খন্দকার মারছুছ : চায়না যেতে চাচ্ছেন? নিশ্চয়ই শুধু ভ্রমণের জন্য নয় ব্যবসার জন্যও তবে যেনে নিন কিছু তথ্য:
১. আপনি হয়তোবা গুগল এবং ফেসবুকে আসক্ত হয়ে আছেন। ফেসবুকে সোস্যাল নেটওয়ার্কিং আর সব বিপদে আপদে গুগল। সার্চ দেওয়ার জন্য গুগল সার্চ, ব্রাউজিংয়ে ক্রোম, ম্যাপের গুগল ম্যাপ। আর সর্বোপরি এপ ডাউনলোডের জন্য প্লেস্টোর। আপনি হয়তবা ভাবছেন এয়ারপোর্টে ম্যাপে সার্চ দিয়ে হোটেলে যাবেন। কিন্তু সে আশায় গুড়ে বালি এয়ারপোর্টে নেমেই দেখবেন গুগল, ফেসবুক ব্লক। তখন আর কিছুই করতে পারবেন না। ভিপিএন ক্রয় করার আগে। কারণ, ভাবছেন ভিপিএন নামিয়ে নিলেইতো হয়। না পারবেন না। কারণ, প্রে স্টোরও ব্লক। এজন্য বাংলাদেশে থাকতেই কিছু এপ নামিয়ে রেডি করে নিতে পারেন আপনার ফোনো-
ক. গুগল থেকে ApkPure এপস নামিয়ে নিতে পারেন। যেটা প্লে স্টোরের মত যেকোন এপস নামানোর জন্য ব্যবহার করতে পারবেন। যেহেতু প্লেস্টোর ব্লক। আরও কিছু এপস যেমন CTrip, booking.com, agoda হোটেল এর জন্য নামিয়ে নিতে পারেন।
তাছাড়া সার্চের জন্য Baidu এবং Maps এর জন্য BaiduMapsEn ও খারাপ না। নামাজের সময় এবং কিবলার ডিরেকশনের জন্য এপ Prayer Times. শুধু সিটি সিলেক্ট করলেই সব দেখাবে। কারণ, আজান শোনার সৌভাগ্য সেখানে হবে না।
খ. চায়নায় হোয়াটস এপ, ভাইবার সব ব্লক। শুধু WeChat। তাই বাসায় কথা বলার জন্য বাসার মোবাইলে উইচ্যাট ইনস্টল করে এড দিয়ে শিখিয়ে দিয়ে আসবেন।
গ. চাইনিজ সিম পাবেন এয়ারপোর্টে ১৮০/১৫০ আরএমবি নিবে। ঐটার সাথে ৪ জিবি নেট থাকে। ভুলেও ওই সিম দিয়ে বাংলাদেশে কল দিবেন না। পার মিনিট ১০০ টাকার মত কাটবেই সাথে টাকা শেষ হলে ৪ জিবি নেটও গায়েব হয়ে যাবে।
ঘ. চায়নাতে ভিপিএন কিনতে পারবেন ৪০ আরএম দিয়ে। না কিনে ফ্রিতেও চালিয়ে দিতে পারেন। Express VPN/Nord VPN সবচেয়ে ভালো। একটায় ৭ দিন ট্রায়াল পাবেন। প্রথমে এক্সপ্রেস ব্যবহার করবেন এরপর ৭ দিন পার হয়ে গেলে নর্ড। ভিপিএন চালু থাকলে আপনি ব্লক সাইটগুলো ব্যবহার করতে পারবেন।
গ. চায়নাতে অন্য দেশের মত উবার নেই। আছে DIDI। দিদি এপস প্লেস্টোরে পাবেন। ট্যাক্সি থেকে দিদিতে খরচ কম।
২. চায়নাতে সবচেয়ে সাশ্রই ট্রান্সপোর্ট হল মেট্রো সাবওয়ে। ২/৩ আরএমবি দিয়ে পুরো সিটি ঘুরে আসতে পারবেন। মেট্রোর ম্যাপ পাবেন প্লেস্টোরে। MetroMan টাও ভালো। মেট্রো ম্যাপ বুঝে গেলে কাউকে কিছু জিজ্ঞাসা করতে হবে না। নিজে নিজেই চলতে পাবেন। এটা অনেকটা সুডোকু খেলার মত। ওরা পুরো শহরটাকে কয়েকটা লাইনে ভাগ করছে। আর প্রতিটা লাইন প্রত্যেকের সাথে সাথে যুক্ত। মনে করেন আপনার সাপ্লায়ার বলছে লাইন লাইন ৫। এক্স জায়গা। ম্যাপে দেখবেন আপনি কোথায় আছেন। মনে করেন ২ এ আছেন। ২ তে উঠে হয়তো যেখানে ৩ মিলিত হয়েছে সেখানে নামবেন। এরপর ৫…..
৩. চায়নিজ লোকগুলোর কাছে আপনি ইংরেজিতে হেল্প পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। কারণ, আপনি যে জায়গার নাম বলবেন সে চিনলেও আপনার উচ্চারন বুঝবে না। তাই গুগল ট্রান্সলেটর নামিয়ে ইংরেজি চায়না ওফলাইন নামিয়ে রাখবেন। যখনই কিছু দরকার হবে ইংরেজিতে লিখে চায়নায় ট্রান্সলেট করে দেখালে সে বুঝবে এবং হাতের ইশারায় বুঝাবে এদিক ওদিক।
৬. প্রকৃতিক প্রয়োজন টয়লেট লাগলে খবর আছে। টয়লেট বা ওয়াশরুম কোনটাই ওরা বুঝে না। সারাদিন কাঁদলেও লাভ নেই। ওদেরকে বলতে হবে ডব্লিউ সি (W C), তাহলে সুন্দর দেখায় দিবে। আর হ্যা ইন্ডিয়া, মালয়েশিয়া, কিংবা মিডলইস্ট, ইউরোপের মতো ওরাও টয়লেটের পর পানি ব্যবহার করে না। তাই টয়লেটে ডুকে শিওর হয়ে নিবেন টিস্যু আছে কিনা। কারণ, অনেক জায়গায় এরকম দেখেছি পানিও নাই, টিস্যুও শেষ। এজন্য পকেটে সবসময় টিস্যু রাখার প্লান থাকলে ভালো হয়। আর হ্যা, শুধু টিস্যু ব্যবহার করলেও নামাজে কোন সমস্যা হবে না। পবিত্রতার জন্য পানি বাধ্যতামূলক নয়। টিস্যু হলেও হয়ে যাবে।
৭. আপনি কি সাইক্লিংয়ে অভ্যস্ত। তবে আপনার জন্য বেস্ট জায়গা হল চায়না। পুরো চায়নাতে হাজার হাজার সাইকেল রাস্তার দুইপাশে পাবেন। শুধু এপস নামিয়ে স্ক্যান করলেই সাইকেলের তালা খুলে যাবে। এরপর চালাতে পারবেন যেখানে খুশি নিয়ে আবার লক করে রাখবেন। আধা ঘন্টা মাত্র ১ আরএমবি কাটবে। OFO এবং Mobike সবচেয়ে বেশি। তবে OFO আপনি ক্রেডিট কার্ড দিয়ে ব্যবহার করতে পারবেন। তাই এইটাই বেস্ট।
৮. খাবারঃ চায়নাতে বাংলাদেশীদের জন্য সবচেয়ে সমস্যা খাবার। আমাদের ফ্লেভারের সাথে চায়না টোটালি ডিফারেন্ট। ইন্ডিয়া কিংবা মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়ায় গিয়ে খাবারে যে মজা পাবেন, চায়নাতে নয়। সামান্য কিছু মুসলিম হোটেল পাবেন। মুসলিম হোটেল বাদে বাকি সব জায়গায় মুসলমানদের জন্য মাছ, সবজি, ডিম ছাড়া যেকোন প্রাণি যেমন- চিকেন, বিফ সব হারাম। যেহেতু ওরা জবাই করে মেশিনে যেটা মুসলমানদের জন্য বৈধ নয়। তাই শুধু মাছের ওপর বেশি চলা লাগে। সামুদ্রিক মাছ পাওয়া যায় পচুর। যদিও রান্নার স্বাদ ভিন্ন।
লেখক: ব্যবস্থাপনা পরিচালক, রিলায়েন্স হাই টেক লি.