বৃহস্পতিবার , নভেম্বর ২১ ২০২৪

মুরগীর এগ পেরিটোনাইটিস

HCD-Eggকৃষিবিদ রুহুল আমিন মন্ডল: মুরগীর প্রজননতন্ত্র দুইটি অংশে গঠিত।যথা:

১. ডিম্বাশয়

২. ডিম্বনালী

মুরগীর ডিম্বাশয়ে অসংখ্য ডিম্বানু থাকে যেটিকে ফলিকল বলা হয়। ডিমের কুসুম তৈরি হয় এই ডিম্বাশয় থেকেই। ডিমের কুসুম নির্দিষ্ট সময় পর ডিম্বনালীর মুখে পতিত হয়।ডিমের কুসুম ডিম্বনালীতে ২৪ ঘণ্টা অবস্থান করে এবং একটি পরিপূর্ণ্ ডিম তেরি হয়ে ক্লোয়াকার মাধ্যমে বের হয়ে আসে।

যদি কোন কারণে এই কুসুম ডিম্বনালীর ভেতর না পরে, পেট গহ্বরে পরে, তাহলে তাকে অভ্যন্তরীণ ডিম্বপ্রসব বলে।সাধারণত এই অবস্থায় কুসুম পেট গহ্বরে শোষিত হয়ে যায়। কিন্তু কখনো কখনো এই কুসুম পেট গহ্বরে শোষিত হয় না। যেহেতু ডিমের কুসুম ব্যাকটেরিয়া জম্নানোর জন্য খুবই ভালো একটি মাধ্যম সেহেতু খুব তাড়াতাড়ি সেখানে ব্যাকটেরিয়া জন্মায়, যা পরবর্তীতে ইনফেকশন হিসেবে দেখা দেয় এবং এটিকে বলা হয় এগ পেরিটোনাইটিস।

 এগ পেরিটোনাইটিস সাধারণত ডিমপাড়া মুরগীতে হয়। এক্ষেত্রে ব্রয়লার ব্রিডারে হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।

কারণসমূহ: এগ পেরিটোনাইটিসের বহুবিধ কারণ বিদ্যমান। নিম্নে সেগুলো উল্লেখ করা হল:

  • মুরগীতে কখনও একসাথে একাধিক ফলিকল (কুসুম) পরিপক্ক হলে, কুসুম ডিম্বনালীতে পরার সময় লক্ষভ্রষ্ট হয়, যা দ্বারা এগ পেরিটোনাইটিস হয়।
  • পুলেট অবস্থায় লাইটের তীব্রতা বেশী দেখা দিলে, মুরগী নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বেই ডিম দেওয়া শুরু করে, যা দ্বারা এগ পেরিটোনাইটিসের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
  • মুরগী কোন স্ট্রেসে পড়লে যেমন: কম জায়গায় বেশী মুরগী পালন, অত্যাধিক আলোক তীব্রতা, অত্যাধিক গরম ইত্যাদির কারণে এগ পেরিটোনাইটিস হতে পারে।
  • যদি কোন কারণে মুরগীতে ব্যাকটেরিয়ার লোড বেড়ে যায়, তাহলে এগ পেরিটোনাইটিসের হার বেড়ে যায়।
  • মুরগীর ওজন আদর্শ্ ওজনের চেয়ে অত্যাধিক বেড়ে গেলে হতে পরে।
  • মুরগী কোন ভয়ের কারনে বেশী লাফালাফি করলে, ভিতরে কুসুম ভেঙ্গে এগ পেরিটোনাইটিস হতে পারে।

লক্ষণ সমূহ:

  • খাদ্যগ্রহণে অনীহা হবে।
  • মুরগীর পালক উসকো খুসকো দেখাবে।
  • মুরগীর পায়খানা দেখতে ডিমের কুসুমের মতো হয়ে যায়।
  • মুরগীর পায়ুপথের অংশ ফুলে যায় এবং হাত দিলে স্পঞ্জের মত অনুভূত হয়।
  • অনেক সময় মুরগী খোঁড়া হয়ে যায়।
  • আক্রান্ত মুরগী হাটার সময় পেঙ্গুইনের মত দুই পা ফাঁক করে হাঁটে।
  • ডিম পাড়ার জন্য নেস্ট বক্সের ভেতর ঢোকে কিন্তু ডিম পাড়ে না।
  • শ্বাসপ্রশ্বাস নিতে কষ্ট হয়।

প্রতিরোধ ও প্রতিকার:

  • বয়স অনুপাতে যে পরিমান আলোর তীব্রতা দরকার ঠিক সেই পরিমাণ আলো দিতে হবে। বিশেষ করে পুলেট অবস্থায় আলোর তীব্রতার প্রতি বেশী খেয়াল রাখতে হবে। কারণ পুলেট অবস্থায় আলোর তীব্রতার প্রতি বেশি হলে মুরগী সময়ের পূর্বেই ডিম পাড়া শুরু করবে, যাতে এগ পেরিটোনাইটিসের পরিমাণ বেড়ে যাবে।
  • মুরগী যাতে কোন স্ট্রেসে না পড়ে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
  • মুরগীর পানিতে বা ফিডে যেন ব্যাকটেরিয়ার পরিমান বেড়ে না যায়, বিশেষ করে ই কোলাই সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।এজন্য পানিতে ভালো মানের এসিডিফায়ার পরিমাণমতো দিতে হবে।
  • মুরগীর ওজন আদর্শ্ ওজনের চেয়ে বাড়তে দেয়া যাবে না। বিশেষ করে ব্রয়লার ব্রিডারের ক্ষেত্রে, মুরগীর ওজন অবশ্যই নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখতে হবে।
  • পোস্টমরটেম এর পর বেশি পরিমানে এগ পেরিটোনাইটিস দেখা দিলে, এন্টিবায়োটিক কালচার সেনসিভিটি টেস্ট করে, এন্টিবায়োটিক দেয়া যেতে পারে।

লেখক : সিনিয়র ফার্ম ম্যানেজার, নারিশ পোল্ট্রি এন্ড হ্যাচারী লিমিটেড।

 

 

 

This post has already been read 8539 times!

Check Also

ডিমের মূল্যের ঊর্দ্ধগতিতে মধ্যস্বত্বভোগীরা বড় সমস্যা- মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা

পাবনা সংবাদদাতা: ডিমের মূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মধ্যস্বত্বভোগীরা বড় সমস্যা উল্লেখ করে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা …