ফকির শহিদুল ইসলাম (খুলনা):
মন্থরগতিতে চলছে প্রাণিসম্পদে ডিপ্লোমা কোর্সের দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে খুলনায় ইনস্টিটিউট অব লাইভস্টক সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি প্রকল্পের কাজ। প্রায় ৩৫ কোটি টাকা ব্যায়ের এ প্রকল্প গ্রহণের সাড়ে ৩ বছর পার হলেও এখনো দৃশ্যমান হয়নি খুলনার ইনস্টিটিউট অব লাইভস্টক সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি (আইএলএসটি) প্রকল্পটি। খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার শাহপুরের নির্মাণাধীন ইনস্টিটিউট অব লাইভস্টক সায়েন্স এন্ড টেকনোলজির (আইএলএসটি) প্রকল্পটির কাজের গতিতে হতাশ সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রাণিসম্পদ সেক্টরের সাথে জড়িতরা। শুধুমাত্র জমি অধিগ্রহণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে প্রকল্পটির কার্যক্রম। এ অবস্থায় নির্দিষ্ট সময়ে ওই প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত হওয়া নিয়েও শঙ্কা তৈরি হয়েছে। অবশ্য সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মন্ত্রণালয় থেকে অর্থ ছাড় না হওয়ায় কাজ যথাসময়ে শুরু করা সম্ভব হয়নি।
খুলনা জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে, কৃষিভিত্তিক অর্থনীতিতে প্রাণিসম্পদ সাব সেক্টরের অবদান দিনকে দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। খাদ্য নিরাপত্তা ও জনস্বাস্থ্য রক্ষায় ডিম, দুধ ও মাংসের গুরুত্ব অপরিসীম। খাদ্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রে প্রাণিজ আমিষ বিশেষ করে ডিম, দুধ এবং মাংসের অনেক ঘাটতি রয়েছে। এই ঘাটতি পূরণে আইএলএসটি হতে প্রাণিসম্পদের ওপর ডিপ্লোমাসহ সমমানের অন্যান্য কোর্সের মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে ২০১৪ সালের জুলাই মাসে জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার শাহপুরে ইনস্টিটিউট অব লাইভস্টক সায়েন্স এন্ড টেকনোলজির (আইএলএসটি) নির্মাণ প্রকল্পের মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু করে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণায়ের আওতাধীন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। ইতিমধ্যে এ প্রকল্পের জন্য তিন একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। ৭০ লাখ ১৭ হাজার টাকা জমি অধিগ্রহণের মূল্য বাবদ পরিশোধ করা হয়েছে ।
নির্মিতব্য এ প্রকল্পে থাকছে একাডেমিক এবং প্রশাসনিক ভবন, ভেটোরিনারী হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক ল্যাবরেটরী, অডিটরিয়াম, ক্যাফেটেরিয়া এবং শিক্ষক ডরমেটরি, চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের জন্য ডরমেটরী, ছোট প্রাণি এবং বড় প্রাণির জন্য ফার্ম বিল্ডিং প্রিন্সিপ্যাল কোয়াটার, ছাত্র হোস্টেল ও ছাত্রী হোস্টেল নির্মাণ এবং বাকী জায়গায় রাস্তা ও খেলার মাঠ নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়া ভবন নির্মাণের পাশাপাশি লাইভস্টক ডিপ্লোমা কোর্স কারিকুলাম প্রণয়ন, কারিকুলাম অনুযায়ী বই তৈরি করে প্রিন্টিং করা এবং কোর্স চালুর কার্যক্রম রয়েছে এ প্রকল্পে।
ফলে খুলনাঞ্চলের কৃষক ও খামারীদের রোগমুক্ত, সুস্থ গবাদি পশু, হাঁস-মুরগী উৎপাদনে পরামর্শসহ অন্যান্য সেবা প্রদান করা সম্ভব হবে। দেশে খাদ্য নিরাপত্তা ও জনস্বাস্থ্য রক্ষায় ডিম, দুধ ও মাংসের উৎপাদন বৃদ্ধিসহ কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে অনন্য অবদান রাখবে। শিশু খাদ্য প্রাপ্তি ও নিশ্চিত হবে, নারীরা গবাদি প্রাণি ও হাঁস-মুরগী লালন-পালনের মাধ্যমে কর্মসংস্থান ও আয় বৃদ্ধির পাশাপাশি তাদের জীবনমান উন্নয়ন করতে সহায়ক ভুমিকা পালন করবে। কিন্তু প্রকল্পটি ২০১৪ সালের ১ জুলাই থেকে শুরু হলেও, জমি অধিগ্রহণ করে পাইল নির্মাণ শুরু করতেই চলে গেছে প্রায় সাড়ে তিন বছর। ভবন নির্মাণ কাজ এখনও দৃশ্যমান করা সম্ভব হয়নি। শুধুমাত্র জমি অধিগ্রহণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে এ প্রকল্পের কার্যক্রম। এ অবস্থায় নির্দিষ্ট সময়ে ওই প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়া নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
অবশ্য প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলেন, প্রকল্পের কাজের জন্য বুয়েটে পূণরায় মাটি পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্টের ওপরই নির্ভর করছে প্রকল্পের পরবর্তী কাজের অগ্রগতি। যথাসময়ে মন্ত্রণালয় থেকে প্রয়োজনীয় অর্থের ছাড় মিলছে না। যার ফলে জমি সংক্রান্ত জটিলতায় কাজটি শুরু করতে বিলম্ব হচ্ছে।
জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার সৈয়দ মো আনোয়ার উল ইসলাম বলেন, প্রকল্পের কাজ শুরু করতে কিছু জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু সব ধরনের জটিলতা দূর করে কাজ শুরুর জন্য নিরন্তর চেষ্টা চলছে। মঙ্গলবার একটি টিম প্রকল্পের নির্ধারিত জমি পরিদর্শন করেছেন।