রবিবার , ডিসেম্বর ২২ ২০২৪

পোলট্রিতে H9N2 ভাইরাসের ভ্যাকসিনেশন এখন সময়ের দাবী

নিজস্ব প্রতিবেদক: বিগত এক দশকে বাংলাদেশের পোলট্রি শিল্প ব্যাপক প্রবৃদ্ধি ঘটেছে। কিন্তু সময় সময় বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাবের কারণে শিল্পটিকে হোচট খেতে হয়েছে বেশ কয়েকবার। শিল্পের বিস্তার ঘটলেও  সঠিক জীব নিরাপত্তা অনুশীলন না করা, অব্যবস্থাপনা, কারিগরি জ্ঞানের অভাব ইত্যাদি কারণে নিত্যনতুন ভাইরাসের আবির্ভাব ঘটছে। পোলট্রিতে এতদিন এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা রোগের হাই-প্যাথজোনিক (H5N1) ভাইরাস চিন্তার কারণ হলেও লো-প্যাথজোনিক (H9N2) ভাইরাস বর্তমানে পোলট্রি শিল্পে নতুন হুমকি হিসেবে দেখা দিয়েছে। পোলট্রিতে H9N2 ভাইরাসের ভ্যাকসিনেশন এখন সময়ের দাবী। নয়তো বিপর্যয়ের মুখে পড়তে পারে দেশের সবচেয়ে সস্তায় প্রাণিজ প্রোটিন জোগানদাতা এ শিল্পটি।

শনিবার (১২ মে) রাজধানীর ঢাকা রিজেন্সী হোটেলে আয়োজিত “Avian Influenza Vaccination and  Surveillance” শীর্ষক এক সিম্পোজিয়ামে উপস্থিত বক্তাগণ এসব কথা বলেন। তবে ভ্যাকসিন প্রয়োগই সমস্যার একমাত্র সমাধান নয়, জীব নিরাপত্তা ব্যবস্থা সবার আগে নিশ্চিত করতে হবে বলেও বক্তারা অভিমত প্রকাশ করেন।

ওয়ার্ল্ড ভেটেরিনারি পোলট্রি এসোসিয়েশন-বাংলাদেশ শাখা (WVPA-BB) –এর সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল ইসলাম

ওয়ার্ল্ড ভেটেরিনারি পোলট্রি এসোসিয়েশন-বাংলাদেশ শাখা (WVPA-BB) উক্ত আয়োজন করে। সিম্পোজিয়ামে পোলট্রি উদ্যোক্তাগণ ছাড়াও দেশি বিদেশি বিজ্ঞানী, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং শিল্পের সাথে জড়িত সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ওয়ার্ল্ড ভেটেরিনারি পোলট্রি এসোসিয়েশন-বাংলাদেশ শাখা (WVPA-BB) –এর সভাপতি ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি সায়েন্স অনুষদের প্যাথলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল ইসলাম এবং ওয়ার্ল্ড ভেটেরিনারি পোলট্রি এসোসিয়েশন কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি Dr. Nicolas Eterradossi.

অনুষ্ঠানে “An Overview of Poultry Industry and avian influenza situation in Bangladesh from farmers’ perspective” শীর্ষক কারিগরি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ওয়ার্ল্ড পোলট্রি সায়েন্স এসোসিয়েশন – বাংলাদেশ শাখা’র সভাপতি শামসুল আরেফীন খালেদ। তিনি জানান, বাংলাদেশ পোলট্রির সবচেয়ে বড় সমস্যা সময় সময় বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব। ঘনবসতি, একইসঙ্গে বিভিন্ন পশু ও পাখি পালন, জীব নিরাপত্তা পরিপালন না করা, পোলট্রি ফার্মের অস্বাস্থ্যকর স্যানিটেশন ব্যবস্থা ইত্যাদি নানা কারণে এসব হয়ে থাকে।

শামসুল আরেফীন খালেদ আরো জানান, দেশের প্রায় ৭০ ভাগ খামারের সঠিক জীব নিরাপত্তা ব্যবস্থা অনুপস্থিত। অথচ পোলট্রি ফার্মের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এটি। দেশের কাঁচাবাজারগুলো ৯৫ শতাংশ মুরগি বিক্রি করা হয় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে। সুতরাং সেখান থেকে রোগ ছড়ানোর ঝুঁকি থেকে যায়। প্রান্তিক খামারিদের জীব নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিতের জন্য সরকারি সহযোগিতা প্রয়োজন।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি) -এর সভাপতি মসিউর রহমান বলেন, আমাদের শিল্প বড় হওয়ার সাথে সাথে রোগের প্রাদুর্ভাব ও বিভিন্ন চ্যালেঞ্জও বাড়ছে। আমাদের সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হলে আজকের সাজেশনগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে।

মসিউর রহমান আরো বলেন, আমাদের জন্য H9N2 ভাইরাস নতুন এক সমস্যা। এর থেকে বাঁচতে গেলে দ্রুতই আমাদের ভ্যাকসিনেশনে যাওয়া উচিত। তবে শুধু ভ্যাকসিন করলেই চলবেনা, বায়োসিকিউরিটির ব্যাপারে আমাদের সমভাবে গুরুত্ব দিতে হবে। এছাড়াও দেশের ছোট-বড় সব খামারগুলোকে নিবন্ধের আওতায় আনতে হবে।

“Present status of avian influenza control in Bangladesh” শীর্ষক কারিগরি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিম্পোজিয়ামের আহ্বায়ক এবং ন্যাশনাল রেফারেন্স ল্যাবরেটরী ফর এভিয়ান ইনফ্লয়েঞ্জা ইন বাংলাদেশ এর প্রধান ড. মো. গিয়াস উদ্দিন।

অনুষ্ঠানে “Global situation of highly pathogenic and low pathogenic avian influenza and their control” শীর্ষক কারিগরি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন Prof. Dr. Timm Harder, FLI, Germany; “Avian influenza surveillance and control –French experience” শীর্ষক কারিগরি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন Dr. Nicolas Eterradossi, ANSES, Ploufragaon, France; “Avian influenza surveillance in Bangladesh” শীর্ষক কারিগরি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন Dr. Eric Brum, ECTAD, FAO, Bangladesh এবং “Molecular epidemiology of H5N1 and H9N2” শীর্ষক কারিগরি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রফেসর ড. মো. রফিকুল ইসলাম। এছাড়াও “WVPA Asia Meeting 2018” এবং “Protective immunity against Newcastle disease and avian influenza: a comparative viewpoint” শীর্ষক কারিগরি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন Prof. Dr. Abdul Rahman Omar, UPM, Malaysia.

মধ্যাহ্নভোজের পর দ্বিতীয় সেশনের স্বাগত বক্তব্য রাখেন ড. মো. গিয়াস উদ্দিন। সিম্পোজিয়ামের আলোচ্য বিষয়াদির সারাংশ উপস্থাপন করেন এফএও (ECTAD) প্রতিনিধি অধ্যাপক নাথুরাম চন্দ্র দেবনাথ। এরপর সিম্পোজিয়ামে উপস্থাপিত কারিগরি প্রবন্ধের ওপর প্রশ্নোত্তর পর্বের আয়োজন করা হয় এবং কারিগরি প্রবন্ধ উপস্থাপনকারীগণ বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। সিম্পোজিয়ামে ১০টি পোস্টারও উপস্থাপন করা হয়।

সমগ্র অনুষ্ঠানটির সঞ্চালকের ভূমিকা পালন করেন ওয়ার্ল্ড ভেটেরিনারি পোলট্রি এসোসিয়েশন-বাংলাদেশ শাখা‘র সাধারণ সম্পাদক ডা. বিশ্বজিৎ রায়।

উল্লেখ্য, প্যারাগন গ্রুপ ছিল সিম্পোজিয়ামের স্পন্সর প্রতিষ্ঠান।

This post has already been read 6353 times!

Check Also

সাড়ে ৬ টাকা দরে ভারতীয় ডিম এলো বাংলাদেশে!

এগ্রিনিউজ২৪.কম ডেস্ক: ডিম আমদানির অনুমতির পর চতুর্থ চালানে এবার ভারত থেকে ডিম আমদানি হলো সাড়ে …