Saturday , April 26 2025

প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও খুলনায় বেড়েছে চিংড়ি রপ্তানি

ফকির শহিদুল ইসলাম (খুলনা):
নানা প্রতিবন্ধকতা সত্বেও চলতি বছরের প্রথম তিনমাসে খুলনাঞ্চল থেকে ১১শ’ কোটি টাকার হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানি করা হয়েছে। চলতি বছরের এপ্রিলে প্রচন্ড তাপদাহে বাগদা চিংড়ির খামারে ভাইরাসে বড় ধরনের ক্ষতি হয়। আগস্ট পরবর্তী অতি বৃষ্টিতে মড়ক দেখা দেয় বড় আকারে। এ সকল সমস্যা থাকা সত্ত্বেও চলতি অর্থ বছরের প্রথম তিন মাসে ১১শ’ ৮৪ কোটি টাকার হিমায়িত চিংড়ি বিদেশে রপ্তানি হয়। গত অর্থ বছরের প্রথম তিন মাসে রপ্তানির পরিমান ছিল ১ হাজার ৮৩ কোটি টাকা। নভেম্বর থেকে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে দক্ষিণাঞ্চলের হিমায়িত বাগদা ও গলদার দাম প্রতি পাউন্ডে দেড় থেকে দু’ডলার কমেছে।

মৎস্য অধিদপ্তরের সূত্র জানায়, অপরিকল্পিতভাবে চাষের কারণে উন্নত বিশ্বের যেকোন দেশের তুলনায় দক্ষিণাঞ্চলে বাগদা ও গলদার উৎপাদন তুলনামূলকভাবে কম। প্রাকৃতিক দুর্যোগজনিত কারণে প্রায় প্রতি বছরই দক্ষিণাঞ্চলের চিংড়ি খামার মালিকরা ক্ষতিগ্রস্ত এবং ব্যাংকের কাছে ঋণ খেলাপী হচ্ছেন। গেল এপ্রিলের দাবদাহে গলদার খামারে বড় ধরণের ভাইরাস দেখা দেয়। মার্চ-এপ্রিলে ৩২ থেকে ৩৬ ডিগ্রি তাপমাত্রা ওঠানামা করে। ২০১৬ সালের। মার্চ-এপ্রিলে ৩৩ থেকে ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা অনুভূত হয়। এ বছরের জুন মাসে ৩৫৬ মিলিমিটার, জুলাই মাসে ৬৮৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। সেপ্টেম্বর মাসে স্বাভাবিকের চেয়ে ১৮ দিনে ২৫ মিলিমিটার বেশি এবং অক্টোবর মাসে স্বাভাবিকের চেয়ে ৮০ মিলিমিটার বেশি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে তিন দিনের শৈত্যপ্রবাহ এবং ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে তিন দিনের মৃদু শৈত্যপ্রবাহে বাগদা চিংড়িতে মড়ক দেখা দেয়।

মৎস্য পরিদর্শন ও মাননিয়ন্ত্রণ বিভাগের উপ-পরিচালক প্রফুল্ল কুমার সরকারের দেওয়া তথ্যমতে, এ বছরের জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ১১শ’ ৮৪ কোটি টাকা মূল্যের ১১ হাজার ৯৮৭ মেট্রিক টন হিমায়িত চিংড়ি বিদেশে রপ্তানি হয়। ২০১৬ সালের জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ১ হাজার ৮৩ কোটি টাকা মূল্যের ১২ হাজার ৭৮২ মেট্রিক টন চিংড়ি রপ্তানি হয়। খুলনাঞ্চলের ৪৩টি হিমায়িত খাদ্য প্রস্তুকতকারী প্রতিষ্ঠান বিদেশে রপ্তানি করছে। রপ্তানিকৃত পণ্যের মধ্যে ৮৩ শতাংশ ইউরোপীয় ইউনিয়নে রপ্তানি হয়।

সূত্র আরও জানায়, মাত্রাতিরিক্ত ক্ষতিকারক ব্যাক্টেরিয়া থাকায় দু’টি হিমায়িত খাদ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানকে র‌্যাপিড এ্যালার্ট (সতর্ক বার্তা) দেওয়া হয়েছে।হিমায়িত খাদ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান মডার্ণ সী ফুড ইন্ডাস্ট্রিজের ম্যানেজার (বিক্রয়) সাইফুদ্দিন তনু জানান, বেলজিয়াম, জার্মান, ফ্রান্স ও নেদারল্যান্ডে সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হচ্ছে। প্রকারভেদে হিমায়িত বাগদার দাম নিম্নমুখি। আগস্ট-সেপ্টেম্বরের তুলনায় প্রতি পাউন্ডে দেড় থেকে দু’ডলার দাম কমেছে। ইউকেতে গলদা রপ্তানি ৭০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। অসাধু ব্যবসায়ীদের চাতুরতার করণে এবং সেখানকার মুদ্রার মান নিম্নমুখি হওয়ায় রপ্তানির পরিমাণ কমেছে।

ন্যাশনাল সী ফুডের প্রতিনিধি জানান, এক পাউন্ড ওজনের ৫ পিস হিমায়িত বাগদা চার মাসে আগে ১৩ ডলার মূল্যে বিক্রি হয়েছে। এখনকার মূল্য ১১ ডলার। এ সত্ত্বেও ন্যাশনাল সী ফুড তিন মাসে ৩০ কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি করেছে।

উল্লেখ্য, খুলনা জেলায় এ মৌসুমে ২০ হাজার ৭০৬ হেক্টর জমিতে গলদা এবং ৩৬ হাজার হেক্টর জমিতে বাগদার উৎপাদন হয়েছে।

This post has already been read 4518 times!

Check Also

কক্সবাজারে আধুনিক ফিশ ল্যান্ডিং সেন্টার: সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত

কক্সবাজার সংবাদদাতা : মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মৎস্য রপ্তানির হার …