বুধবার , ডিসেম্বর ২৫ ২০২৪

খুলনার হিমাগারের আলুতে লোকসানের আশঙ্কা

ফকির শহিদুল ইসলাম (খুলনা):
খুলনার বাজারে রংপুর ও বগুড়া থেকে নতুন আলু আসবে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি নাগাদ। অতিবৃষ্টির ফলে শাকসবজির সাথে সাথে আলুর দামও নিম্নমুখি। খুলনার তিনটি হিমাগারে ৩১ হাজার বস্তা আলু মজুদ রয়েছে। বাজারে দাম কম থাকায় লোকসানের আশঙ্কায় মজুদদাররা হিমাগার থেকে আলু বের করছে না। ফলে স্থানীয় মজুদদারদের বস্তাপ্রতি ৫শ’ টাকা হিসেবে সর্বমোট প্রায় ১৫৫ কোটি টাকা লোকসানের আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ কোল্ডস্টোরেজ এসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, আলু রফতানিতে উল্লেযোগ্য অগ্রগতি নেই। ফলে অধিকাংশ আলু হিমাগারে রয়ে গেছে। এছাড়া চাহিদার তুলনায় উৎপাদন হয়েছে অনেক বেশি। কোল্ডস্টোরেজগুলো থেকে মজুদদাররা ১৫ দিনের মধ্যে আলু বের করেনি। ৬০/৬৫ দিন পর উত্তরাঞ্চল থেকে নতুন আলু আসতে শুরু করবে। হিমাগারে মজুদ আলু তখন ফেলে দেওয়া অথবা গো-খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা ছাড়া কোন উপায় থাকবে না।

২০১৪-১৫’  মৌসুমে আলুর কেজি ৩ টাকা হওয়ায় খুলনার আড়ৎদাররা ২৫০ বস্তা আলু তখন ভৈরব নদে ফেলে দেন। মজুদ আলু থেকে এবার রোহিঙ্গাদের জন্য ১শ’ মেট্রিক টন ত্রাণ হিসেবে দেয়া হয়েছে বলে জানা যায়।

বাংলাদেশ কোল্ডস্টোরেজ এসোসিয়েশনের সভাপতি মো. মোশারফ হোসেন আলুর দুরাবস্থা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী’র কার্যালয়, বাণিজ্য ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছেন বলে জানা গেছে। উক্ত চিঠিতে সরকারকে আলু কিনতে অনুরোধ করা হয়েছে।

এ সম্পর্কে দৌলতপুর আইস এন্ড কোল্ডস্টোরেজ’র প্রতিনিধি মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী জানান, মৌসুমে এ হিমাগারে ৩০ হাজার বস্তা মজুদ ছিল। অক্টোবর মাসে মজুদের পরিমাণ ১৪ হাজার বস্তা। মৌসুমে প্রতি বস্তার মূল্য ছিল ১৪শ’ টাকা। এখনকার মূল্য ১ হাজার ২০ টাকা।

মাহমুদ কোল্ডস্টোরেজ’র ম্যানেজার মো. আজমল হোসেনের কাছে জানতে চাইলে বলেন, প্রতি বস্তায় বছরে হিমাগারকে ২৬০ টাকা ভাড়া দিতে হয়। ১২ জন মজুদদার হিমাগারের ধারে কাছে ভিড়ছে না। প্রতি বস্তায় ৫শ’ টাকা লোকসান হবে। হিমাগারে প্রতিদিন ৩/৪ ঘণ্টা লোডশেডিং হয়। আলু সতেজ রাখতে জেনারেটর ব্যবহার করা হচ্ছে।

হিমাগার নামক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি মুশফিকুর রহমান জানান, অক্টোবরের ২ তারিখ নাগাদ এখানে মজুদের পরিমাণ ১১ হাজার বস্তা। চাহিদার তুলনায় এখানে মজুদের পরিমাণ বেশি। তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ডিসেম্বরের মধ্যে মজুদকৃত আলু বিক্রি হওয়ার সম্ভাবনা নেই।

শিরোমনি গ্রামের অধিবাসী মজুদদার মনিরুল ইসলামের দেওয়া তথ্যমতে, ব্যাংক থেকে ঋণ ও কোল্ডস্টোরেজ থেকে অগ্রিম নিয়ে ১ হাজার বস্তা আলু মজুদ রেখেছেন তিনি। আনুমানিক ৫ লাখ টাকা লোকসান দিতে হবে বলে জানান।

কৃষি অধিদপ্তরের সূত্র জানান, মুন্সিগঞ্জ, রাজশাহী, রংপুর, বগুড়া ও দিনাজপুরে আলুর উৎপাদন বেড়েছে। পাশাপাশি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত পরিবহন না থাকায় আলু রফতানিতে সুফল আসছে না। উল্লেখ করা যেতে পারে, জুন-জুলাই মাসে প্রতি কেজি আলু ২৪ টাকা দরে বিক্রি হলেও এখন ১৬ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

This post has already been read 3925 times!

Check Also

আমন ধানে ব্রাউন প্ল্যান্ট হপার আক্রমণ: ফলনের ক্ষতি ও করণীয়

ড. মো. মাহফুজ আলম: বাংলাদেশে ধান প্রধান ফসল হিসেবে পরিচিত এবং এর উৎপাদন গ্রামীণ অর্থনীতির …