মৃত্যুঞ্জয় রায়: সুপ্রাচীনকাল থেকে অর্জুনের বহুমুখী ভেষজ গুণের কারণে আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে অর্জুন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে হৃদযন্ত্রের টনিক তৈরিতে অর্জুন এক মূল্যবান বৃক্ষ। হৃদপিণ্ড ও রক্তবাহী নালীসমূহকে ভালো রাখতে অর্জুনের কোনো জুড়ি নেই। এ ছাড়া ইনসুলিন হরমোনের ওপরও অর্জুনের গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব আছে যা ডায়াবেটিস রোগীদের ভালো রাখতে সাহায্য করে। অর্জুন গাছের কষ বা ট্যানিন এন্টি অক্সিডেন্টের একটি উত্তম উৎস যা দেহের বার্ধক্যকে বিলম্বিত করে দেয়। অর্জুন রক্ত পরিশোধনের কাজ করে ও মূত্রাশয়ের কাজ ভালো রাখে। মেয়েদের হরমোন চক্র নিয়ন্ত্রণ ও অতিস্রাব নিয়ন্ত্রণ করে দেহকে ভালো রাখে। রক্তের কোলেস্টেরল কমানোর জন্য অর্জুন উত্তম। কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়লে রক্তনালীতে ব্লক তৈরি হয় যা হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। ফুসফুস ভালো রাখতেও অর্জুন সাহায্য করে এতে শ্বাসক্রিয়া ভালো থাকে। দেহের ক্লান্তি দূর করে কর্মক্ষম রাখতে অর্জুন সাহায্য করে। দেহের যে কোনো বাহ্যিক বা অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ হ্রাসে অর্জুন কাজ করে। হাড় ফেটে গেলে বা ভেঙ্গে গেলে অর্জুন তা দ্রুত জোড়া লাগতে ও ক্ষত পূরণ করতে সাহায্য করে। নিচে অর্জুন গাছের ১০টি ভেষজগুণ সম্পর্কে সংক্ষেপে বর্ণনা করা হলো-
১. হৃদপিণ্ড সবল রাখে
যাদের বুক ধড়ফড় করে অথচ উচ্চ রক্তচাপ নেই তারা অর্জুনের কাঁচা ছাল ১০-১২ গ্রাম, শুষ্ক ছাল হলে ৫-৬ গ্রাম পরিমাণ নিয়ে পিষে বা থেঁতো করে ১০০ মিলিলিটার দুধ ও ৫০০ মিলিলিটার পানি একসাথে জ্বাল দিয়ে ১০০ গ্রাম থাকতে নামিয়ে ছেঁকে রোজ বিকেলে খেলে এই অসুবিধাটা চলে যায়।
২. রক্তচাপ বাড়ায়
যাদের লো ব্লাডপ্রেসার বা নিম্ন রক্তচাপ রয়েছে তারা উপরিউক্ত নিয়মে দুধের সাথে অর্জুনের ছাল খেলে ব্লাড প্রেসার বাড়ে।
৩. শ্বেতপ্রদর বা রক্তপ্রদর সারায়
এ রোগ হলে অর্জুনের কাঁচা ছাল ১০-১২ গ্রাম, শুষ্ক ছাল হলে ৫-৬ গ্রাম পরিমাণ নিয়ে পিষে বা থেঁতো করে ১০০ মিলিলিটার পানিতে ভিজিয়ে রেখে সেই পানিতে আধা চা চামচ কাঁচা হলুদের রস মিশিয়ে কয়েকদিন খেলে এ অসুবিধাটা চলে যায়।
৪. ক্ষয়কাশ সারে
অর্জুন ছালে গুঁড়ো বাসক পাতার রসে ভিজিয়ে সেটা শুকিয়ে শিশি ভরে রেখে দিতে হবে। দমকা কাশি হতে থাকলে এই গুঁড়োর সাথে একটু ঘি ও মধু মিশিয়ে চাটতে থাকলে কাশি কমে।
৫. রক্ত আমাশয়
ছাগলের দুধের সাথে ৪-৫ গ্রাম অর্জুন ছালে রস বা কাই মিশিয়ে খেলে রক্ত আমাশয় সেরে যায়।
৬. মচকা বা হাড় চিড়ে গেলে
অর্জুন ছাল ও রসুন বেটে মলমের মতো করে মচকা বা হাড় চিড়ে গেলে সে জায়গায় প্রলেপ দিলে বা লাগিয়ে রাখলে ওটা সেরে।
৭. মেচতা দূর করে
মেচতা পড়া দাগ দূর করতে অর্জুন ছালের গুঁড়া মধুর সাথে মিশিয়ে সেখানে লাগালে উপকার হয়।
৮. ফোঁড়া ফাটায়
অর্জুন পাতা দিয়ে ফোঁড়া ঢেকে রাখলে দ্রুত ফেটে যায়। ফাটার পর অর্জুন পাতার রস সেখানে লাগিয়ে দিলে দ্রুত ফোঁড়া শুকায়।
৯. ক্ষত সারায়
ঘা হলে সে জায়গা অর্জুন ছাল বাটা দিয়ে ধুয়ে দেয়ার পর সেখানে অর্জুন ছালের মিহি গুঁড়ো মাখিয়ে রাখলে ঘা বা ক্ষত তাড়াতাড়ি শুকায়।
১০. হাঁপানির টান কমে
হাঁপানির টান থাকলে অর্জুন ফলের শুষ্ক টুকরো কলকের মতো ধোঁয়া তৈরি করে টানলে হাঁপানির টান কমে।