বৃহস্পতিবার , ডিসেম্বর ২৬ ২০২৪

আন্ডাবাজির সালতামামি

সাইফুল আলম :  গল্পের নতুন উদ্যোক্তা মাথায় ডিমের ঝুড়ি নিয়ে তার ব্যাবসার পরিকল্পনায় এতটাই মশগুল যে মাথার উপর ডিমের ঝুড়িটি পড়ে ভেংগে তার ব্যাবসাই লাটে উঠে । এমনটা পড়ে এসেছি শিক্ষণীয় গল্পে। মোরাল অফ দ্যা স্টোরী হলো- ডিম নিয়ে দিবা স্বপ্ন দেখা যাবে না। ডিম বা আন্ডা আমাদের একদম নোয়াখালীর খাস ভাষায় যেটিকে বলে –বদা।

এই ডিম নিয়ে যেমন গল্পের অভাব নেই সেটা শিক্ষণীয় কিংবা আষাঢ়ে গল্প যেটাই হোক না কেন। কেউ প্রয়োজনের বেশী কোথাও বসলে বিশেষত পড়ার টেবিলে বসে যদি পড়ার আওয়াজ না শোনা যায় তবে, অভিভাবক মহলের কেউ হাক ছাডতে দেরী করে না- পড়া রেখে  তুমি কি ডিম পাডতেছো বসে বসে?

eggs-saifulআন্ডা আসলে ডিম্বাকৃতির ডিম্বাশয় প্রসুত হলে ও সকল ডিম্ব যে ডিম্বাশয় প্রসুত তা কিন্তু নয়, মস্তিস্ক প্রসুত আন্ডাও আছে। যেমন- অশ্বডিম্ব। সবচেয়ে বহুল ব্যবহৃ ডিমের প্রজাতি। যেটা কেউ কোন দিন দেখেওনি দেখার সে সম্ভাবনাও নেই । তবু ঘোডার ডিম শব্দটা থেকে থাকবে যুগে যুগে অদৃশ্য আন্ডার গোলক ধাঁধাঁ হয়ে ।

ডাইনোসর -এর ডিম তো আর ও একধাপ এগিয়ে । আন্ডার উপর নাকি হাতি নাচানো যায়, দু’ হাতের মধ্যে সোজাসোজি ধরে প্রচন্ড চাপ দিয়ে দেখেছি অনেকের কথায় ভাংগা যায়নি, কথিত আছে সোজাসোজি হাতির পায়ের নিচে পড়লেও নাকি আন্ডার দফারফা হয় না। সত্যি কিনা জানা হয়নি ।

সংসার চালানো যে কত কঠিন সেটা বোঝাতে গিয়ে আমার বাপ প্রায়ই বলতো, আমি আন্ডার উপর হাতি নাচাচ্ছি। কেবল মনুষ্য জাতি যে আন্ডাবাজ তা কিন্তু না। পশু পাখিদের মধ্যেও আন্ডা নিয়ে নানা স্যাটায়ার মুলক কারবার বিরাজমান। কোকিল কাকের বাসায় ডিম পাডে আর কাউয়া কা কা করতেই ব্যাস্ত থাকে,আর তা দিয়ে কোকিলের বাচ্চা ফোটায়। আবার চাতক পাথি আন্ডা পাড়ার পর গোটা আসমানের ভেংগে যাতে তার ডিম নষ্ট করতে না পারে সে জন্য আসমানমুখী করে রাখে পা দুখানা ।

পরীক্ষার খাতায় আমার এক জেঠাতো ভাই ডাবল আন্ডা পাওয়ার পর সুনিপুন চতুরতায় সামনে কেবল একটা এক বসিয়ে নিলো ব্যাস আন্ডার বদৌলতে একশতে একশ নাম্বার! এতো গেলো পরীক্ষার খাতা কাউকে অপমান করবেন? কাঁদা ছোডাছোডি না করে আন্ডা ছুডে মারুন আর সেটি যদি হয় পচা ডিম তাহলেতো কেল্লা ফতে।

এবার আসি মুরগীর আন্ডা প্রসংগে। ছোটবেলায় দেখতাম, দেশি মুরগী ডিম পাড়ার সময় হলে লুকিয়ে ডিম পাড়ার চেষ্টা করতো এবং কয়েকটা জমলেই ওখানে তা দিতে বসে যেতো। আর এখন মুরগী আন্ডা পাডে গুনে গুনে চুক্তিভিত্তিক। সেই আন্ডা তাদের আর ওম বা তা দেয়ার সুযোগ ঘটেনা। তারপরও তারা আন্ডা পাড়ে । এই প্রকার আন্ডা পাড়া মুরগির নাম লেয়ার। তবে হ্যা, ব্রয়লার মুরগি কিন্তু আবার ডিম পাড়েনা।

কিন্তু সাদা চোখে যদি চিন্তা করা হয়, ব্রয়লার মুরগী তো ডিম পাড়ে না তাহলে তাদের বাচ্চা হয় কীভাবে? বাচ্ছা কিভাবে? কিংবা লেয়ার মুরগী তো ডিম পাডার মেশিনের মতো কেবল ডিম-ই পাড়ে তাহলে বাচ্চা আসে কোথা থেকে?  পোলট্রি শুধু একটি শিল্পই না, বৈজ্ঞানিক এত অত্যাশ্চর্যের নাম। যাইহোক, মাত্র ক‘দিন আগে টক অফ দ্যা কান্ট্রি ছিলো এবারের বিশ্ব ডিম দিবস। গত ১৩ অক্টোবর, শুক্রবার পালিত হলো ‘বিশ্ব ডিম দিবস’। ১৯৯৬ সাল থেকে এ দিবসটি বিশ্ব জুড়ে একযোগে পালিত হয়ে আসছে।

গত বছরের মত এবারও দিবসটি যৌথভাবে উদযাপন করেছে পোল্ট্রি সংশ্লিষ্ট ৭টি অ্যাসোসিয়েশনের সমন্বয়ে গঠিত-বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি) এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর (ডিএলএস)। “সুস্থ সবল জাতি চাই, সব বয়সেই ডিম খাই্ এই শ্লোগানে ঢাকাবাসীকে তিন টাকা মুল্যে ডিম সরবরাহ করার ঘোষনা থাকায় সকাল দশটার মধ্যে লোকে লোকারণ্য লাইনের পর লাইন। অতি সৌভাগ্যবান কিছু লোক ছাড়া কারো ভাগ্যেই ডিম জুটেনি বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ।

অনেকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, যদি মেলায় ডিম বিক্রি করতে পারে তাহলে দোকানে ডিমের দাম এতো বেশী কেন? সব লুটে পুটে খাচ্ছে আন্ডার কারবারীরা। কেউ মন্তব্য করেছেন, আন্ডা আতাত করে কারওয়ান বাজারে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে তাই এখানে পাওয়া যায়নি। অথচ যারা এ শিল্পের সাথে সম্পৃক্ত তারা কম বেশি সবাই জানেন- আন্ডাওয়ালারা ভালো নেই, অনেক দিন ধরে ডিমের উৎপাদন খরচই উঠছেনা।

দেশের ১৬ কোটি মানুষের খাদ্যতালিকায় প্রতিদিন প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় সোয়া দুই কোটি পিস ডিম লাগছে। সেই হিসাবে প্রতিদিন ডিম বিক্রি হচ্ছে ৩০ কোটি ৬৮ লাখ টাকার। আর বছরে ডিম বাণিজ্য ঘিরে লেনদেন হচ্ছে ১১ হাজার ১৯৯ কোটি টাকা। এ ছাড়া একজন মানুষ বছরে সরাসরি ডিম খাচ্ছে ৪৫-৫০টি। এই হিসাবে প্রতিদিন খাওয়ার জন্য ডিম কেনা হচ্ছে ১৬ কোটি টাকার। প্রতিবছর দেশে গড়ে প্রায় ১৫ লাখ মানুষ বাড়ছে। এ হিসাবে ২০২১ সাল নাগাদ বাংলাদেশে দৈনিক প্রায় সাড়ে চার কোটি ডিম লাগবে । তাই আন্ডা আগে না মুরগী আগে এ প্রশ্ন যাদের মনে তাদের কাছে অনুরোধ-  যারা মনে করেন আন্ডা আগে তারা ব্রয়লার ফার্মে ঘুরে আসুন দেথবেন মুরগীই আগে ডিমের কোন নিশানাও নাই এবং যারা মনে করেন মুরগী আগে তারা লেয়ার এর হ্যাচারীতে ডিম ফোটার সময় একবার যেয়ে দেখবেন ডিম থেকেই সকল মুরগী আসে । আন্ডা আগে হোক আর মুরগী আসুন নিয়মিত আন্ডা খাই, অন্যকে খেতে উৎসাহ দিই আর সুস্থ সবল থাকি

This post has already been read 5214 times!

Check Also

জেলা প্রশাসন কঠোর হলে সারাদেশেই এক দরে ডিম বিক্রি সম্ভব

এগ্রিনিউজ২৪.কম: জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উদ্যোগ ও করপোরেট খামারিদের সহযোগিতায় রাজধানীতে ডিমের মূল্য অনেকটাই …