আয়শা সিদ্দিকা : প্রচুর পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ প্রতি ১০০ গ্রাম ইলিশ মাছে রয়েছে ১ হাজার ২০ কিলো জুল (শক্তির একক) শক্তি থাকে। তাতে ১৮ থেকে ২২ গ্রাম চর্বি, ২২ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি, ১৪ দশমিক ৪ গ্রাম প্রোটিন, ২ দশমিক ৪ মিলিগ্রাম আয়রন, সামগ্রিক ফ্যাটি অ্যাসিডের ১০ দশমিক ৮৩ শতাংশ ওমেগা-৩ ,১৮০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ৩.৩৯ গ্রাম শর্করা, ২.২ গ্রাম খনিজ ও ১৯.৪ গ্রাম চর্বি। এ ছাড়া বিভিন্ন খনিজ, খনিজ লবণ, আয়োডিন ও লিপিড রয়েছে। এছাড়াও ইলিশে রয়েছে ভিটামিন এ এবং ডি। এছাড়াও ইলিশ মাছের প্রধান দশটি গুণ সম্পর্কে এখানে আলোকপাত করা হলো-
১. হার্ট : ইলিশ মাছে স্যাচুরেটেড ফ্যাটের পরিমাণ একেবারেই কম। অন্য দিকে প্রচুর পরিমাণ ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড থাকায় রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কম থাকে। ফলে হার্ট থাকে সুস্থ।
২. রক্ত সঞ্চালন: সামুদ্রিক মাছে থাকা ইপিএ ও ডিএইচএ ওমেগা-থ্রি-অয়েল শরীরে ইকসিনয়েড হরমোন তৈরি রুখতে পারে। এই হরমোনের প্রভাবে রক্ত জমাট বেঁধে শিরা ফুলে যায়। ইলিশ মাছ খেলে শরীরে রক্ত সঞ্চালন ভাল হয়। থ্রম্বসিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমে।
৩. বাত: ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডের সঙ্গে অস্টিওআর্থারাইটিসের প্রত্যক্ষ যোগ রয়েছে। প্রতি দিনের ডায়েটে সামুদ্রিক মাছ থাকলে বাতের ব্যথা, গাঁট ফুলে গিয়ে যন্ত্রণার হাত থেকে রেহাই পাওয়া যায়।
৪. চোখ: তেলযুক্ত মাছ খেলে চোখের স্বাস্থ্য ভাল থাকে, চোখ উজ্জ্বল হয়। বয়সকালে দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হয়ে আসার মোকাবিলা করতে পারে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড। ইলিশ মাছের মধ্যে থাকা ভিটামিন এ রাতকানার মোকাবিলা করতেও সাহায্য করে।
৫. প্রয়োজনীয় খনিজ: ইলিশ মাছে রয়েছে আয়ডিন, সেলেনিয়াম, জিঙ্ক, পটাশিয়াম। থায়রয়েড গ্ল্যান্ড সুস্থ রাখে আয়ডিন, সেলেনিয়াম উত্সেচক ক্ষরণে সাহায্য করে যা ক্যানসারের মোকাবিলা করতে পারে। এ ছাড়াও ভিটামিন এ ও ডি-র উত্কৃষ্ট উত্স ইলিশ মাছ।
৬. ফুসফুস: সামুদ্রিক মাছ ফুসফুসের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে কার্যকরী। শিশুদের ক্ষেত্রে হাঁপানি রোধ করতে পারে ইলিশ মাছ। যাঁরা নিয়মিত মাছ খান তাঁদের ফুসফুস অনেক বেশি শক্তিশালী হয়।
৭. অবসাদ: ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড অবসাদের মোকাবিলা করতে পারে। সিজনাল অ্যাফেক্টিভ ডিজঅর্ডার (SAD), পোস্ট ন্যাটাল ডিপ্রেশন কাটাতে পারে ইলিশ মাছ।
৮. ত্বকের যত্নে: সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মির হাত থেকে ত্বককে রক্ষা করে ওমেগা ফ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড। নিয়মিত মাছ খেলে একজিমা, সোরেসিসের হাত থেকে রক্ষা পায় ত্বক। ইলিশ মাছে থাকা প্রোটিন কোলাজেনের অন্যতম উপাদান। এই কোলাজেন ত্বক টাইট ও নমনীয় রাকতে সাহায্য করে।
৯. পেটের যত্ন: ডায়েটে তেলযুক্ত মাছ থাকলে পেটের সমস্যা অনেক কম হয়। আলসার, কোলাইটিসের হাত থেকে রক্ষা করে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যসিড।
১০. ব্রেইন: মস্তিষ্কের ৬০ শতাংশই তৈরি ফ্যাট দিয়ে। যার অধিকাংশই ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড। যাঁরা নিয়মিত মাছ খান তাঁদের মধ্যে বয়স কালে ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা অনেক কম দেখা যায়। শিশুদের মস্তিষ্কের গঠনেও সাহায্য করে ডিএইচএ। অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপারঅ্যাকটিভিটি ডিজঅর্ডার(ADHD) রোধ করতে পারে ইলিশ মাছ।
সতর্কতা: উচ্চ রক্তচাপ, ইস্কিমিক হৃদরোগ বা সুগারের রোগীদের জন্য ইলিশ মাছ ক্ষতিকর নয়। তবে ইলিশ মাছ খেলে কারো শরীরে অ্যালার্জি বা গ্যাসের উদ্রেক হতে পারে। সেক্ষেত্রে আগে বুঝতে হবে আপনার শরীরে ইলিশ মাছের বিরূপ প্রভাব আছে কিনা। থাকলে এড়িয়ে চলা বুদ্ধিমানের কাজ।
লেখক : ডায়েট অ্যান্ড নিউট্রিশন কনসালট্যান্ট, জাপান বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হসপিটাল এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও কনসালট্যান্ট, ইজি ডায়েট বিডি লিমিটেড।