সোমবার , নভেম্বর ২৫ ২০২৪

দক্ষিণাঞ্চলের চার জেলায় বোরো বীজ সংকট

ফকির শহিদুল ইসলাম (খুলনা) : দেশের দক্ষিণাঞ্চলের চার জেলায়  চলতি বোরো মৌসুমে বীজের চাহিদার তুলনায় সরবরাহ অপ্রতুল । জেলাগুলো হচ্ছে খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট ও নাড়াইল । এ সকল জেলায় চলতি বোরো মৌসুমে দুই লাখ হেক্টর জমিতে আবাদের  চাহিদার তুলনায় ৮৫ শতাংশ সরকারি বীজের ঘাটতি রয়েছে। সরকারী বীজের চাহিদার তুলনায় সরবরাহ অপ্রতুল হওয়ায় কৃষকরা  বিপাকে পরেছেন ।

খুলনা বিএডিসির উৎপাদিত বোরো ধানের বীজ গতবারের তুলনায় এবারের মূল্য দ্বিগুণ। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বীজের মূল্য কেজি প্রতি ৭০-১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। দক্ষিণাঞ্চলের ছয় লাখ কৃষককে বাড়তি দামে এবার বীজ কিনতে হবে। স্বাভাবিকভাবেই বোরো উৎপাদন খরচ বাড়বে। গেল বার বস্তা প্রতি চারশ’ টাকা লাভ হয়। সে কারণে দক্ষিণাঞ্চলের চিংড়ি, সবজি চাষীরা বোরো আবাদে ঝুঁকে পড়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানান, বিএডিসি’র বিরি ১৬, ২৬, বিআর ২৯, ৪৭, বিনা ৮, ১০, ১৪, হাইব্রিড উইং ৩০২, এফএল ৮৮ জাতের বীজ উৎপাদন হয়েছে।

বিরি ও সুগন্ধি জাতের বীজ এক বছরের ব্যবধানে মূল্য বেড়েছে দ্বিগুণ। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত হিরা নামক এক কেজি ওজনের বীজ ২২০ টাকার পরিবর্তে ২৮০ টাকা, এসিআই (ফলন ২) এক কেজি ওজনের বীজ ৪০ টাকার পরিবর্তে ৭০টাকা, তেজ নামক জাতের এক কেজি ওজনের বীজ ২৪৫ টাকার পরিবর্তে ২৮০ টাকা, মল্লিকা সীড এক কেজি ওজনের বীজ ৩১০ টাকার পরিবর্তে ৩৫০ টাকা, মালিকস (৩) ২০০ টাকার পরিবর্তে ২৮০ টাকা, ভিত্তি (২৮) জাতের ধান দুই কেজি বীজের মূল্য ১০০ টাকার পরিবর্তে ১৭০ টাকা দরে বিক্রি হয়।

দক্ষিণাঞ্চলের চার জেলায় এবারের বোরো মৌসুমে দুই লাখ হেক্টর আবাদের জন্য চাহিদার তুলনায় ৮৫ শতাংশ সরকারি বীজের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। গেল মৌসুমে কাঙ্ক্ষিত দাম পাওয়ায় কৃষক বোরো আবাদে ঝুকে পড়লেও বিএডিসি বীজের চাহিদা পূরণ করতে পারছে না। একই সাথে সরকারি বীজের মূল্য গত বারের তুলনায় এবার দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলো হচ্ছে- খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট ও নড়াইল। এসব জেলায় ৬ লাখ কৃষক পরিবার বোরো আবাদের উদ্যোগ নিয়েছে।

স্থানীয় কৃষকদের সূত্র জানান, গেল মৌসুমে এ অঞ্চলের বোরো চাষীরা কাঙ্ক্ষিত মূল্য পায়। বস্তাপ্রতি চারশ’  টাকা লাভ হয়। সেই সঙ্গে গো-খাদ্য ও মাছের খাবারের চাহিদা পূরণ হয়। মৎস্য খামার পরিবেষ্টিত দক্ষিণাঞ্চলের ভূমিতে বোরো আবাদ হচ্ছে প্রতি বছর। বাগদা ও গলদা চিংড়ির লোকসান মেটাতে বিকল্প হিসেবে বোরো চাষ করছে কৃষক।

সংশ্লিষ্ট সুত্র জানান, এবারে খুলনা জেলায় ৫২ হাজার, সাতক্ষীরা জেলায় ৭৪ হাজার, বাগেরহাট জেলায় ৫৩ হাজার এবং নড়াইল জেলায় ৪২ হাজার হেক্টর বোরো আবাদের আওতায় আনা হয়েছে। ইতোমধ্যেই বীজ তলা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। ফুলতলার গুদাম থেকে ট্রাক বোঝাই হয়ে বীজ গন্তব্যস্থলে যাচ্ছে।

বিএডিসি (বীজ) এর উপ-পরিচালক মো. লিয়াকত আলীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ পর্যন্ত দু’হাজার একশ’ ২৭ মেট্রিক টন বীজ বরাদ্দ হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। নানা জাতের মধ্যে রয়েছে- বিরি-১৬, ২৬, ৩২, বিআর-২৯, ৪৭, বিনা-১০, ১৪ ইত্যাদি।

মূল্য সম্পর্কে তিনি জানান, গত বারের তুলনায় মূল্য বেড়েছে। বিরি-১৬, ২৬, ২৮, ২৯ প্রতি কেজি ৩৫ টাকার পরির্বতে ৫০ টাকা, ভিত্তি ৪৫টাকার পরিবর্তে ৫৫ টাকা, সুগন্ধি ৫০ টাকার পরিবর্তে ৬৫ টাকা ও ভিত্তি সুগন্ধি ৫০ টাকার পরিবর্তে ৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। জেলার ৩৩০ জন ডিলারের মাধ্যমে বীজ বিক্রি চলছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খুলনাঞ্চলের সহকারী পরিচালক নিত্যরঞ্জন বিশ্বাসের দেয়া তথ্য অনুযায়ী সিলেটে বন্যার কারণে বিএডিসি’র উৎপাদিত বীজের সিংহভাগ সেখানে পাঠানো হচ্ছে। তাছাড়া কোনো না কোনো কারণে সরকারি বীজের ঘাটতি থাকে। দক্ষিণাঞ্চলে চাহিদার তুলনায় সরকারি এ প্রতিষ্ঠান ১৫ শতাংশ বীজ সরবরাহ করবে। বাকী চাহিদা পূরণ হবে বিভিন্ন কোম্পানীর হাইব্রিড জাত ও কৃষকের ঘরে সংরক্ষিত বীজ দিয়ে। ব্লাস্টের আক্রমন থেকে রক্ষা করতে কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

খুলনার অতিরিক্ত পরিচালক হাসান ওয়ারেসুল কবীর জানান, গেল মৌসুমে ধান বেশি পাওয়ায় এবার তিন হাজার হেক্টর বেশি জমিতে জেলায় বোরোর আবাদ হবে। গেলবার ৫২ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়। ডুমুরিয়া, ফুলতলা, তেরখাদা, রূপসা, দিঘলিয়া ও পাইকগাছায় আাবাদী জমির পরিমাণ বেশি।

ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আতিকুন নাহার জানান, ২০ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে আবাদ হবে। উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের জন্য ৬৭ মেট্রিক টন বীজ বরাদ্দ করা হয়েছে। গত বছর হেক্টর প্রতি ৬ মেট্রিক ধান উৎপাদন হওয়ায় লাভের আশায় কৃষকরা এবার আবাদে ঝুকেছে। এখানে বিরি-২৮, ৫৮ ও ৬৭ জাতের চাহিদা বেশি।

পাইকগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম জানান, ১৯জন ডিলারের জন্য ৩৮ মেট্রিক টন বীজ বরাদ্দ করা হয়েছে। এ উপজেলার কপিলমুনি, হরিঢালী, রাড়–লি, গদাইপুর ও চাঁদখালী ইউনিয়নে ২৮শ’ হেক্টর জমিতে বোরোর আবাদ হবে বলে তিনি আশাবাদী।

এ উপজেলার মালোত গ্রামের চাষী মোশাররফ হোসেন জানান, তিন বিঘা জমিতে এ মৌসুমে আবাদ করবেন তিনি। তার আগ্রহ বিআর-২৮ জাতের উপর। পাশ্ববর্তী বারুইডাঙ্গা, প্রতাপকাটি, শ্রীমানপুর, ভৈরবঘাটা ও কাজী মুসা গ্রামের চাষীরা এখনো সরকারি বীজ পায়নি বলে জানান ।

This post has already been read 2754 times!

Check Also

নরওয়ের সাথে সরাসরি নৌযোগাযোগ স্থাপনের আহ্বান নৌপরিবহন উপদেষ্টার

নিজস্ব প্রতিবেদক: নরওয়ের সাথে বাংলাদেশের সরাসরি নৌযোগাযোগ স্থাপনের আহ্বান জানিয়েছেন নৌপরিবহন এবং বস্ত্র ও পাট …