রবিবার , ডিসেম্বর ২২ ২০২৪

বোরো ধানের পোকা দমনে আলোক ফাঁদ

নাহিদ বিন রফিক : অনিষ্টকারি পোকামাকড় ফসলের প্রধান শত্রু। এদের হাত থেকে ফসল রক্ষার জন্য জমিতে ব্যাপকভাবে কীটনাশক ব্যবহার হচ্ছে। এতে উপকার হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু এ বিষাক্ত পদার্থগুলো অনায়াসে জলাশয়ে ছড়িয়ে পড়ে মাছের বিপদ ডেকে আনছে। পাশাপাশি পরিবেশকে করছে দূষিত। এছাড়া পোকার উপস্থিতি না বুঝে বালাইনাশক ব্যবহার করছেন কৃষকরা; তা পোকা দমনের ক্ষেত্রে কার্যকরী হয়তো নাও হতে পারে। এ অশুভ লক্ষণ থেকে পরিত্রাণের জন্য বিকল্প ব্যবস্থার প্রয়োজন। সে প্রেক্ষাপটে কৃষি বিশেষজ্ঞরা একটি প্রযুক্তি বের করেছেন, যার নাম সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা। সংক্ষেপে বলা হয় আইপিএম। আলোক ফাঁদ হচ্ছে এরই অংশবিশেষ। অন্যভাবে বলা যায়, কী ধরনের পোকার আক্রমণ হয়েছে তা চিহ্নিতকরণের মাধ্যমে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য এক সহজ পদ্ধতির নাম আলোক ফাঁদ। অত্যন্ত কার্যকর এ পদ্ধতি ব্যবহারে একদিকে যেমন ফসলের ক্ষতিকর পোকাগুলো মারা যাবে, সে সাথে উপকারি পোকাও হবে সংরক্ষণ। পক্ষান্তরে পরিবেশেরও কোনো ক্ষতি হবে না।

নির্বিঘেœ বোরো ধানের উৎপাদন বাড়াতে ক্ষতিকর পোকামাকড় দমন জরুরি। আর আলোক ফাঁদ ব্যবহারের মাধ্যমেই তা অনেকটা সম্ভব। বরিশালস্থ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সূত্রে জানা যায়: চলতি মৌসুমে জেলায় ৫৩ হাজার ৩ শ’ ৯৭ হেক্টর জমির লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে ৫৪ হাজার ৮ শ’ ৭০ হেক্টর জমি। এর মধ্যে সদরে ৩ হাজার ৬শ’ ৩০ হেক্টর, বাবুগঞ্জে ১ হাজার ৩শ’ ৫৫ হেক্টর, উজিরপুরে ১৩ হাজার ২শ’ ৪৭ হেক্টর, বাকেরগঞ্জে ২ হাজার ১শ’ ৬০ হেক্টর, গৌরনদীতে ৬ হাজার হেক্টর, আলৈঝাড়ায় ১০ হাজার ৫০ হেক্টর, মুলাদীতে ১ হাজার ৮শ’ ৭০ হেক্টর, হিজলায় ২ হাজার ৬শ’ ৭৫ হেক্টর, মেহেন্দিগঞ্জে ৬ হাজার ৩শ’ ১০ হেক্টর, বানারীপাড়ায় ৫ হাজার ৪ শ’ হেক্টর এবং মেট্টোপলিটন কৃষি অফিসের আওতায় ৩ হাজার ৬শ’ ৩০ হেক্টর।

এ প্রসঙ্গে উপপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মো. ফজলুল হক জানান, দেশের অন্যান্য স্থানের ন্যায় বরিশালেও এবার বোরো ধানের আবাদ বেশি হয়েছে। এখন আমাদের লক্ষ্য সর্বোচ্চ ফলন অর্জন করা। এ বাস্তবায়ন এনে দিতে পারে সঠিক পরিচর্যা এবং রোগপোকা দমনের মাধ্যমে। এসব বিষয়ে কৃষকদের পরামর্শ দেয়ার জন্য উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তবৃন্দ মাঠে সার্বক্ষণিক কাজ করছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আশা করি এবার বাম্পার ফলন হবে।

পোকা নিয়ন্ত্রণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পোকা দেখাদিলেই কীটনাশক ব্যবহারÑএ প্রবণতা থেকে সরে আসতে হবে। তা না হলে আমাদের বন্ধুপোকাগুলো ধ্বংস হয়ে যাবে। প্রয়োজন হলে অবশ্যই কীটনাশক প্রয়োগ হবে। তবে কোন পোকার জন্য কী ধরনের কীটনাশক প্রযোজ্য তা পর্যবেক্ষণ করেই ব্যবহার করতে হয়। এজন্য আলোক ফাঁদ অত্যন্ত কার্যকরি একটি পদ্ধতি। ইতোমধ্যে জেলার প্রতিটি উপজেলায় এ পর্যন্ত ৫শ’ ২৫টি আলোক ফাঁদ ব্যবহার হয়েছে। যদিও এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। পুরো মৌসুমে এর সংখ্যা কয়েকগুণ বেড়ে যাবে। এর অংশ হিসেবে উপজেলা কৃষি অফিসের উদ্যোগে ২৫ মার্চ সদরের কাটুরাকাঠিতে আলোক ফাঁদ ও এর ব্যবহারের চাষিদের সচেতনমূলক সভার আয়োজন করা হয়।

স্থানীয় ইউপি সদস্য আলী আকবর মজনুর সভাপতিত্বে আনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা কৃষি অফিসার সাবিনা ইয়াসমিন। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কৃষি তথ্য সার্ভিসের প্রতিনিধি নাহিদ বিন রফিক, সহকারি কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার মোনাছেফ আলী, উপসহকারি উদ্ভিদ সংরক্ষণ অফিসার সমীর কুমার দে, উপসহকারি কৃষি অফিসার ফেরদৌসী বেগম, গোবিন্দ লাল কুন্ডসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবৃন্দ।

প্রধান অতিথি কৃষকদের উদ্দেশ্যে বলেন, আলোক ফাঁদ এমন এক প্রযুক্তি, যার ব্যবহারে কীটনাশকের প্রয়োজনীয়তা হ্রাস পায়। পাশাপাশি অনিষ্টকারি পোকার উপস্থিতিও বোঝা যায়। এর খরচ খুবই কম। সহজে পোকা দমন করা যায়। পরিবেশ থাকে অনুকূলে। তাই সবাই মিলে এ পদ্ধতি ব্যবহার করলে ক্ষতিকর পোকা দমনে কার্যকর হবে। চাষের উৎপাদন খরচ কমবে, সে সাথে কৃষক হবেন লাভবান। ফসলে ব্লাস্টের উপস্থিতি আছে কীনা তা সনাক্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট উপসহকারি কৃষি অফিসারকে নির্দেশ দেন। অনুষ্ঠান শেষে এ সংক্রান্ত লিফলেট বিতরণ করা হয়।

লেখক: টেকনিক্যাল পার্টিসিপেন্ট, কৃষি তথ্য সার্ভিস, কারিকর বিড়ির ব্রাঞ্চ সংলগ্ন, সাগরদি, বরিশাল।

This post has already been read 3377 times!

Check Also

আমন ধানে ব্রাউন প্ল্যান্ট হপার আক্রমণ: ফলনের ক্ষতি ও করণীয়

ড. মো. মাহফুজ আলম: বাংলাদেশে ধান প্রধান ফসল হিসেবে পরিচিত এবং এর উৎপাদন গ্রামীণ অর্থনীতির …