রবিবার , ডিসেম্বর ২২ ২০২৪

৩৬শ’ টাকায় এক মণ ধান!

কৃষিবিদ আবু সায়েম (রংপুর) : বোরো ধানের পরিবর্তে পানি সাশ্রয়ী আউশ চাষে ঝুকে পড়ছে পীরগঞ্জের স্থানীয় কৃষকরা। আউশ আবাদে গ্রাম বাংলার হারানো ঐহিত্য ফিরে আসছে। বিগত তিন-চার বছর ধরে আউশ ধান চাষে অভাবনীয় সাফল্য দেখিয়েছে পীরগঞ্জের চাষিরা। উচ্চ ফলনশীল আউশ জাত বিশেষ করে ব্রি ধান৪৮ মাঠে প্রবর্তন করার পর থেকেই এ সফলতা আসছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। শানেরহাট ইউনিয়নের পাহাড়পুর গ্রামের বীজ উৎপাদনকারী কৃষক হাজী মো. ফয়জার রহমান বলেন, গত বছর তিনি সাড়ে পাঁচ একর জমিতে ব্রি ধান৪৮ জাতের আউশ ধান চাষ করেন। গতবারের ফলন দেখে স্থানীয় কৃষকেরা তার কাছে এবারে বীজের জন্য যোগাযোগ করছে। বীজ হিসেবে তিনি ৫ মণ ধান সংরক্ষণ করেন। বীজের প্রচুর চাহিদা থাকায় প্রতি কেজি বীজ ১শ টাকা দরে বিক্রি করেছেন। ফলে এক মণ বীজ ৩৬শ’ টাকায় বিক্রি করে তিনি মহাখুশি।

পীরগঞ্জ জাহাঙ্গীরাবাদ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে সমকাল কৃষি ও মানব উন্নয়ন সমবায় সমিতির উদ্যোগে আয়োজিত আউশের আবাদ বৃদ্ধিকরণে উদ্বুদ্ধকরণ সমাবেশে অতিথিগণের নিকট হতে কুইজ বিজয়ী কৃষক বীজ ও সার গ্রহণ করছেন।

পীরগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ সমীর চন্দ্র ঘোষ জানান, কৃষি বিভাগের উদ্যোগে আউশ আবাদ বৃদ্ধির ওপর বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। আউশ প্রণোদনাসহ রাজস্ব অর্থায়নে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের বীজ, সার ও নগদ অর্থ দিয়ে সহায়তা করা হচ্ছে। গত বছর পীগঞ্জে ১৭শ হেক্টর জমিতে আউশের আবাদ হয়েছিল। এ বছর ২ হাজার ৫শ হেক্টর ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। উপজেলার মিঠিপুর, পাচগাছি, শানেরহাট, রাইপুর ও পীরগঞ্জ এসব ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি আউশের আবাদ সম্প্রসারণ হচ্ছে বলে তিনি জানান। এরই অংশ হিসেবে গত রবিবার (১ এপ্রিল) বিকেলে পাঁচগাছি ইউনিয়নের সমকাল কৃষি ও মানব উন্নয়ন সমবায় সমিতির আয়োজনে জাহাঙ্গীরাবাদ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আউশের আবাদ বৃদ্ধিকরণে উদ্বুদ্ধকরণের জন্য এক ব্যতিক্রমী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে পাঁচ শতাধিক কৃষক-কৃষাণীসহ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও কৃষি তথ্য সার্ভিসের কর্মকর্তাগণ এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন করেন।

সমকাল কৃষি ও মানব উন্নয়ন সমবায় সমিতির সংগঠক মেহেদুল ইসলাম মৃদুল বলেন, ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য একটি আবাসযোগ্য পৃথিবী রেখে যেতে পরিবেশের ক্ষতি করে না এ ধরণের জ্ঞান-প্রযুক্তি বিস্তার ঘটাতে হবে। বোরো আবাদে কারণে আমাদের ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। এ সমস্যাকে মাথায় রেখে তিনি ও তার সংগঠন কৃষকদের উদ্ভুদ্ধকরণের মাধ্যমে আউশের বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। সমাবেশে আউশ সম্পর্কিত কুইজ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ৫ জন বিজয়ী কৃষকদের মাঝে দুই কেজি আউশের বীজ ও দশ কেজি ভার্মিকম্পোস্ট বিতরণ করা হয়।

এছাড়া সংগঠনের উদ্যোগে ৪০ জন বৃদ্ধের মাঝে ছড়ি বিতরণ করা হয়। সমাবেশের শেষ দিকে আউশ চাষ পদ্ধতির ওপর কৃষি তথ্য সার্ভিস কর্তৃক নির্মিত ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়। কৃষি তথ্য সার্ভিসের আঞ্চলিক বেতার কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. আবু সায়েম খনার বচনের কথা উল্লেখ করে বলেন ‘আউশ ধানের চাষ, লাগে তিন মাস, কোল পাতলা ডাগর গুছি, লক্ষ্মী বলে হেথায় আছি অর্থাৎ আউশ ধান চাষে তিন মাস লাগে। ফাঁক ফাঁক করে লাগালে গোছা মোটা হয় এবং ফলনও বেশি হয়’। তিনি আরও বলেন আউশে আমন-বোরোর মত যতœ নিলে ফলন কোন অংশেই কম নয়।

This post has already been read 3159 times!

Check Also

আমন ধানে ব্রাউন প্ল্যান্ট হপার আক্রমণ: ফলনের ক্ষতি ও করণীয়

ড. মো. মাহফুজ আলম: বাংলাদেশে ধান প্রধান ফসল হিসেবে পরিচিত এবং এর উৎপাদন গ্রামীণ অর্থনীতির …