রবিবার , ডিসেম্বর ২২ ২০২৪

দক্ষিণাঞ্চলের ৪ জেলায় বোরো লক্ষ্যমাত্রা ১০ লাখ মেট্রিক টন

ফকির শহিদুল ইসলাম (খুলনা) : দক্ষিণাঞ্চলের ৪ জেলায় চলতি মাসের শেষ দিকে বোরো ধানের শীষ উঁকি দেবে। শীষ দেখলেই বিশ দিন পরে বোরো ধান কাটা শুরু হবে। খুলনা, বাগেরহাট, নড়াইল ও সাতক্ষীরা অঞ্চলে ধান-চালের ঘাটতি পোষাতে এবং মূল্য স্থিতিশীল রাখতে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বিল জুড়ে বোরো আবাদ। এ মাসের শেষ দিকে ধানের শীষ উঁকি দেবে। কৃষকের ভাষায় শীষ দেখলেই বিশ দিন পরে ধান কাটা শুরু। এ লক্ষ্যকে সামনে নিয়ে দক্ষিণাঞ্চলের ৬ লাখ কৃষক নভেম্বর থেকে বোরো আবাদে ব্যস্ত সময় পার করেছে। সার, সেচ ও কীটনাশক দিয়ে বালাই দমন করতে দিনরাত শ্রম দিচ্ছে কৃষক। এ মৌসুমে দক্ষিণাঞ্চলের চার জেলায় ৩৬০ কোটি টাকা মূল্যের বোরো উৎপাদনের লক্ষমাত্রা রয়েছে এ অঞ্চলের কৃষকদের । এ অঞ্চলের জেলাগুলো হচ্ছে খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট ও নড়াইল।

নভেম্বর থেকে বীজতলা তৈরির কাজ শুরু হয়। মৌসুমের শুরুতেই সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ের বীজের দাম ছিল তিনগুণ। এ ধাক্কা কাটিয়ে বীজতলা শুরু হলেও ধারাবাহিক কুয়াশার কারণে কোল্ড ইনজুরী ও ব্লাস্ট নামক রোগে আঘাত করেছে রোপা ধানক্ষেত। ডিসেম্বরের শেষ থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত রোপন চলে দক্ষিণাঞ্চল জুড়ে। শৈত্যপ্রবাহে বীজতলার গতি থেমে যায়। এরপর চড়া মজুরির শ্রমিক দিয়ে রোপন ও পরিচর্যা চলে ফেব্রুয়ারি ব্যাপী।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানান, চলতি বোরো মৌসুমে খুলনায় ৫৮ হাজার ৫৮০ হেক্টর, বাগেরহাটে ৫৬ হাজার ৬৫ হেক্টর, সাতক্ষীরায় ৭৬ হাজার ৩৪৫ হেক্টর এবং নড়াইল জেলায় ৪৬ হাজার ১৮৫ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৯ লাখ ২৮ হাজার ৪১৩ মেট্রিক টন। প্রতি কেজি চালের মূল্য ৪০ টাকা হিসেবে উৎপাদিত চালের মূল্য দাঁড়াবে ৩৬০ কোটি টাকা। গেল মৌসুমে এ অঞ্চলের চার জেলায় ২ লাখ ২২ হাজার হেক্টর জমিতে ৯ লাখ ৩৭ হাজার মেট্রিক টন চাল উৎপাদন হয়।

নড়াইল জেলা কৃষি কর্মকর্তা চিন্ময় রায় এর মতে, কালিয়া উপজেলায় সবচেয়ে বেশি জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। জেলার তিন উপজেলায় ৪০ হাজার হেক্টর আবাদের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও ৪৬ হাজার হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। দুই লাখ মেট্রিক টন উৎপাদন হবে বলে তিনি আশাবাদী। জেলার গুদামে সোমবার পর্যন্ত ৯৮০ মেট্রিক টন ইউরিয়া, ৫৮৩ মেট্রিক টন টিএসপি, ৪৮০ মেট্রিক টন ড্যাপ এবং ৫৭৭ মেট্রিক টন এমওপি মজুদ রয়েছে।

সাতক্ষীরা জেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল মান্নানের দেওয়া তথ্য অনুযায়ি জেলায় ৬০ হাজার হেক্টর জমিতে উফশী জাতের এবং ১৫ হাজার ৮৭৫ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড জাতের ধানের আবাদ হয়েছে। আবাদের দিক থেকে জেলা সদর, তালা ও কলারোয়া শীর্ষে রয়েছে। পোকার আক্রমণ ও ব্লাস্ট দেখা দেয়নি বলে তিনি অভিমত দিয়েছেন।

খুলনার তেরখাদা উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা কাজী শাহনেওয়াজ জানান, ২০ শতক জমিতে ব্লাস্ট নামক রোগ দেখা দিয়েছে। ব্লাস্ট প্রতিরোধের জন্য ছত্রাকনাশক নাটিভো, ব্লাস্টিং, ফিলিয়া ও ধুমকেতু নামক কীটনাশক মজুদ রাখতে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। উপজেলার নলিয়ারচর, সাচিয়াদহ, ছাগলাদহ ও কুশলা এলাকায় এবার আবাদের পরিমাণ বেশি।

ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম জানান, দশ হেক্টর বোরো ক্ষেত ব্লাস্টে আক্রান্ত হয়। ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তারা আক্রান্ত ক্ষেত পরিদর্শন করে ছত্রাকনাশক ব্যবহার করার জন্য গবেষকরা কৃষকদের পরামর্শ দিয়েছেন। এ উপজেলার ব্লাস্ট নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

This post has already been read 3022 times!

Check Also

আমন ধানে ব্রাউন প্ল্যান্ট হপার আক্রমণ: ফলনের ক্ষতি ও করণীয়

ড. মো. মাহফুজ আলম: বাংলাদেশে ধান প্রধান ফসল হিসেবে পরিচিত এবং এর উৎপাদন গ্রামীণ অর্থনীতির …