মো. আরিফুল ইসলাম, (বাকৃবি):
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) বিভিন্ন দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২ টায় শিক্ষার্থীরা ওই বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। পরে ভিসির বাসভবনের সামনে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য স্বতন্ত্র বাস নতুন বাস চালু, ক্যাম্পাসের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, অভ্যন্তরীন রাস্তা মেরামত, ইন্টারনেটের গতি বৃদ্ধি, কর্মচারিদের আলাদা বাস চালুকরণসহ ২১ দফা দাবিতে তারা ওই বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন।
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন ব্যবস্থা থাকলেও যথাযথ তদারকি ও অব্যবস্থাপনার কারণে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। পুরনো সময়সূচিতে বাস চলাচল, বাসে বহিরাগতদের যাতায়াত, শিক্ষার্থীদের বাসে স্কুল-কলেজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চলাচল, যথাযথ নিয়ম-কানুন না থাকায় প্রতিদিনই ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে তাদের। শিক্ষার্থীরা আরো জানান, কর্মচারিদের জন্য কোনো আলাদা বাস সার্ভিস নেই। আর তাই শিক্ষার্থীদের বাসেই যাতায়াত করেন তারা। ফলে বাসের বেশিরভাগ সিটই কর্মচারিদের দখলে চলে যায়। শিক্ষার্থীদের বাসের ভেতর বেশিরভাগ সময় দাঁড়িয়ে শহরে যেতে হয় আর কর্মচারীরা বাসের সিটে বসে থাকেন। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা বলছেন, প্রশাসনকে বারবার অভিযোগ করেও তারা কোনো সমস্যার সমাধান পাননি। এছাড়া বাসের সময়সসূচিতেও পরিবর্তনের দাবি করেছেন আন্দোলনকারীরা। বাসে বহিরাগতদের যাতায়াতে নজরদারি বাড়ানোর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণেরও আহ্বান জানান শিক্ষার্থীরা।
বাকৃবি পরিবহন শাখার পরিচালক অধ্যাপক ড. খান মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, বেশ কিছুদিন ধরেই অভিযোগগুলো শুনতে পাচ্ছি। এ সমস্যাগুলো অনেক পুরনো। আমি মাত্র ৬ মাস হলো এ শাখায় দায়িত্ব নিয়েছি। বেশকিছু সমস্যার সমাধানও করেছি। প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে বাকি সমস্যাগুলোর সমাধান করার ব্যবস্থা করব।
এদিকে, যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলায় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থান আবর্জনার ভাগাড়ে রূপ নিয়েছে। বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইয়াসিন মার্কেট, জব্বারের মোড়। নিয়মিত ময়লা অপসারণ না করায় দুর্গন্ধে একদিকে যেমন ঘটছে পরিবেশ দূষণ, অন্যদিকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় ও কেবি স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী এবং আবাসিক এলাকায় থাকা কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষকদের। এ ব্যাপারে প্রশাসনের কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই বলে দাবি আন্দোলনকারীদের।
বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের থাকার জন্য রয়েছে ১৩টি হল, শিক্ষকদের জন্য রয়েছে কোয়ার্টার। এসবের পাশাপাশি গড়ে উঠেছে অসংখ্য খাবার হোটেল ও স্টেশনারি। এ কারণে প্রতিনিয়ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কোয়ার্টার, আবাসিক হলসহ বিভিন্ন স্থানে ময়লা-আবর্জনা জমা হচ্ছে। ওই সব ময়লা ফেলা হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্য দিয়ে যাওয়া রেললাইনের দু’পাশে। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে জমে থাকা ময়লা-আবর্জনা বৃষ্টির পানির সঙ্গে ধুয়ে বাকৃবির পাশ দিয়ে বহমান ব্রহ্মপুত্রে নদে গিয়ে পড়ছে। দূষিত হচ্ছে নদীর পানি।
এসব বর্জ্য সঠিক উপায়ে ব্যবস্থাপনা না করায় ক্যাম্পাসের পরিবেশ নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি মশা-মাছির উপদ্রব বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, চিকুনগুনিয়ার মতো রোগেও আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের হেলথ কেয়ার সেন্টারের প্রধান মেডিকেল অফিসার ডা. ফয়েজ আহমদ বলেন, হোটেলগুলোর পাশেই আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। এতে সহজেই রোগ-জীবাণু ছড়িয়ে পড়ছে। ফলে বায়ুবাহিত ও পানি বাহিত রোগ ডায়রিয়া, আমাশয়ের প্রকোপ বেড়ে যেতে পারে। এছাড়া আবর্জনা পরিবেশের জন্যও যথেষ্ট ক্ষতিকর।
স্বাস্থ্য প্রতিষেধক শাখার নির্বাহী মেডিকেল অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) ডা. মো. শাহাদাৎ হোসেন বলেন, জব্বারের মোড় থেকে প্রতি তিনদিন পরপর আমরা ময়লা অপসারণ করার চেষ্টা করছি, কিন্তু দোকানদাররা অতিরিক্ত ময়লা ফেলায় আমরা একেবারে পরিষ্কার করতে পারছি না। এছাড়া অন্যান্য হল ও কোয়ার্টার থেকে ময়লা-আবর্জনা নিয়ে ইয়াসিনের মোড়ে নিয়ে ফেলা হয়। সেখানে একটি বড় ডাস্টবিন করার অনুমোদন হয়েছে। তখন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করার চেষ্টা করা হবে।