বৃহস্পতিবার , অক্টোবর ৩১ ২০২৪

চট্টগ্রামে ক্যাব’র পোল্ট্রি সেক্টরে সুশাসন প্রকল্পের উদ্যোগে মতবিনিময় সভা

চট্টগ্রামে পাঁচলাইশ থানায় ভোক্তা ও নাগরিক সমাজের সাথে মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখছেন ক্যাব কেন্দ্রিয় কার্যালয়ের প্রকল্প সমন্বয়কারী মোস্তফা কামাল। পাশে উপস্থিত আছেন ক্যাব কেন্দ্রিয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইনসহ অন্যরা।

চট্টগ্রাম সংবাদদাতা: সত্যিকারের সুশাসন প্রতিষ্ঠায় রাজনৈতিক দলগুলিতে গণতন্ত্রের চর্চা ও অনুশীলন যেমনি অপরিহার্য তেমনি সরকারের বিভিন্ন বিভাগের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত না হলে সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ও সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন দাবি নামা তুলবে কিন্তু জনগণ কাক্সিক্ষত সেবা পাবে না। তাই জনগণকে যেভাবে আইন ও অধিকার সম্পর্কে জানতে হবে, তেমনি সরকারি দপ্তরগুলোকেও জনগণের কাক্সিক্ষত অধিকার ও সেবাগুলি নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। তা না হলে সরকারের অনেকগুলি যুগান্তকারী উদ্যোগ মাঝপথেই হোচট খাবে।

সরকার জনগনের উন্নয়ন ও সেবার পরিধি বাড়াতে বিভিন্ন উদ্যোগ ও বিপুল বরাদ্দ দিলেও এখাতে জড়িত সরকারি প্রশাসন যন্ত্রের সাথে জড়িতদের দায়-দায়িত্বহীন কর্মকান্ড, সত্যিকারের জবাবদিহিতার দুর্বলতার কারণে তৃনমূল পর্যায়ে সরকারের সে সমস্ত উদ্যোগ ও বরাদ্দের সুফল জনগণ পাচ্ছে না। সে কারণে চাল, পেয়াজসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্য পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেলেও সরকারের মন্ত্রীদের বিবৃতি- চালের দাম ৪০ টাকার নিচে আসলে কৃষক ক্ষতিগ্রস্থ হবে? প্রকৃতপক্ষে সরকার সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে চাল সংগ্রহ করে না, আর চাল কল মালিক ও আড়তদারদের সুবিধা প্রদানের জন্য চাল সংকটের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে কোন রকম ব্যবস্থা না নিয়ে সাধারণ কৃষকদের দোহাই দিয়ে উল্টো এ সংকটকে উস্কে দিচ্ছে। ফলে চালের দাম আরেক দফা বেড়ে সাধারণ মানুষদের জীবন জীবিকা নির্বাহ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে ভারতে পেয়াজের দাম অনেকাংশে কমলেও দেশে পেয়াজের দাম কমছে না। ব্যবসায়ীদের উল্টো যুক্তি, ঘাটে ঘাটে চাঁদাবাজি ও বেশী দামে কেনা? এ অবস্থায় থেকে পরিত্রানের জন্য সরকারের জনবান্ধব উদ্যোগগুলিকে তৃণমূলে ছড়িয়ে দিতে প্রশাসনকে জনবান্ধব করার পাশাপাশি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার বিকল্প নেই। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি চান্দগাঁওস্থ ক্যাব চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয় মিলনায়তনে ক্যাব চট্টগ্রাম এর পোল্ট্রি সেক্টরে সুশাসন প্রকল্পের উদ্যোগে ভোক্তা ও নাগরিক সমাজের সাথে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় বিভিন্ন বক্তাগণ উপরোক্ত মন্তব্য করেন।

ক্যাব কেন্দ্রিয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস.এম নাজের হোসাইনের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় অতিথি ছিলেন ক্যাব কেন্দ্রিয় কার্যালয়ের আইবিপি প্রজেক্ট এ প্রকল্প সমন্বয়কারী মোস্তফা কামাল। ক্যাব চট্টগ্রাম বিভাগীয় সংগঠক জহুরুল ইসলামে সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় আলোচনায় অংশনেন নারী নেত্রী রুখসানা আখতারুন্নবী, নাসিমা আলম, সমাজকর্মী মাহমুদ রেজা সুজা, বিহারী কমিউনিটির নেতা আনোয়ার হোসেন, ক্যাব নেতা জানে আলম, সেলিম জাহাঙ্গীর, মুসলেহ উদ্দীন ভুইয়া নাহিয়ান, মুক্তা শেখ মুক্তি, কামরুল রশিদ পারভেজ, উন্নয়ন কর্মী সুজিত কন্ডু, ক্যাব চট্টগ্রামের ফিল্ড কো-অর্ডিনেটর মশিউর রহমান প্রমুখ।

সভায় বক্তারা মত প্রকাশ করেন, সরকার দেশের ক্রেতা-ভোক্তাদের স্বার্থ সংরক্ষণে ভোক্তা সংরক্ষণ আইন ২০০৯ প্রণয়ণ করেছেন, যেখানে মানুষ এসএমএস, ই-মেইল ও ফোনে বা চিঠি প্রেরণ করে প্রতারিত বা ভোগান্তির শিকার হলে আইনী প্রতিকার পেতে পারেন। অভিযোগ প্রমানিত হলে জরিমানার ২৫ শতাংশ আবেদনকারী পাবেন। কিন্তু যারা এই আইন প্রয়োগকরবে সে ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর প্রয়োজনীয় লোকবল ও লজিস্টিক সুবিধার অভাবে এখনও আইন বাস্তবায়নে পুরোপুরি প্রস্তুত হয়নি। ফলে দেশের অধিকাংশ জনগণ এখনও আইন সম্পর্কে জানে না বা সচেতন নয়। সরকারের জেলা ও উপজেলা প্রশাসনসহ সরকারের অন্যান্য বিভাগগুলি ভোক্তাদের স্বার্থের চেয়ে ব্যবসায়ীদের স্বার্থ সংরক্ষণে সদা তৎপর, যার কারণে দেশের ১৬কোটি ভোক্তা বারবার নিত্যদিনের জীবন জীবিকা নির্বাহে বারবার প্রতরানা ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন।

সভায় মত প্রকাশ করা হয় সরকারের ব্যবসায়ী তোষন নীতির কারণে পৃথিবীর সব দেশে ক্রেতা-ভোক্তারা ব্যবসা বাণিজ্যের মূল নিয়ামক হলেও বাংলাদেশে তার বিপরীত। ব্যবসায়ীরা যা বাজারজাত করবে, ভোক্তাকে নিরবে তা হজম করতে বাধ্য হচ্ছেন। অন্যদিকে সব পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা সুসংগঠিত হলেও ভোক্তারা সচেতন ও সংগঠিত নয়। এ সুযোগে যে যার ইচ্ছামতো সরকারি প্রশাসন যন্ত্র, মিডিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করে দিনে দিনে কোটিপতি বনে যাচ্ছেন। তারাই দিনে দিনে ব্যাংক, বীমা, হাসপাতাল, শিল্প কলকারখানা ও কর্পোরেট হাউজের মালিক হয়ে যাচ্ছেন এবং পুরো দেশকে অন্য দেশের বাজারে পরিণত করছেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বিদেশ থেকে এলসি খোলার অনুমতি দিতে ব্যস্ত থাকেন, আর দেশীয় কৃষক তার উৎপাদিত পণ্যের ন্যায দাম পায় না। যার খেসারত দিতে হয় সাধারণ ভোক্তাদেরকে, ৫ থেকে ১০ গুণ বেশি দামে নিত্যপ্রয়েজনীয় ভোগ্যপণ্য বাজার থেকে কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। দেশীয় সবগুলি কর্পোরেট হাউজ যেভাবে মিডিয়া ব্যবসায় যুক্ত হচ্ছেন, একইভাবে দেশীয় নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্য পণ্যের বাজারে প্রবেশেও বিরাট প্রতিযোগিতায় তারা লিপ্ত হচ্ছেন।

This post has already been read 2421 times!

Check Also

অর্থনীতির চলমান ধীরগতি দেশে মন্দা ডেকে আনতে পারে

 রাজধানী সংবাদদাতা: বর্তমানে রাজস্ব নীতির (ফিস্কাল পলিসি) মাধ্যমে যেই পদক্ষেপই গ্রহণ করা হোক না কেন, …