ফকির শহিদুল ইসলাম (খুলনা) :
খুলনার ব্যবসায়ীরা কোরবানীর চামড়া নিয়ে মূলধন সংকটের দুঃশ্চিন্তায় আছেন। চোরাকারবারিদের অপতৎপরতা বৃদ্ধি, লবণের দাম বেড়ে যাওয়া, অর্থ এবং স্থান সংকট এবং চামড়ার মূল্য কমের কারণে এ দুঃশ্চিন্তা বাড়ছে। এসব কারণে গত ১০ বছরে অন্তত ৫৫ জন ব্যবসায়ী এ ব্যবসা থেকে অর্থ তুলে নিয়ে ব্যবসা পরিবর্তন করেছে। ফলে এ ব্যবসায় নতুন করে অর্থলগ্নি করতে ভয় পাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
ব্যবসায়ীদের সূত্র জানিয়েছে, নগরীর শেরেবাংলা রোডের পাওয়ার হাউজ মোড় এলাকায় এক দশক আগেও অন্ততঃ ৭০ জন ব্যবসায়ী চামড়া ব্যবসার সাথে জড়িত ছিল। তবে এরই মধ্যে ৫৫ জন ব্যবসায়ী তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গুটিয়ে নিয়ে চলে গেছেন। চামড়া শিল্পের জন্য স্থায়ী জায়গা না থাকা, মূলধন সংকট, ব্যাংকের পাশাপাশি মহাজনদের কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে এ ব্যবসা পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না বলে দাবি করেছেন ব্যবসায়ীরা।
আব্দুল ওহাব নামে এক ব্যবসায়ী জানান, অবকাঠামোগত সংকটের মধ্যেই কোনো রকমে ব্যবসা চালিয়ে যেতে হচ্ছে খুলনার কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীদের। যে কয়েকজন বর্তমানে এ পেশার সঙ্গে জড়িত, তাদের নিজস্ব দোকান নেই। দোকান ভাড়া পাওয়াও কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। আবার ভাড়া পাওয়া গেলেও সেগুলোর অবস্থা একেবারেই করুণ। দুর্গন্ধের কারণে কেউ ঘর ভাড়া দিতে চায় না।
তিনি বলেন, ৩-৪ লাখ টাকা অগ্রিম ও মাসিক ৪-৬ হাজার টাকা ভাড়ার প্রস্তাব দিয়েও ঘর পাচ্ছেন না তারা। সংকট নিরসনের জন্য চামড়া ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে প্রতি বছরই জায়গা বরাদ্দ চেয়ে খুলনা সিটি করপোরেশনের (কেসিসি) কাছে আবেদন করা হয়। তবে এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।
ব্যবসায়ীদের সূত্র জানিয়েছে, ট্যানারি মালিকরা গত তিন বছরেও তাদের বকেয়া টাকা পরিশোধ করেননি। চামড়া সংগ্রহের এ ভরা মৌসুমে তারা যদি বকেয়া পরিশোধ না করেন, তবে খুলনার চামড়া ব্যবসায়ীদের রীতিমতো পথে বসতে হবে। এ সুযোগকে কাজে লাগাবে মৌসুমী ব্যবসায়ীরা। তারা চামড়া কিনে চোরাপথে ভারতে পাচার করবে। খুলনা বিভাগের ৬ জেলার অন্তত অর্ধশত পয়েন্ট রয়েছে যেসব পয়েন্ট থেকে চামড়া পাচার হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সীমান্ত জেলাগুলোর মধ্যে সাতক্ষীরার ১৬টি, যশোরের ১৭টি, কুষ্টিয়ার ৭টি, ঝিনাইদহের ৪টি, মেহেরপুরের ৪টি রুট দিয়ে চামড়া পাচার হয়ে থাকে।
মূলধন ও অর্থ সংকট প্রসঙ্গে ব্যবসায়ী আব্দুস সালাম বলেন, ব্যাংক থেকে তাদের ঋণ দেয়া হয় চলতি হিসাবের বিপরীতে। এরপরও ব্যাংকে সম্পত্তির দলিল জমা দিতে হয়। এদিকে চামড়া বিক্রি বাবদ ট্যানারি মালিকদের কাছে অন্তত ২০ কোটি টাকা বকেয়া পড়ে আছে। ব্যবসা ভালো নয় বলে তারা টাকা দিচ্ছেন না।
খুলনা জেলা কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আমান উল্লাহ বলেন, চামড়া সংরক্ষণের কোনো জায়গা নেই। কাঁচা চামড়ায় দুর্গন্ধ ছড়ায় বলে বাড়িওয়ালারা আমাদের কাছে দোকান ভাড়া দেবে না। এরই মধ্যে বেশির ভাগ দোকান উচ্ছেদ করা হয়েছে। সিটি করপোরেশন ও জেলা প্রশাসকের কাছে একটি নির্দিষ্ট স্থানের দাবি নিয়ে বারবার আলোচনা করেও বিষয়টির কোনো সুরাহা হয়নি।