মো. আরিফুল ইসলাম (বাকৃবি): অর্কিড বর্তমান বিশ্বে অর্নামেন্টাল উদ্ভিদ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। খাদ্য, খাদ্য সহায়ক, ওষুধ, ঔষধি উপাদান, পানীয় উপাদান, পানীয় সহায়ক, আর্ট অ্যা- ক্রাফট, অভ্যন্তরীণ সজ্জায়নসহ বিশ্বে অর্কিডের রয়েছে বহুবিধ অভিজাত ব্যবহার। কোমল পানীয় ও চিকিৎসাশাস্ত্রে অর্কিড এর ব্যবহার নিয়ে আজকে আমরা জানবো-
পানীয় জগতে অর্কিডের ব্যবহার ব্যাপক। মধ্যপ্রাচ্যে বিশেষ করে টার্কিতে স্থলজ অর্কিডের টিউবার থেকে ‘সাহলেপ’ নামক আইসক্রিম ও পানীয় প্রস্তুত করা হয়। আরবি সাহলেপ শব্দটি ইংরেজিতে ‘সালেপ’ শব্দে প্রচলিত হয়েছে। ‘সালেপ’ স্টার্চ সমৃদ্ধ মিষ্টি উপাদান। এটি রুটিতে মিশিয়ে খাওয়া যায়, আবার পানীয়তে মিশিয়েও খাওয়া যায়। ঐতিহ্যগতভাবে এটি পুষ্টিসমৃদ্ধ এবং ভ্রমণকারীদের দুপুরের খাবারের বিকল্প হিসেবে ‘সালেপ’ গ্রহণ করা হয়। টার্কিতে Anacamptis morio এবং একই শ্রেণীভুক্ত Orchis masculata প্রজাতি থেকে ‘সালেপ’ প্রস্তুত করা হয়। টার্কিরা সালেপের ঔষধি গুণাগুণ সম্পর্কে প্রথম অবগত হন ইংল্যান্ড থেকে। ১৫৬৮ সনে উইলিয়াম টারনার নামে বিখ্যাত হার্বালিস্ট অর্কিডের চারটি ঔষধি গুণাগুণ প্রচার করেন। এগুলো হলো এন্টি-পাইরেটিক, এন্টি-কনজ্যামশন, এন্টি-ডায়ারিয়া এবং এন্টি-এলকোহলিক গ্যাসট্রাইটিস।
১৬৪০ সনে বিখ্যাত চিকিৎসক জন পার্কিনসন বলেন, অর্কিড জাতীয় খাদ্য মানবদেহে পুনঃউৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। উনিশ শতকে Bourbon tea পশ্চিমা দেশগুলোতে খুবই জনপ্রিয় ছিল। ওই চায়ে এক প্রকার অর্কিড মেশানো হতো। মনে করা হতো, ওই চা এক ধরনের ‘সিডেটিভ’ গুণ সম্পন্ন এবং তাতে ‘জুমেলিয়া’ নামক সুগন্ধী পাওয়া যেত। দক্ষিণ আফ্রিকান অঞ্চলের তাঞ্জানিয়া, জাম্বিয়া এবং মলাবিতে সুদীর্ঘকাল ধরে অর্কিডের টিউবার খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এ তিনটি রাষ্ট্রের মধ্যে অর্কিড টিউবার বাণিজ্যিকভাবেও ক্রয়-বিক্রয় করা হতো। টিউবার দিয়ে তৈরি খাদ্যকে তারা মাংসের স্থলাভিষিক্ত মনে করতেন। এ ব্যবসা ব্যাপক হওয়ায় একপর্যায়ে এ অঞ্চলে অর্কিড নিশ্চিহ্ন হওয়ার উপক্রম হয়।
অর্কিড প্রেমিকদের এবং পশ্চিমা দেশগুলোতে অর্কিড উৎপাদনকারীদের মতে, অর্কিড উপাদেয় ফাইবার ও ভিটামিন যুক্ত খাবার। এ খাবারের স্বাদ কেমন তার এক জরিপে অনেক মতামত পাওয়া গেছে। কেউ কেউ বলেছেন, কিছুটা মিষ্টি স্বাদের অর্কিড খুবই ভালো লাগে। কেউ আবার বলেছেন, এদের স্বাদ কিছুটা ট্যানিন যুক্ত খাবারের মতো। আবার কেউ বলেন, খাদ্য হিসেবে এটি তাদের পছন্দের সর্বশেষ তালিকায়।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ফসল উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. ওবায়েদুল ইসলাম অর্কিডের প্রজনন, বিস্তার ও টিস্যু কালচারের ওপর গবেষণা করছেন। গবেষণার জন্য তিনি ফসল উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের টিস্যু কালচার গবেষণাগারে নিবিড় পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে অর্কিডের প্রজনন করছেন। বাকৃবির বোটানিক্যাল গার্ডেনের একটি অংশই রয়েছে অর্কিডের জন্য। গবেষণাগারে যেসব অর্কিড কালচার করা হয়, তা গার্ডেনের ওই অংশে রোপণ করা হচ্ছে। আমাদের দেশে অর্কিডের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। অর্কিড চাষাবাদের মাধ্যমে আমাদের দেশের অর্থনৈতিক উন্নতিসহ বেকারদের কর্মসংস্থানেরও ব্যবস্থা হবে।