প্রায় এক মাস আগ থেকেই প্রচার প্রচারণা শুরু করলাম। See Bangladesh এর ২য় সাজেক ট্যুর। বাসের টিকেট, রির্সোট, চান্দের গাড়ী ও সাজেকে খাওয়ার অর্ডারও আগে থেকে দেয়া ছিল।
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ ১৬ নভেম্বর আসলো। আমরা See Bangladesh-এর মাধ্যমে নির্দিষ্ট তারিখে (১৬ নভেম্বর, বৃহষ্পতিবার) রাত সাড়ে দশটার সময় একটি বাস ও রাত ১১ টায় আরেকটি বাস খাগড়াছড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। যাবার পথে আমরা অনেক মজা করলাম। পথে কুমিল্লার জমজম হোটেলে যাত্রা বিরতি হলো। সবাই নাস্তা করলাম।
ভোর ৫ টায় আমরা খাগড়াছড়ির শাপলা চত্ত্বরে পৌছালাম। ভোরে বাস থেকেই খাগড়াছড়ির পাহাড়ের প্রকৃতির রূপ দেখলাম। প্রকৃতি এত সুন্দররূপে সাজানো তা নিজ চোখে না দেখলে বুঝা সত্যিই দুষ্কর! খাগড়াছড়িতে নেমেই চান্দের গাড়ীতে করে (আগেই রেডি করা ছিল) দিঘিনালায় গেলাম। সেখানে সকালবেলার নাস্তা করলাম। তারপর See Bangladesh এর টি-শার্ট দিলো। আমরা সবাই টি-শার্ট পরলাম। এবার চান্দের গাড়ীতে করে সাজেকের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।
একসাথে ৪ টা গাড়ী চলা শুরু করলো। এ এক অন্য রকম অনুভুতি। আমরা ছেলেরা চান্দের গাড়ির ছাদে উঠলাম। কারণ, সাজেকে যাওয়ার সময় ছাদে না উঠলে মজাই থাকে না। আমরা ছাদ থেকেই গান গাওয়া সেলফি তোলা শুরু করলাম। আহ্ কি দারুণ ভ্রমণ। সত্যিই অভিভূত; মুগ্ধ হয়েছি প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য দেখে। পথের দুইপাশে সবুজেঘেরা অনন্য আর আমরা। যারা রোমান্টিক না তারাও রোমান্টিক হতে বাধ্য এমন পরিবেশে আমি নিশ্চিত। উঁচু নিচু পাহাড়ি রাস্তা পার হতে হতে মন বিমোহিত হচ্ছিল বারবার। বাঘাইহাট চেক পোষ্টে গাড়ী থামলো আমরা সবাই নেমে পড়লাম। কেউ ছবি তুলছে, কেউ ডাব খাচ্ছে, কেউ আখ খাচ্ছে খুব আনন্দের সহিত। অবশেষে মজা করতে করতে আর সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে স্বপ্নপুরী মেঘের দেশ সাজেকে পৌছালাম। পূর্ব নির্ধারিত কাজলং রির্সোটে পৌছালাম। পুরো রির্সোটই আমাদের ১৪টা রুমে আমরা ছিলাম। সবাইকে রুম বন্টন করে দিলাম। হোটেলে উঠে ফ্রেশ হয়ে সবাই খাওয়া দাওয়া করলাম। হঠাৎ দেখি বৃষ্টি শুরু হলো। অনেকে মন খারাপ হয়ে গেল। কিন্তু আমি মনে মনে খুব খুশি হলাম। কারণ সাজেকে আমার খুব ইচ্ছা ছিল বৃষ্টিতে সাজেক যাবো তা পুরন হলো।
মেঘের মধ্যে হারিয়ে যাওয়া: বিকালে বৃষ্টি থামার পর সবাই হেলিপ্যাডি গেলাম। মেঘের সাথে গ্রুপ ছবি তুললাম। হঠাৎ দেখি পুরো সাজেকে মেঘে ডেকে গেল। এ এক অপরুপ দৃশ্য। না দেখলে বুঝা যাবে না। অসাধারণ পরিবেশ। কিছুক্ষণ পর আবার মেঘ চলে গেল। সন্ধ্যার পর আমরা একটা হোটেলে কফি খেলাম। কিছুক্ষণ আড্ডাও দিলাম।
রাতের সাজেক ও বারবিকিউ : আগেই পরিকল্পনা ছিল সাজেকে বারবিকিউ করবো। রাত ৮ টায় সবাই হোটেলের সামনে চলে আসছে। একসাথে বসে সবাই বারবিকিউ তৈরীর সময় ছিল। খুব মজা করছে আড্ডাও দিছে। বারবিকিউ তৈরীর পর সবাই একসাথে মজা করে খেলাম।
রাতের আড্ডা, লটারী ও দলবেধে গান গাওয়া : খাওয়া শেষ করে সবাই কাজলং কটেজে চলে আসলাম। তারপর কটেজের বারান্দায় সবাই দলবেধে বসে পড়লাম। এবার আড্ডা দেয়ার পালা। শুরু হলো গিটার বাজিয়ে গান। গানের এক ফাকেঁ লটারীর আয়োজন হলো। ৪৮ জনের নাম লিখে ছোট বাচ্চাদের দিয়ে লটারী করালাম। ১১টি মগ পুরুস্কার দেয়া হলো। সবাই খুব আগ্রহ করে দেখছিল তাদের নাম উঠে কিনা? যাক ভাগ্যবান ১১জনকে পুরুস্কার দেয়া হলো। এরপর সবাই গান চললো রাত ২টা পযর্ন্ত। সাজেকের প্রথমদিন এভাবেই কেটে গেল।
সকালে মেঘ দেখতে ভোরে উঠা : রাতেই সবাইকে বলে দেয়া হয়েছে। সকালের সূর্যোদয় দেখতে হলে ভোর ৫টায় উঠতে হবে। তাই সবাই ভোর পাঁচটায় উঠে হ্যালিপ্যাড গেলাম সূর্যদোয় দেখার জন্য। সেখানে গিয়ে আমরা মেঘের উপরে ভেসে বেড়াচ্ছি এমনই মনে হল। দিগন্ত বিস্তৃত মেঘ-যতদূর দৃষ্টি যায় শুধু মেঘ আর মেঘ। তবে কালো মেঘের আড়ালে সূর্যটা হারিয়ে গিয়েছিল তাই সূর্যদোয় দেখা হলোনা। তাতে কি মেঘের রাজ্যেতো হারিয়ে যেতে পেরেছি। মহান আল্লাহ্তায়ালার সৃষ্টির রহস্য এতবেশি বিমোহিত করেছিল সত্যিই ভালো না লেগে উপায় নেই। প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে গেলাম আর ছবি তুললাম। পুরো হেলিপ্যাড See Bangladesh এর দখলে। সবাই একসাথে গ্রুপ ছবি তুললাম।
খাগড়াছড়ির আলু টিলা ও ঝুলন্ত ব্রীজ : সবকিছু ঘুচিয়ে সাজেক থেকে খাগড়াছড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। আবার সেই আকাবাকা পথ, উচুনিচু পথ। পথে হাজাছড়ি ঝর্নাতে গেলাম। কয়েকজন ঝর্ণার পানিতে গোসল করলো। গ্রুপ ছবিও তুললাম। খাগড়াছড়ি এসে দুপুরের খাবার গেলাম মনটানা হোটেলে। দারুন খাবার বিশেষ করে হাঁসের মাংস। অসাধারণ। যারা খাগড়াছড়ি যাবেন মনটানা হোটেলে হাঁসের মাংস অবশ্যই খাবেন। আলুটিলা গুহা দেখতে গেলাম। আলু টিলায় গিয়ে গুহাতে প্রবেশ করলাম। অনেকে ভয়ে ফেরত আসলো। অসাধারণ অনুভুতি। সবাই হাতে মশাল নিয়ে গেলাম। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যও মনকে ছুঁয়ে দিয়েছিল। এরপর গেলাম খাগড়াছড়ির ঝুলন্ত ব্রিজে। ঝুলন্ত ব্রিজটাও দারুন লেগেছে। যদিও দিনের বেলা আসতে পারিনি আমরা আসতে আসতে সন্ধ্যা হয়ে গেল।
ঢাকায় ফেরত : ঝুলন্ত ব্রিজ থেকে ফিরে আমরা একটা হোটেলে কিছুক্ষণ রেস্ট নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম রাত্রিরকোলে সমস্ত ক্লান্তি ঢেলে দিয়ে ঘুমাতে ঘুমাতে। প্রাপ্তি ছিল অনেক যা এককথায় লিখে প্রকাশ করা যায় না। ওখানে গিয়ে অনেকের সাথে পরিচয় হলো। অনেকের হাসিমাখা চোখ জ্বলজ্বল করছিল আবার যারা প্রিয় মানুষকে নিতে পারেনি তাদের মধ্যে কিছুটা শূন্যটা দেখেছি। অনেক ভালো ভালো বাবাকে দেখেছি সন্তানের যত্ন নিতে। মনটা ভরে গেল। অবশেষে গন্তব্যস্হলে পৌঁছালাম আলহামদুলিল্লাহ্। সবাইকে ছেড়ে আসতে বেশ খারাপ লাগছিল।
যাইহোক, সবকিছু ভালই ভালই হয়েছে। ধন্যবাদ জানাই অক্লান্ত পরিশ্রম করে যারা আমাদের আনন্দদানের ব্যবস্থা করেছে। এ ট্যুরে সবচেয়ে পরিশ্রম করেছে এনএম আজিজুল হককে ধন্যবাদ এবং ট্যুরের সকল সদস্যকে।
- (মোহাম্মদ শাহ জাহান)
সহযোগিতায়-জান্নাতুল ফেরদৌস শিপরা