সোহেল রানা: জামালপুর জেলার সরিষাবাডি উপজেলার একজন ক্ষুদ্র পোল্ট্রি ব্যবসায়ী। মাত্র দুই হাজার মুরগি দিয়ে শুরু করেন তার লেয়ার পোল্ট্রি ব্যবসা। কিন্তু লোকসানের পরিমাণ গুণতে গুণতে সেই ব্যবসা এখন গুটিয়ে নিয়ে এসেছেন। খামারি মো. নুরুল হাসান জানালেন, খামার থেকে প্রতিদিন ১২ থেকে ১৩শ’ ডিম উৎপাদন হয়েছে। কিন্তু মুরগির খাবারে যা ব্যয় হয়, ডিম বিক্রি করে সেই টাকাই ওঠে না। ওষুধ ও কর্মচারীর বেতনসহ আনুষঙ্গিক খরচ তো আলাদা। মূলত ডিমের স্বল্পমূল্যে এই ব্যবসায়ীকে অনেকটা নিঃস্ব হয়েই ব্যবসা গুটাতে হয়েছে।
হাসানের মতো দেশে বর্তমানে এমন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর সংখ্যা নেহায়েত কম নয়। অস্বাভাবিক হারে ডিমের মূল্য কমে যাওয়ার কারণে হাজার হাজার খুদে পোল্ট্রি খামারি সর্বস্বান্ত হতে চলেছেন। একদিকে ডিমের দাম কমেছে অস্বাভাবিকভাবে। অন্যদিকে গত বাজেটের পর মুরগির খাবারের দাম বেড়েছে। ফলে খামারিরা পড়েছেন বিপাকে।
গত ৮- ১০ মাস ধরেই চলছে এই অবস্থা। ইতোমধ্যে অনেক ব্যবসায়ী পথে বসেছেন। বাকিরাও চরম অনিশ্চয়তায় দিন কাটাচ্ছেন। এই অবস্থা চলতে থাকলে নতুন কোন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী পোল্ট্রি খাতে বিনিয়োগ করবেন না এবং এতে করে আগামী কিছুদিনের মধ্যে দেশে ডিমের সঙ্কট দেখা দেবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।
একাধিক পোল্ট্রি খামারির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত কয়েকদিনে খামারিদের ডিম বিক্রি করতে হচ্ছে সাড়ে চার টাকা থেকে পাঁচ টাকায়। খামার থেকে পাইকারি ব্যবসায়ী হয়ে খুচরা ব্যবসায়ীরা এলাকাভেদে সেই ডিম বিক্রি করছেন প্রতি পিস ছয় থেকে সাত টাকা। অথচ বিনিয়োগের হিসাব ধরে প্রতি ডিমের উৎপাদন ব্যয় হচ্ছে প্রায় সাড়ে পাঁচ থেকে ছয় টাকা। একজন খামারি প্রতি ডিমে লোকসান গুনছেন এক থেকে দেড় টাকা। টানা কয়েক মাসের এই পরিস্থিতিতে খামারিরা এখন নিঃস্ব হয়ে পথে বসার উপক্রম। বন্ধ হয়ে যাচ্ছে দেশের অনেক ক্ষুদ্র খামার।
ক্ষুদ্র খামারিরা বলছেন, গত কয়েক মাসে একদিকে ডিমের দাম কমেছে, অন্যদিকে চলতি বাজেটে নতুন ট্যাক্সের কারণে বেড়েছে মুরগির খাবারের দাম, ওষুধের দাম, কর্মচারীদের বেতনসহ আনুষঙ্গিক সব খরচ তো দিন দিন বাড়ছেই। এমন অবস্থায় ক্ষুদ্র পোল্ট্রি ব্যবসায়ীদের টিকে থাকার কোন সুযোগই নাই।
আড়তদাররা বলছেন, চাহিদার চেয়ে বাজারে ডিমের সরবরাহ বেশি। তাই দাম ওঠানামার মধ্যে আছে। ডিমের দাম অস্বাভাবিক হারে কমে যাওয়ায় সম্প্রতি রাজশাহীতে মহাসড়কে বিপুল পরিমাণ ডিম ভেঙ্গে প্রতিবাদ জানিয়েছেন পোল্ট্রি খামারিরা। মুরগির বাচ্চা, খাবার ও ওষুধের দাম কমানোর দাবিতে তারা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভও করেন।
পোল্ট্রি শিল্প বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় অর্থনৈতিক খাত হিসেবে বলা হয়। দেশে প্রাণিজাত প্রোটিনের বড় যোগানদাতা পোল্ট্রি শিল্প। তথ্য অনুযায়ী, ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ প্রোটিনেরই যোগান আসে পোল্ট্রি থেকে। ২০০৬-০৭ অর্থবছরে ডিম উৎপাদন ছিল ৫৩৭ কোটি। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক হাজার ১৯১ কোটিতে। দেশের চাহিদার নিরিখে ২০২১ সালের মধ্যে এ খাতে দ্বিগুণ বিনিয়োগ করতে চান পোল্ট্রি ব্যবসায়ীরা। নানা সঙ্কট ও সমস্যা এ খাতের বিনিয়োগের প্রধান বাধা বলে মনে করছেন এ খাতের উদ্যোক্তারা। বিদেশী পুঁজি আসার কারণে দেশী ব্যবসায়ীদের মধ্যে এক ধরনের অসম প্রতিযোগিতা চলছে।
জানা যায়, পোল্ট্রির বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ হলো ডিমের খামারমূল্য, একদিন বয়সী বাচ্চা এবং পোল্ট্রি খাবার। কোন ক্ষেত্রেই সংশ্লিষ্ট বিভাগের কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। এ সংক্রান্ত নীতিমালা থাকলেও তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না।
আমি আমার অভিজ্ঞতার আলোকে এই ওয়েবসাইটে লিখতে চাই। এডমিন পারমিশন প্লিজ।
you are most welcome. Please send us your write up to: jewel.idea@gmail.com