মো. খোরশেদ আলম জুয়েল : বাংলাদেশে প্রচলিত একটি কথা আছে, ‘এই দেশে কোন জিনিসের দাম একবার বাড়লে আর কমেনা’! প্রচলিত এ কথাটি ভাঙার রেকর্ড গড়তে যাচ্ছে ডিম। কারণ, কয়েক মাস ধরে কমেই চলছে ডিমের দাম। মাঝে কিছুটা ভালো হলেও আবার শুরু হয়েছে কমতির ধারা। ওদিকে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছেন ক্ষুদ্র খামারিরা। কারণ, লোকসানের বোঝা বেশি দিন বয়ে নিয়ে চলা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়।
আমাদের দেশে উৎপাদক বা পাইকারী পর্যায়ে হঠাৎ করে কোন পণ্যের দাম কমলেও খুচরা বাজারে এর অনেক সময় পড়েনা। কিন্তু গেল কয়েকদিন ধরে হঠাৎ করে খুচরা পর্যায়ে ডিমের দাম ডজনপ্রতি প্রায় ২০ টাকা কমে গেছে। এক সপ্তাহ আগেও বাজারভেদে যে ডিমের দাম ছিল ৮৫ থেকে ৯০ টাকা ডজন বর্তমানে সেটি বিক্রি হচ্ছে ৬৫-৭০ টাকা। খামারি বা উৎপাদক পর্যায়ে এ অবস্থা আরো বেশি করুণ। খুচরা বাজারে সাদা কিংবা লাল ডিমের দামের পার্থক্য খুব একটা হেরফের না হলেও খামারি পর্যায়ে শ’ প্রতি ৫০-৬০ টাকা পার্থক্য হয়।
বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ব সংস্থা এবং পোলট্রি শিল্প নিয়ে নিবিড়ভাবে কাজ করা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিগত ৫ বছরের বাজার পর্যালোচনা করে দেখা যায় বর্তমানে সবচেয়ে কম দামে বিক্রি হচ্ছে ডিম। এতে করে দেশের বিভিন্ন জায়গায় হতাশ হয়ে পড়েছেন ক্ষুদ্র খামারি ও ব্যবসায়ীরা।
পোলট্রি নিয়ে কাজ করা কৃষিভিত্তিক ম্যাগাজিন ‘মাসিক ফার্মহাউজ’ বিগত পাঁচ বছরের বাজার তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০১২ সনে যেখানে লাল ডিমের পাইকারী দাম ছিল শ’প্রতি ৫৮০-৬০০ টাকা, বর্তমানে (১১ ডিসেম্বর ২০১৭) সেটি ৫২০-৫৩০ টাকা। প্রসঙ্গত, প্রান্তিক খামারি পর্যায়ে এটি আরো কম। নিচে বিগত ছয় বছরের (২০১২-২০১৭ সন, ডিসেম্বর মাস) দেশে পোলট্রি ডিমের দামের পরিসংখ্যান টেবিল আকারে দেয়া হলো-
এ প্রসঙ্গে গাজীপুর সদর উপজেলার লেয়ার খামারি সোহাগ পোলট্রি’র স্বত্বাধিকারী তোফাজ্জ্বল হোসেন লিটন জানান, ‘কয়েক মাস ধরে ডিমের দাম টানা পতনের কারণে আমাদের এখন পথে বসার উপক্রম হয়েছে। ডিমের দামতো কমছেই উপরন্তু বিক্রি করতেও কস্ট হচ্ছে। আজকে আমার খামারে ২০ হাজার ডিম পড়ে আছে অথচ ক্রেতার অভাবে বিক্রি করতে পারছিনা। এভাবে চলতে থাকলে দেউলিয়া হয়ে পথে ঘুরতে হবে।
পোলট্রি খামারীরা জানান, বর্তমানে প্রতিটি ডিম উৎপাদন করতে খরচ হচ্ছে সাড়ে ৫ থেকে ৬ টাকা। কিন্তু পাইকারী আড়ৎদারেরা সর্বনিম্ন দামে ডিম ক্রয় করে তারা ঠিকই লাভ করছেন। ডিমের বাজার যখন খারাপ হয় তখন তারা সুযোগ নেয়।