রবিবার , ডিসেম্বর ২২ ২০২৪

জুমিয়াদের ফসলের যাদুঘর

ড. মো. শহীদুর রশীদ ভূঁইয়া : নানা রকম ফসলের একটি যাদুঘর হলো জুমিয়াদের জুম মাঠ। বছরের নানা সময় যেন প্রয়োজন অনুযায়ী এখান থেকে নানা রকম প্রয়োজনীয় খাদ্য সরবরাহ করা যায় এটি এরই আয়োজন। সেদিক থেকে এটাকে জুমিয়াদের গোলাঘরও আখ্যায়িত করা যায়। জুমিয়াদের হাতে রয়েছে পাহাড়ের ঢালে আবাদ করার এসব নানা রকম ফসল প্রজাতি। জুমের মাঠের প্রজাতি বৈচিত্র্য এক অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কেবলতো প্রজাতি বৈচিত্র্যই নয়, প্রতিটি ফসল প্রজাতির রয়েছে বহু সংখ্যক জাতও। ধান যেহেতু জুমের প্রাণ সেহেতু জুমিয়াদের হাতে রয়েছে নানা রকম ধান জাত। বলা বাহুল্য, এসব ধান জাত মূলত আউশ ধান জাত। আউশের মৌসুমেই জুম চাষ শুরু হয় বলে পাহাড়ে পাহাড়ে রয়েছে নানা রকম জুম ধানজাত। ধান জাতের বৈচিত্র্য এখানে এখনো বিশাল। বছরের পর বছর এসব মূল্যবান জীববৈচিত্র্য সংরক্ষিত হয়ে আসছে জুমিয়াদের মাধ্যমে।

কেবলতো ধানের নয়, প্রতিটি ফসলের প্রজাতিরই রয়েছে কম বেশি বৈচিত্র্যপূর্ণ জাত। কচুর চমৎকার সব জাত রয়েছে পাহাড়ে জুমিয়াদের হাতে। মরিচের জাত বৈচিত্র্যিও একেবারে কম নয়। মিষ্টিকুমড়া, মারফা এবং শিমেরও কিছু জাত বৈচিত্র্য রয়েছে। আলু আর ভুট্টারও রয়েছে দু’চারটি ভিন্ন রকম জাত। প্রজাতি বৈচিত্র্য আর নানা রকম জুমিয়াদের বাছাই করা জাত বৈচিত্র্য মিলে জুম চাষের মধ্য দিয়ে শত শত বছর জীবিকা নির্বাহ করে এসেছে পাহাড়ি মানুষগণ। প্রাকৃতিক উৎস থেকে মাছ ধরা, পশুপাখি শিকার, নানা রকম গাছগাছালির পাতা-লতা জুম ফসলের সাথে যুক্ত হয়ে মিটিয়ে এসেছে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর ন্যূনতম চাহিদা। জীবন তাদের বড় কঠিন। সংগ্রাম তাদের নিত্যদিনের। কমছে জুম চাষের এলাকা। ঘনঘন একই এলাকায় করতে হচ্ছে জুম চাষ। ফলে কমছে ফলন প্রতিটি ফসলেরই। আজ তাই বিকল্প কৃষির বিষয় ভাবতে হচ্ছে জুমিয়াদের। কেবল জুম আর আগের মতো খাদ্য নিরাপত্তা দিতে পারবে তাদের তা নয়। ফলে জুম চাষের পাশাপাশি নানা রকম ফল চাষেও আগ্রহী হচ্ছে এখন জুমিয়ারা।

বলা বাহুল্য, যত কমবে জুম চাষ তত দিনে দিন হ্রাস পাবে জুমের ফসল বৈচিত্র্য। জুম চাষে পাহাড়ি মানুষের অমনোযোগ অনিবার্যভাবে বিলুপ্তির মুখে ঠেলে দিবে ফসলের জাত বৈচিত্র্যকে। ফসল প্রজাতির বৈচিত্র্য হ্রাস আর পাশাপাশি ফসল প্রজাতির আওতাধীন জাত বৈচিত্র্য হ্রাস মিলে আমাদের মূল্যবান এসব জীববৈচিত্র্যকে নিয়ে যাবে বিলুপ্তির দিকে। ফলে আজ বড় দ্রুত আমাদের এসব ফসল আর ফসলের নানা জাতের বীজ সংগ্রহ করে সংরক্ষণ করা দরকার। এদের কোনো কোনো কৌলি সম্পদে রয়েছে বিরল সব বৈশিষ্ট্য। আজকের এবং আগামী দিনের ফসল উন্নয়নের অন্যতম কাঁচামাল এরা। জুম চাষের এসব জীববৈচিত্র্য রক্ষায় তাই আামদের পদক্ষেপ নিতেই হবে। কত দ্রুত তা আমরা করবো সেটি হলো এখন নির্ধারণ করার বিষয়।

This post has already been read 3367 times!

Check Also

আমন ধানে ব্রাউন প্ল্যান্ট হপার আক্রমণ: ফলনের ক্ষতি ও করণীয়

ড. মো. মাহফুজ আলম: বাংলাদেশে ধান প্রধান ফসল হিসেবে পরিচিত এবং এর উৎপাদন গ্রামীণ অর্থনীতির …