভেসে গেছে বা বেরিয়ে গেছে। এমতাবস্থায় যে সব পুকুরের পাড় জেগে উঠেছে সেগুলোকে পুন:পর্যবেক্ষণ করতে হবে। এসব পুকুর থেকে মাছ বেরিয়ে গেছে আবার রাক্ষুসে মাছও প্রবেশ করতে পারে। এখন ভালোভাবে ঘন ফাঁসের জাল টেনে দেখতে হবে। যদি রাক্ষুসে মাছ (শোল, বোয়াল, টাকি প্রভৃতি) থাকে তাহলে ধরে নিতে হবে। মজুদ করা মাছের পরিমাণ অনুমান করে পরবর্তীতে খাবার দিতে হবে। বিক্রয়ের কাছাকাছি পর্যায়ে থাকলে নতুন মাছ মজুদ না করে যা আছে সেগুলোকে কিছুদিন খাবার দিয়ে বিক্রি করে দেয়া উত্তম। যদি বেশির ভাগ মাছ বেরিয়ে গিয়ে থাকে তাহলে নতুন করে মাছের পোনা মজুদ করার ব্যবস্থা করতে হবে। এক্ষেত্রে ২০০-২৫০ গ্রাম ওজনের (কার্পজাতীয় মাছ) মজুত করা উত্তম, তেলাপিয়া বা অন্যান্য মাছের ক্ষেত্রে সরাসরি পোনা মজুদ না করে নার্সিং করা বড় পোনা দেয়াই উত্তম।

পুকুর পরিশোধন
পুকুরে পুরোনো মাছ থাকুক বা নতুন মাছ মজুদের ব্যবস্থা নেয়া হোক না কেন বন্যার পানি বেরিয়ে যাবার সাথে সাথে পুকুর পরিশোধনের ব্যবস্থা নিতে হবে। তানা হলে মাছের মড়কের সম্ভাবনা দেখা দেবে। এক্ষেত্রে প্রথমে পুকুরে প্রতি শতকে প্রতি ৩/৪ ফুট পানির জন্য ৩০০-৫০০ গ্রাম হারে চুন পানিতে গুলিয়ে প্রয়োগ করা আবশ্যক। চুন দেয়ার পরের দিন প্রতি একরে জীবাণুনাশক বা সেনিটাইজার প্রয়োগ করা আবশ্যক ’পলগার্ড প্লাস’/ ’পন্ড সেফ’ প্রতি একরে প্রতি ৩/৪ ফুট পানির জন্য ৫০০ মিলি হারে প্রয়োগ করা আবশ্যক। বন্যার পানি প্রবেশের কারণে ঘোলা পানি হলে পানির ঘোলাত্ব দূর করার ব্যবস্থা নিতে হবে। এক্ষেত্রে প্রতি শতাংশে (প্রতি ৩ ফুট পানির জন্য) ৫০০ গ্রাম হারে জিপসাম গুলে পানিতে প্রয়োগ করা আবশ্যক। জিপসাম প্রয়োগে পানির ঘোলাত্ব কমে গেলেও পানির পিএইচ পরীক্ষা করা দরকার। পিএইচ ৭ -এর নিচে নেমে গেলে চুন প্রয়োগ করতে হবে। চুন প্রয়োগের পর ’জিওলাইট গোল্ড’ প্রতি একরে ৫০ কেজি হারে প্রয়োগ করলে পিএইচ মান ধরে রাখা সহজ হবে।

মাছের পরিচর্যা
বন্যা বা অতিবৃষ্টির কারণে অনেকেই হয়তোবা সঠিকভাবে বা পর্যাপ্ত খাবার সরবরাহ করতে পারেননি। এখন মাছের পুকুরে পরিশোধন করার পর নিয়মিত ও পরিমিত খাবার প্রয়োগে মনোযোগী হতে হবে। মাছের কোন রকম রোগবালাই দেখা দিলে নিকটস্থ মৎস্য কর্মকর্তা বা মৎস্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেয়া শ্রেয়। পাবদা, গুলশা বা শিং মাছের পুকুরে ‘প্রোবায়োটিক্স’ প্রয়োগ করা যেতে পারে।

নতুন করে মাছের পোনা ছাড়তে চাইলে
একেবারে নতুন করে মাছের পোনা মজুদ করতে চাইলে যথাযথভাবে পুকুর প্রস্তুতি শেষ করে মানসম্মত পোনা সংগ্রহ করে মজুদ করতে হবে। তবে ছোট পোনা হলে অবশ্যই সরাসরি চাষ পুকুরে মজুদ না করে নার্সিং পুকুরে ১৫/২০ দিন নার্সিং করে তারপর নাসিং করা পোনা গণনা করে মজুদ পুকুরে দিতে হবে। একই সাথে সুষম খাবার সরবরাহের বিষয়টিও নিশ্চিত করতে হবে।

মাাছ চাষের বিপর্যয় কাটিয়ে চাষিদের ঘুরে দাড়ানের জন্য চাষিদের মনোবল দৃঢ় করে কাজে নেমে পড়তে হবে। নিয়মিত ও পরিমিত সুষম খাদ্য সরবরাহ এবং পানির গুণাগুণ রক্ষার বিষয়টি গুরুত্ব দিলে চাষিরা উপকৃত হবেন।

লেখক : সভাপতি, বাংলাদেশে অ্যাকুয়া প্রোডাক্টস কোম্পানিজ এসোসিয়েশন।

ই-মেইল: Tarique-fc@yahoo.com

This post has already been read 6138 times!

Check Also

হাওরে ইজারা অবিলম্বে বন্ধ করা উচিত -মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা

নিজস্ব প্রতিবেদক: মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা মিজ্ ফরিদা আখতার বলেছেন, ‘আমি মনে করি, হাওরে ইজারা …