ফকির শহিদুল ইসলাম (খুলনা): খুলনা হার্ডবোর্ড মিল বন্ধের প্রায় পাঁচ বছর পার হলেও মিলটি চালুর কোন লক্ষন নেই। মিলটি চালুর এ অনিশ্চয়তায় শ্রমিক কর্মচারীরা রয়েছে চরম বির্পযয়ে। মিলটি বন্ধ থাকায় শ্রমিক কর্মচারীরা তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটছে। বিসিআইসির নিয়ন্ত্রিত রাষ্ট্রায়ত্ত খুলনা হার্ডবোর্ড মিলের ভবিষ্যৎ এখন অন্ধকারে নিমজ্জিত। মিলটি বন্ধের পাঁচ বছর হলেও বিসিআইসি কর্তৃপক্ষ এখনো চালু করতে পারেনি মিলটি। দেশের একমাত্র সরকারী মালিকানাধীন খুলনা হার্ডবোর্ড মিলটি চালুর আশ্বাস এবং প্রতিশ্রুতিতে সীমাবদ্ধ রয়েছে চালুর প্রক্রিয়া। এক সময়ের কর্মচঞ্চল মিলটি বর্তমানে নীরব-নিস্তব্ধ। শ্রমিক, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের পদচারণায় মুখরিত ছিল গোটা মিল এলাকা। আর এখন শুধুই হাহাকার। মিলে উৎপাদিত ৪৩ হাজার ৭৩০ পিস হার্ডবোর্ড বর্তমানে মজুদ রয়েছে। যার মূল্য ২ কোটি ৩৬ লাখ ৪২ হাজার ৮২০ (৫৪০ টাকা দরে) টাকা। এদিকে খুলনা হার্ডবোর্ডের ডিলারদের মধ্যে অনেকেই গুটিয়ে নিয়েছে তাদের ব্যবসা। ফলে এক সময়ের লাভজনক এই প্রতিষ্ঠানটির শ্রমিকদের ভাগ্য বদলের আশা ক্রমেই ক্ষীণ হয়ে আসছে।
মিল সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০১১ সালের ২১ এপ্রিল চলতি মূলধন সংকটে কর্তৃপক্ষ মিলটি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে। পরে কয়েক দফা চেষ্টার পর ২০১২ সালের নভেম্বরে সরকার বিসিআইসির মাধ্যমে মিল চালুর উদ্যোগ নেয়। প্রায় আট মাস সংস্কার করার পর ২০১৩ সালের ১৫ আগস্ট মিলটি ফের উৎপাদনে যায়। ওই বছরের ২৫ নভেম্বর অর্থ সংকটে মিলটি আবারও বন্ধ হয়ে যায়। তবে এ সময়ের মধ্যে প্রায় তিন কোটি টাকার হার্ডবোর্ড উৎপাদন হয়। পরে কিছু বিক্রি হলেও বর্তমানে মিলে অবিক্রীত অবস্থায় পড়ে আছে প্রায় আড়াই কোটি টাকার হার্ডবোর্ড। এর পর নানা উদ্যোগ নেওয়া হলেও মিল চালুর বিষয়টি আলোর মুখ দেখেনি।
এদিকে মিলটি বন্ধ থাকায় অযত্ন-অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে কোটি কোটি টাকার সম্পদ। বিসিআইসি কর্তৃপক্ষ মিলের নিরাপত্তায় বর্তমানে ১০ জন নিরাপত্তা প্রহরী নিয়োজিত রাখলেও প্রতিনিয়ত মিলটির মুল্যবান যন্ত্রাংশ চুরি ও নস্ট হচ্ছে। এছাড়া ৪ জন অস্থায়ী কর্মচারী এবং ২ জন স্থায়ী কর্মকর্তা রয়েছেন। সর্বশেষ বন্ধের সময়ে ২৪২ জন সেট আপের বিপরীতে ২০৪ জন শ্রমিক-কর্মচারী ও কর্মকর্তা কর্মরত ছিল।
সরেজমিন মিল এলাকা ঘুরে দেখা যায়, মানুষের আনাগোনা না থাকায় খোলা স্থানে জন্মেছে আগাছা। আর টিনে ধরেছে মরিচা। বোর্ড তৈরির মেশিন, গোডাউন, ফিনিশিং কারখানা, চিপার মেশিন, বয়লারসহ মিলের প্রতিটি যন্ত্রপাতি অকেজো হয়ে পড়ছে। মিলের শ্রমিকরাও বেছে নিয়েছেন ভিন্ন পেশা। তবে অনেকেই রয়েছেন মিল চালুর আশায়।
খুলনা হার্ডবোর্ড মিল বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক মোল্লা ফরিদ আহমেদ বলেন, এ মিলে এক সময় প্রায় আড়াইশ’ শ্রমিক-কর্মচারী কাজ করতো। দীর্ঘদিন মিল বন্ধ থাকায় মানুষের আনাগোনা নেই, নেই সেই কর্মব্যস্ততা। অযত্ন আর অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে কোটি কোটি টাকার সরকারি সম্পদ। অথচ এখানে কর্মরত শ্রমিকরা অনেকেই এখন বেকার। যাদের বয়স ছিল, তারা অন্য কাজে গেছেন। তার পরেও অনেকে আশায় রয়েছে মিল চালু হবে। মিলের সাবেক সভাপতি মো. আব্দুল হান্নান বলেন, মিলটি দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। অবিলম্বে মিলটি চালুর জোর দাবি জানিয়েছেন তিনি।
খুলনা বিভাগীয় হার্ডবোর্ড ডিলাররা জানান, মিলটি বন্ধ থাকায় শ্রমিক-কর্মচারীদের পাশাপাশি ডিলাররাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইতোমধ্যে অনেকেই ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছে। সারাদেশের প্রায় ৪শ’ ডিলারের মধ্যে খুলনায় ১৫-২০ জন ছিল। এদের অনেকেই এখন আর বোর্ডের ব্যবসা করছেন না।
মিলের উপ-ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মো. নুরুল্লা বাহার জানান, মিল চালুর বিষয়ে এখনও সরকারি কোন সিদ্ধান্ত আসেনি। তবে মিলে উৎপাদিত হার্ডবোর্ড গোডাউনে সুরক্ষিত আছে। শিগগিরই এগুলো বিক্রি হয়ে যাবে বলে তিনি আশাবাদী।
উল্লেখ্য, ১৯৬৫ সালে নগরীর খালিশপুরে ৯ দশমিক ৯৬ একর জমির ওপর কানাডিয়ান কমার্শিয়াল কর্পোরেশন খুলনা হার্ডবোর্ড মিলটি নির্মাণ করে। ১৯৬৬ সালে মিলটি বাণিজ্যিক উৎপাদনে যায়।