বৃহস্পতিবার , নভেম্বর ২১ ২০২৪

বোরো ধানের বীজতলা তৈরির নিয়মাবলী

কৃষিবিদ ড. এম এ মজিদ মন্ডল:
বীজতলা বলতে উত্তমরুপে প্রস্তুতকৃত ছোট আকারে এমন এক খন্ড জমিকে বোঝায় যেখানে বীজ বপন করলে অঙ্কুরোদগমের উপযুক্ত পরিবেশ পায় এবং যথার্থ পরিচর্যার মাধ্যমে উপযোগী চারা উৎপন্ন হয়। অর্থাৎ বীজতলা বলতে এমন এক স্থানকে বোঝায় যেখানে বীজ থেকে চারা উৎপান করা হয় এবং মুল জমিতে রোপনের পূর্ব পর্যন্ত নিবিড় পরিচর্যা করা হয়। বীজতলাকে তিন ভাগে ভাগ করা হয় যথা-

১. শুকনো বীজতলা যেখানে জমি শুকনো অবস্থায় চাষ দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে বীজ বপন করতে হয়। ২. ভেজা বীজতলা যেখানে জমিতে পানি থাকা অবস্থায় চাষ ও মই দিয়ে সমান করে উহাতে অঙ্কুরোদগম বীজ থেকে চারা উৎপাদন করা হয়।

৩. ভাসমান বীজতলা যেখানে পানিতে ভাসমান ভেলা, কচুরিপনা বা অন্য কোন ভাসমান বস্তুর উপর পলিথিন বিছিয়ে সেটিতে সামান্য পরিমাণ মাটি দিয়ে সেখানে বীজ থেকে চারা উৎপাদন করা হয়। বোরো ধানের জন্য ভেজা বীজতলা তৈরি করাই ভালো, তবে উপকুল অঞ্চলে প্রয়োজনে ভাসমান বীজতলা তৈরি করা যেতে পারে। এখানে বোরো ধান চাষের জন্য ভেজা বীজতলা তৈরীর পদ্ধতি আলোচনা করা হলো (এক্ষেত্রে এক শতাংশ জমিতে চারা উৎপাদন করে এক বিঘা বা ৩৩ শতাংশ জমি রোপন করা যায়) –

স্থান
সেচ ও নিকাশের সুবিধাযুক্ত আলো- বাতাসপূর্ণ এঁটেল দোআঁশ মাটিতে ভেজা বীজতলা করা ভালো।

জমি তৈরি
জমিতে পানি থাকা অবস্থায় ২-৩টি চাষ দিয়ে ৫-৭ দিন রেখে দিয়ে আবার ২-৩ টি চাষ দিয়ে মাটি মই দিয়ে সমান করে বীজতলা তৈরি করতে হবে।

সার প্রয়োগ
প্রতি শতাংশ জমিতে ৩-৪ মণ পঁচা গোবর (পচে নাই এমন গোবর ব্যবহার করা যাবে না), ২০০ গ্রাম ইউরিয়া, ২০০ টিএসপি, ১০০ গ্রাম পটাশ সার জমি তৈরির সময় শেষ চাষের সাথে মাটিতে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে।

বেড তৈরি
প্রতিটি বেডের প্রস্থ হবে ১ মিটার এবং দৈর্ঘ্য হবে জমির দৈর্ঘ্য পর্যন্ত। দুটি বীজতলার মাঝে ৬০ সেন্টিমিটার ও জমির চারপার্শ্বে ২৫ সেন্টিমিটার নালা রাখতে হবে (নালা তৈরির মাটি বেডে তুলে দিতে হবে যাতে বেড নালা থেকে ৭-১০ সেন্টি মিটার উচু হয়)।

বীজ বপন
বোরো ধানের অঙ্কুরিত বীজ বোনার সময় একটু জোর দিয়ে বেডে ফেলতে হবে যাতে বীজগুলো কাদায় গেঁথে যায়।

বীজ জাগ দেয়া
অংকুরোদগমের জন্য যে পরিমাণ তাপের দরকার হয় সে পরিমাণ তাপ সৃষ্টি করাকে জাগ দেয়া বলা হয়। শুকনো বীজ একটানা ২২-২৪ ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রেখে তারপর তুলে সামান্য ছায়াযুক্ত স্থানে রেখে পানি বের করে দিতে হবে। মৌসুম ভেদে বীজের জাগ দেয়ার সময় ভিন্ন হয়। শীতকালে বোরো ধানে সাধারণত ৪৮-৭২ ঘণ্টাকাল জাগ দিতে হয়। এ ক্ষেত্রে হালকা রোদ এবং আলো-বাতাসপূর্ণ স্থানে মাটিতে পাটের তৈরি বস্তা বা খড় বিছিয়ে তার উপর ধানের বস্তা রেখে প্রয়োজনে সামান্য খড় বা ভেজা চট দিয়ে ঢেকে দেয়া যেতে পারে (তবে সেটি নির্ভর করে শীতের তীব্রতার ওপর এবং হাইব্রিড বীজ হলে সেটির নিয়ম অনুসরন করতে হবে)। এতে ধান বীজের ভ্রুণজাগরিত হয়, খোসা নরম হয়, ভ্রু মূলকে অংকুরিত করে ফলে বীজের ঘুম ভেংগে যায়। ভালোভাবে অংকুরিত বীজ সহজে বীজতলায় চারা উৎপাদন করতে পারে।

লেখক: প্রভাষক, কৃষিশিক্ষা বিভাগ, সিটি কলেজ, নাটোর।

This post has already been read 9127 times!

Check Also

বারি ও সুপ্রিম সীড কোম্পানি লি: এর মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর

গাজীপুর সংবাদদাতা: বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) এবং সুপ্রিম সীড কোম্পানি লিমিটেড এর মধ্যে এক …