নিজস্ব সংবাদদাতা: রাজধানীর খামারবাড়ির আ.কা.মু. গিয়াস উদ্দিন মিলকী অডিটরিয়ামে বুধবার (৪ অক্টোবর) প্রধান অতিথি হিসেবে জাতীয় ইঁদুর নিধন অভিযান ২০১৭ -এর উদ্বোধন ও ২০১৬ এর পুরষ্কার বিতরণ করেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, এমপি।
মন্ত্রী বলেন, মানীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আমরা জঙ্গী দমন করছি। এছাড়াও যারা সমাজকে কুটে কুটে খায় তাদেরকে দমন করার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। এভাবে আমরা ফসল ধ্বংসকারী প্রাণি ইঁদুর ও ক্ষতিকর পোকা দমন করে যাবো। তিনি বলেন, কৃষি ক্ষেত্রে আমাদের অনেক সফলতা আছে। আমাদের জায়গা কমছে, তারপরও উৎপাদন বেড়ে চলেছে। কৃষি বিজ্ঞানীদের গবেষণা ও উন্নত প্রযুক্তি মাঠে সম্প্রসারণের ফলে এটি সম্ভব হয়েছে। এক সময় এদেশের কৃষকরা সারের জন্য পিছে পিছে ঘুরতে হয়েছে এবং জীবন দিয়েছে। শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় আসার পর সার এখন কৃষকের পিছে ঘুরছে। আমাদের দেশের কৃষকরা রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে ফসল উৎপাদন করছে। এজন্য সরকার তাদেরকে ভূর্তকিসহ সার ও বীজ সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী এমপি বলেন, আমরা কৃষির আধুনিকায়নে অনেক দেশ থেকে এগিয়ে আছি। স্বাধীনতার পর আমাদের ফসলের উৎপাদর তিনগুন বৃদ্ধি পেয়েছে। বন্যা, খরা, রোগবালাইয়ের আক্রমণ স্বত্বেও আমরা আমাদের ফসলের উৎপাদন অব্যাহত রেখেছি। এবারের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সহায়তা বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, একই সঙ্গে প্রণোদনা ও তার পরে পূনর্বাসন কর্মসূচী এ প্রথম বাংলাদেশে জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার ঘোষণা করেছে। এর আগে কোনদিন এ কাজটি কেউ করেনি।
তিনি বলেন, প্রতি বছর বিভিন্ন কারণে আমাদের ১০-১২ লাখ মেট্রিক টন ফসল নষ্ট হচ্ছে। এটা আমাদের আমদানি করতে হয়। এ ফসল নষ্ট না হলে আমাদের আমদানি করতে হতো না। মন্ত্রী আরও বলেন, একটা ইঁদুর বছরে ১০-১২ কেজি খাবার নষ্ট করে এবং এদের বাচ্চা দেয়ার হার ও বেশি। এছাড়াও সমাজে ইঁদুরও আছে মানুষও আছে, আবার মানুষরুপী ইঁদুর আছেন, যারা মানুষের খাবার ও ধনসম্পদ অত্যন্ত সুকৌশলে খায়। এদের দমন করতে পারলে দেশের কৃষি উন্নয়ন আরো ত্বরান্বিত হবে।
জাতীয় ইঁদুর নিধন অভিযান-২০১৭ এর প্রতিপাদ্য ‘ইঁদুর দমন সফল করি, মাঠের ফসল গোলায় ভরি’। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সংরক্ষণ উইং এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। মাসব্যাপী এ অভিযান চলবে (০৩ নভেম্বর) পর্যন্ত। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে জানানো হয় ২০১৬ সালে ইঁদুরের আক্রমণ থেকে রক্ষাকৃত ফসলের পরিমাণ প্রায় ৮৯ হাজার মেট্রিক টন। এ বছর নিধন করা হয়েছে এক কোটি ১৮ লাখ ৪৫ হাজার ৯০৪ টি ইঁদুর। ২০১৫ সালে ইঁদুরের আক্রমণ থেকে রক্ষাকৃত ফসলের পরিমাণ প্রায় ৯৫ হাজার মেট্রিক টন এবং ইঁদুর নিধন করা হয়েছে এক কোটি ২৫ লাখ ৮৫ হাজার ১৮১ টি ইঁদুর।
ইঁদুর নিধন অভিযান ২০১৭ উপলক্ষে র্যালী ও অডিটরিয়াম চত্বরে মেলার আয়োজন করা হয় এবং বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এ মেলায় অংশগ্রহন করে। এ অনুষ্ঠানে ইঁদুর নিধন অভিযান ২০১৬ সালের জাতীয় পর্যায়ে ৩ জন কৃষক, ৩ টি জেলা, ৩ জন উপসহকারি কর্মকর্তা, ৩ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, তিনটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে নগদ অর্থ, ক্রেষ্ট ও সনদপত্র বিতরণ করা হয়। এছাড়াও ঢাকা অঞ্চলের ৬ টি জেলার ১ জন করে কৃষক, ৩ জন উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা, ১ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ১টি উপজেলাকে পুরস্কার প্রদান করা হয়।
এবছর ইঁদুর নিধন অভিযানের উদ্দেশ্য হলো-কৃষক, কৃষানী, ছাত্র-ছাত্রী, বেসরকারী প্রতিষ্ঠান, আইপিএম/আইসিএম ইত্যাদি ক্লাবের সদস্য, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাসমূহসহ সর্বস্তরের জনগণকে ইঁদুর দমনে উদ্বুদ্ধ করা। ইঁদুর দমনের জৈবিক ব্যবস্থাসহ লাগসই প্রযুক্তি কৃষি কর্মীগণের মাধ্যমে কৃষকের দোরগোড়ায় পৌছানো। ঘরবাড়ি, দোকানপাট, শিল্প কারখানা ও হাঁস মুরগীর খামার ইঁদুরমুক্ত রাখার জন্য সর্বস্তরের জনগনকে উদ্বুদ্ধ করা। আমন ফসল ও অন্যান্য মাঠ ফসলে ইঁদুরের ক্ষতির পরিমান কম রাখা। গভীর ও অগভীর নলকুপের সেচের নালার ইঁদুর মেরে পানির অপচয় রোধ করা। রাস্তাঘাট ও বাঁধের ইঁদুর নিধনের জন্য সর্বস্তরের জনগণকে উদ্বুদ্ধ করা। ইঁদুর বাহিত রোগের বিস্তার রোধ করা এবং পরিবেশ দুষণমুক্ত রাখা।
অনুষ্ঠানের মূল বিষয় উপস্থাপন করেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সংরক্ষণ উইংয়ের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ জাকিয়া বেগম। স্বাগত বক্তব্য দেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কৃষিবিদ মো. গোলাম মারুফ। কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ্ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। অনুষ্ঠানে কৃষি মন্ত্রণালয়ধীন বিভিন্ন অধিদপ্তর/সংস্থার উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ, বরেন্য কৃষিবিদ, কৃষিবিশেষজ্ঞ, বিজ্ঞানী, গবেষক, কৃষক-কৃষানী এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন করেন।