বৃহস্পতিবার , নভেম্বর ২১ ২০২৪

লেবুর ক্যাঙ্কার রোগের কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার

বিজ্ঞানী ড. কে.এম. খালেকুজ্জামান : নানান খাবারে টক স্বাদ আনতে লেবু ব্যবহার করা হয়। লেবু খুবই জনপ্রিয় তাই সব সময় এর চাহিদা থাকে। লেবু চাষ করে পারিবারিক পুষ্টি চাহিদা পূরণ করার পাশাপাশি বাড়তি আয় করাও সম্ভব। এছাড়া দেশের চাহিদা মেটানোর পর অতিরিক্ত উৎপাদন বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব। এক্ষেত্রে বিভিন্ন রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান সহায়তা দিয়ে থাকে। অন্যান্য ফসলের মতো লেবুজাতীয় গাছেও কিছু ক্ষতিকর রোগের আক্রমণ হয়ে থাকে। লেবুর প্রধান একটি রোগ ক্যাঙ্কার সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো-

রোগের কারণ : জ্যানথোমোনাস সাইট্রি (Xanthomons citri) নামক ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে এ রোগ হয়ে থাকে।

রোগের বিস্তার: এ ব্যাকটেরিয়া রোগাক্রান্ত গাছের পরিত্যক্ত অংশে বেঁচে থাকে এবং নতুনভাবে অন্য গাছকে আক্রমণ করে। বাতাস ও পানির ছিটার দ্বারা ব্যাকটেরিয়া এক গাছ থেকে অন্য গাছে ছড়ায়। ব্যাকটেরিয়া স্টোমাটা ও যে কোন ক্ষতের মাধ্যমে গাছের মধ্যে প্রবেশ করে।

রোগের লক্ষণ
● এ রোগে পাতা, আগা ও ফল আক্রান্ত হয়।
● প্রথমে কচি পাতায় ছোট ছোট তেলের ফোটার ন্যায় দাগ উৎপন্ন হয়।
● কয়েক দিনের মধ্যে আক্রান্ত স্থান মোটা হয়ে মাঝখানের টিস্যু সাদাটে হয় এবং ফোস্কার মত উচু হয়ে বের হয়ে আসে।
● ক্রমে দাগের রং বাদামী ও খসখসে হয়ে যায়। তবে তার কেন্দ্রস্থল একটু নিচু থাকে।
● দাগের চারিদিকে হলুদ আভা দ্বারা ঘেরা থাকে।
● দাগ পাতার উভয় পৃষ্ঠে দেখা যায়। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে পাতার উল্টাপৃষ্ঠে বেশি হয় এবং উপরিভাগ খসখসে মনে হয়।
● দাগের মধ্যস্থিত টিস্যু খসে পড়ে এবং এর জন্য পাতায় ছোট ছোট ছিদ্রের সৃষ্টি হয়।
● ফলের দাগের মুখগহ্বর বেশ পরিস্কার। দাগের চারিপাশে হলুদ আভা থাকে না।
● রোগটি কেবল ফলের খোসায় সীমাবদ্ধ থাকে এবং ভিতরের রসালো অংশের বিশেষ কোন ক্ষতি করে না।
● ফলের ফলন তেমন কমে না, তবে বাজারমূল্য কমে যায়।

রোগের প্রতিকার
● নীরোগ বীজতলার চারা ব্যবহার করতে হবে।
● গাছের মরা ডালপালা, ফলের বোটা, রোগ বা পোকা আক্রান্ত ডাল পালা ও অতি ঘন ডাল পালা ছাঁটাই করে পরিস্কার করে দিতে হবে।
● গাছের নিচে ঝড়ে পড়া পাতা ও ফল সংগ্রহ করে পুড়ে ফেলতে হবে।
● প্রতি লিটার পানিতে ১ গ্রাম হারে চিলিটেড জিংক স্প্রে করলে রোগের তীব্রতা কমে যায়।
● ট্রাই ব্যাসিক কপার সালফেট গ্রুপের ঔষধ (যেমন : কিউপ্রোক্স্যাট ৩৪৫ এসসি) প্রতি লিটার পানিতে ০.৫ মিলি হারে মিশিয়ে ৭ দিন পর পর ২-৩ বার গাছে স্প্রে করতে হবে।
● মিউপিরোসিন গ্রুপের ব্যাকটেরিয়ানাশক (যেমন-ব্যাকট্রোবান) ১ লিটার পানিতে ৪ গ্রাম হারে মিশিয়ে ৭ দিন পর পর ২-৩ বার গাছে স্প্রে করতে হবে।
বি:দ্র: ব্যাকট্রোবান ও কিউপ্রোক্স্যাট ৩৪৫ এসসি ওষুধ দুইটি পর্যায়ক্রমে একটা ব্যবহার করার পর আরেকটি ব্যবহার করতে হবে।

লেখক : ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব), মসলা গবেষণা কেন্দ্র, বিএআরআই, শিবগঞ্জ, বগুড়া।

This post has already been read 9259 times!

Check Also

বারি ও সুপ্রিম সীড কোম্পানি লি: এর মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর

গাজীপুর সংবাদদাতা: বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) এবং সুপ্রিম সীড কোম্পানি লিমিটেড এর মধ্যে এক …