শুক্রবার , নভেম্বর ২২ ২০২৪

খাদ্যে ভেজাল কাউকে খুন করার চেয়েও বড় অপরাধ -চট্টগ্রাম ক্যাব নেতৃবৃন্দ

চট্টগ্রাম সংবাদদাতা: সকলের জন্য নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে উৎপাদক, খুচরা ও পাইকারী ব্যবসায়ী, ব্যবসার সাথে জড়িত সকল পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ভোক্তাদের সচেতন করা না হলে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ক্রেতাদের সম্রাট উপাধিতে ভুষিত হলেও দেশে বিক্রেতা ও ব্যবসায়ীরাই এখন যে কোন খাদ্য বা পণ্যের মুল চালিকা শক্তি। তারা যা বাজারজাত করবে সেটাই ভোক্তাদেরকে হজম করতে হয়।

যিনি খাদ্য-পণ্যের ব্যবসা করেন, তিনি অন্য পণ্যের ক্রেতা এবং যিনি একজায়গায় একটি খাদ্য পণ্যের উৎপাদক অন্যস্থানে তিনি বা তার পরিবার পরিজন ক্রেতা।সে কারণে ভোক্তা অধিকারের পরিপুর্ন বাস্তবায়ন না হলে সকলেই কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। খাদ্যে ভেজাল কাউকে গুলি করে খুন করার চেয়েও বড় অপরাধ। কারন কাউকে গুলি করে খুন করলে সে একবার মরবে, কিন্তু খাদ্যে ভেজাল করার কারণে তাকে বারবার এবং সারাজীবন ধরে ধুঁকে ধুঁকে মরতে হবে।

বর্তমান সরকার দেশের ক্রেতা-ভোক্তাদের স্বার্থ সংরক্ষণে ভোক্তা সংরক্ষণ আইন ২০০৯ প্রণয়ন করেছেন, যেখানে মানুষ এসএমএস, মেইল ও ফোনে বা চিটি প্রেরণ করে প্রতারিত বা ভোগান্তির শিকার হলে আইনী প্রতিকার পেতে পারেন। অভিযোগ প্রমানিত হলে জরিমানার ২৫ শতাংশ আবেদনকারী পাবেন। আবার ইচ্ছাকৃতভাবে কোন ব্যবসায়ীকে হয়রানি করতে অভিযোগ করলে কঠিন শাস্তির বিধানও রয়েছে। তাই সকলের জন্য নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করার জন্য উৎপাদক, ব্যবসায়ী, ভোক্তা ও আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষের সমন্বিত উদ্যোগ নেয়া ছাড়া বিকল্প নাই। সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) নগরীর চৌমুহনিস্থ বনফুল কনফারেন্স হলে ভোক্তা সংরক্ষণ আইন ২০০৯ নিয়ে খাদ্য, মিস্টান্ন ও বেকারী ব্যবসায়ী সমিতির নেতৃবৃন্দের সাথে জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও  ক্যাব চট্টগ্রামের সাথে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় উপরোক্ত আহবান জানানো হয়।

বনফুল গ্রুপের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব এম এ মোতালেব এর সভাপতিত্বে এবং ক্যাব চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় আলোচনায় অংশ নেন জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক প্রিয়াংকা দত্ত, ক্যাব চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এসএম নাজের হোসাইন, ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. হাসানুজ্জমান, নাসরিন আক্তার, ক্যাব চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা সভাপতি আলহাজ্ব আবদুল মান্নান, বাংলাদেশ রেস্তরা মালিক সমিতির সভাপতি সালেহ আহমদ সুলেমান, সিজল গ্রুপের পার্টনার নুরুল আলম, ফুলকলির জেনারেল ম্যানেজার এম এ সবুর, চট্টগ্রাম ড্রিংকিং ওয়াটার ওয়ানার্স সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফয়সল আবদুল্লাহ আদনান, বনফুল গ্রুপের জিএম আনামুল হক, কোম্পানী সচিব রাখাল সাহা, ক্যাব চট্টগ্রাম মহানগরের যুগ্ন সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম প্রমুখ। ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. হাসানুজ্জমান সভায় পাওয়ার পয়েন্ট দিয়ে ভোক্তা সংরক্ষণ আইন ২০০৯ উপস্থাপন করেন।

সভায় বিভিন্ন বক্তাগণ খাদ্য, মিস্টান্ন ও বেকারী পণ্যের উৎপাদন পর্যায়ে যেভাবে স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করা দরকার, সেভাবে পরিবেশক ও খুচরা বিক্রেতা পর্যায়েও তা নিশ্চত করা দরকার। একই সাথে গৃস্থলিতেও নিরাপদ সংরক্ষণ বিষয়ে জ্ঞান না থাকেলে বাজার থেকে নিরাপদ খাদ্য নিয়ে বাড়ীতে সংরক্ষণ জটিলতায় খাবার অনিরাপদ হয়ে যায়। অন্যদিকে নামীদামি কোম্পানীগুলির পণ্য নকল করে বাজারজাত করার কারণে ভোক্তারা প্রতারিত হচ্ছে। এছাড়াও সরকারী যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনবিহীন খাদ্য পণ্যের বাজার প্রতিনিয়তই বৃ্দ্ধিতে যথাযথ নজরদারি না থাকায় নিরাপদ খাদ্য নিয়ে ঝুঁকির সম্ভাবনা বাড়ছে। একই সাথে মতপ্রকাশ করা হয় দেশ থেকে অনেক বেকারী, খাদ্য পণ্য বিদেশে রপ্তানী হচ্ছে, সেখানে কিছু কিছু খাদ্য-পণ্য আমদানি হচ্ছে, যার যথাযথ মানপরীক্ষা ছাড়াই দেশে বাজারজাত হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।

সভায় ভোক্তা সংরক্ষণ আইন ২০০৯ বিষয়ে এখনও সকল পর্যায়ে সচেতনতা সৃষ্টি না হওয়ায়, আইন প্রয়োগের আগে এ খাতে জড়িত সকল পর্যায়ে স্টেকহোল্ডারদের মাঝে আরো সচেতনতা বিকাশে কর্মসুচি প্রণয়নের জন্য ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও ক্যাব এর প্রতি আহবান জানানো হয়। আগামীতে ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও ক্যাব হোটেল, রেস্তোরা মালিক সমিতি, আইসবার মালিক সমিতি, মিনি চাইনিজ, মিনারেল ওয়াটার মালিক সমিতিসহ খাদ্য উৎপাদন ও বিপননের সাথে জড়িত বিভিন্ন ব্যবসায়ী সমিতিগুলির সাথে পৃথকভাবে ভোক্তা সংরক্ষণ আইন নিয়ে তাদের মালিক ও কর্মকর্তাদের জন্য এ ধরনের মতবিনিময় সভা আয়োজন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

This post has already been read 4177 times!

Check Also

আন্তর্জাতিক ওয়ান হেলথ ডে উদযাপিত

নিজস্ব প্রতিবেদক:পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, …