মো. খোরশেদ আলম জুয়েল: শুধু মানুষ নয়, পোলট্রিতেও এন্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা হ্রাস পাচ্ছে। গত জুলাই মাসে এনভায়রনমেন্টাল হেলথ পারসপেক্টিভ নামক একটি সাময়িকীতে এ-সংক্রান্ত একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ভারতের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের পাঞ্জাব প্রদেশে ১৮টি মুরগি খামারের প্রায় ৫০ হাজার মুরগির ওপর গবেষণা চালানো হয়। সেখানে দেখা যায়, দুই-তৃতীয়াংশ মুরগিতে ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি রয়েছে। এ ব্যাকটেরিয়া বিশেষ এক ধরনের এনজাইম তৈরি করে, যা এক্সটেন্ডেড-স্পেকট্রাম বিটা-ল্যাকটামেজ বা ইএসবিএল নামে পরিচিত। এটি পেনিসিলিন ও সেফালোসপোরিনভিত্তিক অ্যান্টিবায়োটিক ধ্বংস করতে পারে। পরীক্ষিত মুরগিগুলোর ৮৭ শতাংশই নানা ধরনের জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত ছিল।
গত বছর বার্তা সংস্থা ব্লুমবার্গের একটি তদন্ত প্রতিবেদন জানিয়েছিল, খামারগুলোয় রোগ প্রতিরোধের অংশ হিসেবে নিয়মিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা ডব্লিউএইচওর শ্রেণীবদ্ধকৃত ওষুধ ব্যবহার করছে ভারতের বৃহত্তম পোলট্রি মাংস সরবরাহকারী কোম্পানিগুলো। সর্বশেষ গবেষণায় খাদ্য সরবরাহে এর প্রভাব তুলে ধরা হয়েছে।
নয়াদিল্লির সেন্টার ফর ডিজিজ ডায়নামিকস, ইকোনমিকস অ্যান্ড পলিসির পরিচালক এবং গবেষণা প্রতিবেদনটির লেখক রমণ লক্ষ্মণারায়ণ এক বিবৃতিতে বলেন, এ গবেষণা কেবল ভারতের জন্যই নয় বরং বিশ্বব্যাপী এর গুরুতর প্রভাব রয়েছে। অসুস্থ পশুপাখির চিকিৎসা ব্যতীত মানব খাদ্যশৃঙ্খল থেকে আমাদেরকে অবশ্যই অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার বাদ দিতে হবে।
বিশ্বব্যাপী মানবশরীরে যে পরিমাণ অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করা হয়, তার চেয়েও দ্বিগুণ অ্যান্টিবায়োটিক দেয়া হয় পশুপ্রাণীদের। কিন্তু এসব অ্যান্টিবায়োটিক সব ধরনের ব্যাকটেরিয়া মেরে ফেলার জন্য যথেষ্ট শক্তিশালী নয়। ফলে জীবাণুগুলো কেবল টিকে থাকছে তা নয়, বরং তা পশুপাখির শরীরে ছড়িয়ে পড়ছে। পশুচিকিৎসক এবং চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেন, রোগ প্রতিরোধের এ অনুশীলনের কারণে পরবর্তীতে কোনো ওষুধই আর জীবাণুগুলোর বিরুদ্ধে কাজ করছে না।
এ গবেষণায় অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার বিষয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে পাঞ্জাবের ১৬টি ফার্ম জানায়, তারা অসুস্থ মুরগির চিকিৎসাও রোগ যাতে ছড়িয়ে না পড়ে, সেজন্য অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করছে। আর এর মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ ফার্ম মুরগির বাচ্চার জন্য অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করছে বলে জানায়।
গবেষণায় লক্ষ্মণারায়ণ এবং তার সহকর্মীরা জানান, পরীক্ষিত খামারগুলোয় দেখা গেছে, গবাদিপশুর বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করতে তারা যে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল ব্যবহার করছে, তাতে জীবাণুগুলো আরো বেশি অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে উঠছে। মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য এটা হুমকির কারণ হতে পারে। লক্ষ্মণারায়ণ বলেন, জীবাণুগুলো অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে ওঠায় তা বাস্তুসংস্থানে জটিল সমস্যা সৃষ্টি করছে।
উল্লেখ্য, চীন ও ভারতের মতো উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোয় কৃষি ব্যবস্থা পুরোপুরি অ্যান্টিবায়োটিক-নির্ভর হয়ে পড়ছে। খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন এবং আয় বৃদ্ধির কারণে বর্ধিত প্রোটিনের চাহিদা পূরণে এসব দেশে ক্রমেই অ্যান্টিবায়োটিক-নির্ভর চাষাবাদ বাড়ছে। অন্যান্য মাংসের তুলনায় সস্তা ও ধর্মীয় নিষেধাজ্ঞা বা সাংস্কৃতিক কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই বিধায় ভারতে মুরগির চাহিদা অনেক বেশি। যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগের দেয়া তথ্যানুযায়ী, ২০১৩ সালের পর থেকে দেশটিতে মুরগির মাংসের চাহিদা ৩০ শতাংশের বেশি বেড়েছে। সেখানে বলা হয়, ২০৩০ সাল নাগাদ মুরগির চাহিদা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় ভারতের কিছু কিছু জায়গায় গবাদিপশুতে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের পরিমাণ বাড়বে চার গুণেরও বেশি।
সূত্র : ব্লুমবার্গ