মো. আরিফুল ইসলাম (বাকৃবি):
নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে সোমবার (৫ জানুয়ারি) বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস পালিত হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে এক শোভাযাত্রা ও সভার আয়োজন করা হয়। এদিকে দক্ষিণ এশিয়ার কৃষিশিক্ষার শ্রেষ্ঠ এবং আন্তর্জাতিক র্যাকিংয়ে দেশসেরা এ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার নানা সমস্যায় জর্জরিত। জাতীয় গ্রন্থাগার দিবসে বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারের সেবার মান নিয়ে শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বললে মাঝে বিরাজ করছে হতাশা, ক্ষোভ ও নানা অভিযোগ পাওয়া যায়। শিক্ষার্থীরা দ্রুত দেশসেরা এ বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারের মান উন্নয়নে দাবি করেন।
জানা গেছে, সকাল সাড়ে ১১ টার দিকে আনন্দ শোভাযাত্রা কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে শুরু হয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে প্রশাসনিক ভবনের সামনে গিয়ে শেষ হয়। শোভাযাত্রার উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. এ এস মাহফুজুল বারি। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. সচ্চিদানন্দ দাস চৌধুরী, ভারপ্রাপ্ত গ্রন্থাগারিক ড. মো. এনামুল হক, আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন গণতান্ত্রিক শিক্ষক ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আবুল হোসেন প্রমুখসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ শোভাযাত্রায় অংশ নেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সূচনালগ্নে প্রতিষ্ঠিত হয় গ্রন্থাগারটি । বর্তমানে ৬৬ হাজার বর্গফুট আয়তনের তিনতলা ভবনে মাত্র ৬০০টি আসন রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট ৬ হাজার ৬৮৭ জন শিক্ষার্থীর জন্য এটি খুবই কম।
সরেজমিনে জানা গেছে, গত তিন বছর ধরে অকেজো হয়ে পড়ে আছে গ্রন্থাগারের কেন্দ্রীয় শীতাতপ নিয়ন্ত্রণকরণ প্লান্টটি। এসি’র পরিবর্তে দেওয়া বৈদ্যুতিক ফ্যানও শিক্ষার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত নয়। ফলে প্রচন্ড গরমে কষ্ট করে লাইব্রেরিতে পড়াশোনা করতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।
গ্রন্থাগারটিতে কৃষি বিষয়ক বিভিন্ন বিভাগের পাঠ্যবই, থিসিস, গবেষণা সাময়িকী, সাহিত্য ও বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকা মিলিয়ে মোট ১ লাখ ৯৪ হাজার ৩০৪টি ভলিউম রয়েছে, যা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই অপ্রতুল। বেশিরভাগ বই পুরনো এবং একই বইয়ের একাধিক কপির সংখ্যা কম থাকায় অনেক সময় প্রয়োজন অনুসারে বই পাচ্ছেন না শিক্ষার্থীরা।
গ্রন্থাগারের সাইবার সেন্টারে ২৫টি কম্পিউটার থাকলেও মাত্র ১৪-১৫টি ব্যবহারের উপযোগী।
এছাড়াও টেকনিশিয়ানের অভাবে বন্ধ রয়েছে একটি অত্যাধুনিক এবি স্ক্যানার। যা দিয়ে পুরনো ও অব্যবহারযোগ্য বইপত্র ডিজিটালি সংরক্ষণ করা হতো।
লাইব্রেরিতে ৭৩৮টি পিএইচডি থিসিস পেপারসহ মোট ১৬ হাজার ২০৫টি মাস্টার্স থিসিস পেপার রয়েছে। যার খুব কম সংখ্যক থিসিস পেপারই বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে পাওয়া যায়।
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, ‘বাইরের কোনো বই নিয়ে আমরা গ্রন্থাগারে ঢুকতে পারি না। এ কারণে লাইব্রেরির বই ছাড়া আমাদের নিজস্ব বই পড়ার সুযোগ পাই না। বাইরের বই নিয়ে গিয়ে পড়ার আলাদা পাঠকক্ষ করা প্রয়োজন’।
শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, ‘ঢাকায় গ্রন্থাগারে পড়ার জন্য ভোর থেকে শিক্ষার্থীরা লাইনে দাঁড়িয়ে সিট নিশ্চিত করেন, কিন্তু আমাদের গ্রন্থাগারে সিট খালি থাকে। বাইরের বই নিয়ে পড়ার সুযোগ দিলে এবং শীততাপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার উন্নয়ন করলে এখানেও শিক্ষার্থীরা লাইনে দাঁড়িয়ে সিট নিশ্চিত করতেন।’
এ বিষয়টি নিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। মাঝে মাঝেই তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক মাস্টার্স শিক্ষার্থী জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেকগুলো সম্মেলন কক্ষ থাকার পরও গ্রন্থাগারের তৃতীয় তলায় বিশাল সম্মেলন কক্ষ করে জায়গা বন্ধ করে রাখা হয়েছে। এখানে এ সম্মেলন কক্ষের কোন প্রয়োজন নেই। সেখানে রিডিং রুম করার দাবি করেন তিনি।
গ্রন্থাগারে সাইকেল রাখার নির্দিষ্ট জায়গা না থাকায় প্রায়ই বিভিন্ন ধরনের হয়রানির শিকার হন বলেও অভিযোগ করেন শিক্ষার্থীরা।
শুক্রবার ও সরকারি ছুটির দিন ছাড়া সপ্তাহের ৫ দিন সকাল ৮টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত এবং শনিবার অর্ধদিবস গ্রন্থাগার খোলা থাকে। কিন্তু শিক্ষার্থীরা শুক্রবার গ্রন্থাগারের কোন সেবা পান না।
এ বিষয়ে গ্রন্থাগারের ভারপ্রাপ্ত গ্রন্থাগারিক ড. মো. এনামুল হক বলেন, ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট কর্ণার নামে ওপেন রিডিং বিভাগ এবং শীততাপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার উন্নয়নের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আশাকরি দ্রুতই এ বিষয়ে সুসংবাদ দিতে পারবো। আগামীতে টেক্সট বই আরও কেনা হবে বলে জানান তিনি।