বৃহস্পতিবার , অক্টোবর ৩১ ২০২৪

বৈচিত্র্যপূর্ণ বিভিন্ন গাছের গবেষক ড. মো. মনিরুল ইসলাম

ফকির শহিদুল ইসলাম (খুলনা): গবেষণার কাজে একান্ত ইচ্ছা ও নিরন্তর প্রচেষ্টা অপরিহার্য। আর এটাই হতে পারে সাফল্যের সোপান। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্রোটেকনোলজি ডিসিপ্লিনের প্রফেসর ড. মো. মনিরুল ইসলাম সে কথাই প্রমাণ করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতায় প্রবেশের পর থেকেই তিনি গবেষণার বিষয়টি নিয়ে ভাবতেন। নিজ গবেষণাগারে শিক্ষার্থীদের নিয়ে গবেষণার কাজ করাটাই তাঁর স্বপ্ন হয়ে ওঠে। একটি প্রকল্পের কাজ লাভের পর সে অর্থে তিনি গড়ে তোলেন ল্যাবরেটরি। বর্তমানে এ ল্যাবটি আন্তর্জাতিকমানের। সেখানেই তিনি কাজ করছেন দীর্ঘদিন ধরে। বিশেষ করে টিস্যু কালচার নিয়ে তাঁর একান্ত আগ্রহ থেকেই তিনি বিভিন্ন ফল ও বৃক্ষের টিস্যু কালচার নিয়ে গবেষণায় ব্রত হন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় একাডেমিক ভবনের সামনের এক চিলতে জায়গার ওপর গ্রিনহাউজ করে শুরু করেন মাঠ গবেষণা। এরপর জারবেরা ফুল চাষ প্রকল্পের সূত্র ধরেই তাঁর মাঠগবেষণাগার প্রতিষ্ঠার সূচনা। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দেওয়া প্রথমত এককাঠা জমির ওপর এই জারবেরা ফুল চাষে সাফল্যের পর তিনি আরও অনুপ্রাণিত হন। একদিকে উন্নতমানের ল্যারেটরি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টায় সাফল্য, অন্যদিকে মাঠগবেষণাগার স্থাপন। এ দুইই তাঁকে ধীরে ধীরে আকৃষ্ট করে গবেষণায়। কয়েক কাঠা সীমিত জমিতে এখন তিনি গড়ে তুলেছেন সমৃদ্ধ মাঠগবেষণাগার। এটি প্রায় অসম্ভবকে সম্ভব করে তোলার গল্প।

জোবা মাটি, নীচু জায়গা যেখানে এ ধরনের মাঠগবেষণাগার গড়ে তোলা প্রায় অসম্ভব ছিলো। কিন্ত তিনি হাল ছাড়েননি। ছোট ছোট পুকুরের মতো গর্ত করে সেখান থেকে মাটি তুলে, ছোট ভেড়ি করে তার ওপরই লাগান যতো সব নাম না জানা বিদেশি ফল, ফুল ও মসলার গাছ। প্রথমত জারবেরা ফুলের চাষ করে তিনি কয়েকটি নতুন জাত সৃষ্টির সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে । এ সাফল্যের পর তিনি উন্নতমানের সৌদি খেজুর, কাজু বাদাম, সুস্বাদু মাল্টা ও ওটের পরীক্ষামূলক চাষেও সফল হয়েছেন। বীজ দিয়ে সৌদি খেজুরের চারা উৎপাদন ও তা লাগানোর পর খেজুরের কাদি আসে। খেজুরের পার্শ্বচারা (কুশি) দিয়েও সৌদি খেজুর চাষে সফলতা আসে। কাজু বাদামও ধরেছে নতুন গাছে। এছাড়াও প্যাসন ফলসহ আরও কয়েকটি নতুন ফলের চাষও শুরু হয়েছে। তাতেও ফল উৎপাদনে সাফল্য এসেছে।

এখন তাঁর মাঠগবেষণাগারে কয়েক প্রকারের মিষ্টি কমলা, মাল্টা শোভা পাচ্ছে। তিনি জোড় কলম করে এর চাষ সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিয়েছেন। এসব কমলার মধ্যে আছে (নাগপুরী), কমলা (মিষ্টি), কমলা (ভ্যারাইগেটেড), কমলা (চাইনিজ)। অন্যান্য মসলা ও ফলের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে দারুচিনি, ড্রাগন ফল, আম(ব্যানানা), পেয়ারা (থাই), আঙ্গুর (লাল), সফেদা (থাই), সফেদা (আফ্রিকান), সফেদা(ভ্যারাইগেটেড), লবঙ্গ, করমচা, চেরি (মালয়েশিয়া), ডালিম লেবু (চাইনিজ), অ্যারাবিয়ান ডুমুর (ত্বিণ), নাশপাতি, মিশ্রমশলা, কাজু বাদাম, সাওরসপ, নারকেল (ভিয়েতনাম), আপেল, লাল শরিফা, শরিফা (থাই), জাম (থাই), লটকন, আলুবোখারা, কারিপাতা, রামবুটান, জামরুল (বারমাসী), এলাচসহ আরও নাম না জানা ফল ফুল ওষুধিবৃক্ষ। আছে এলোভেরা, ডায়াবেটিস ও পুদিনাসহ আরও অনেক প্রকারের ওষুধির চারা।

তিনি জানান, এসব ফল ফুল ও শস্য চাষসহ আরও বিভিন্ন প্রজাতির ফল ফুল নিয়ে গবেষণা চলছে। টিস্যু কালচারের মাধ্যমে চারা উৎপাদনে আরও কিছু ফল ও ফসলের গবেষণা চলছে। কিন্তু প্রধান সমস্যা জায়গার স্বল্পতা। এছাড়া জলাবদ্ধতার হুমকিতো রয়েই গেছে। জলাবদ্ধতায় গত বছর জারবেরাসহ কয়েক জাতের ফুল ও ফলের কয়েক লাখ টাকার গবেষণা প্রকল্পের ক্ষতি হয়। তিনি বলেন একবার একটি গবেষণার কাজ ক্ষতিগ্রস্ত হলে পুরো এক বছর পিছিয়ে যেতে হয়। আন্ডার গ্রাজুয়েট ও মাস্টার্সের শিক্ষার্থীদের সেশনাল ও গবেষণার কাজও মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। তাদের শিক্ষা কোর্স সম্পন্ন করতে বিলম্ব হয়।

তিনি জানান, আমাদের উদ্যোগ ও স্পৃহা আছে। কিন্তু গবেষণা ফিল্ড, লোকবলের অভাব এবং জলাবদ্ধতা গবেষণার ক্ষেত্রে বড় অন্তরায়। বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রয়োজনীয় জমি পেলে তিনি মাঠ গবেষণাগারটি দেশের অন্যতম একটি সমৃদ্ধ করে গড়ে তুলতে চান। এখন তাঁর গবেষণার অন্যতম লক্ষ্য খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে নতুন কোনো ফল ফুল বা ফসলের জাত উদ্ভাবন ও তা ব্রান্ডিং।

তিনি প্রত্যাশা করেন সে দিন খুব কাছেই যে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উদ্ভাবন হবে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের আবহাওয়া ও জলবায়ু সহিষ্ণু নতুন নতুন জাতের ফসল। তিনি তাঁর এ কাজে এগ্রোটেকনোলজি ডিসিপ্লিনের শিক্ষক শিক্ষার্থীদের উৎসাহ ও প্রেরণা এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সহযোগিতার কথাও স্মরণ করেন। তিনি বলেন তাঁর মাঠগবেষণাগার তথা এগ্রাটেকনোলজি ডিসিপ্লিন দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলসহ দেশে কৃষি ক্ষেত্রে সমৃদ্ধিতে আরও অবদান রাখতে পারবে বলে তিনি দৃঢ় আশাবাদী।

This post has already been read 5309 times!

Check Also

বারি উদ্ভাবিত আনারসের লাড্ডু মেটাবে পুষ্টি চাহিদা

কৃষিবিদ ইফরান আল রাফি : বাংলাদেশের প্রধান ফলগুলোর মধ্যে পুষ্টিগুন সম্পন্ন আনারস অন্যতম। উৎপাদন মৌসুমে …