রবিবার , ডিসেম্বর ২২ ২০২৪

পোলট্রি শিল্পের আমরা সবাই ভীতির মধ্যেই আছি -কৃষিবিদ মো. জাহিদুল ইসলাম

কৃষিবিদ মো. জাহিদুল ইসলাম। বাংলাদেশ পোলট্রি শিল্পে দক্ষ এবং অভিজ্ঞ ব্যাক্তি হিসেবে একটি সুপরিচিত নাম। প্রায়  দেড় যুগেরও বেশি সময় ধরে এ শিল্পের সাথে জড়িত।সম্প্রতি এগ্রিনিউজ২৪.কম -এর সাথে এক সাক্ষাৎকারে তাঁর ক্যারিয়ারের নানা প্রসঙ্গ ছাড়াও উঠে এসেছে পোলট্রি শিল্পের সাম্প্রতিক খুঁটিনাটি নানা প্রসঙ্গ। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মো. খোরশেদ আলম (জুয়েল), শ্রুতি লিখন সহায়তায় ছিলেন মো. জহিরুল ইসলাম (সোহেল)। সাক্ষাৎকারের চুম্বক অংশ সম্মানিত পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হলো-

এগ্রিনিউজ২৪.কম: আপনার ক্যারিয়ার শুরুর ইতিহাস জানতে চাই?

কৃষিবিদ মো. জাহিদুল ইসলাম: আমার ক্যারিয়ার শুরু হয় ১৯৯৮ সালে প্যারাগন গ্রুপে যোগদানের মাধ্যমে। সেখানে আমি সব মিলিয়ে ছিলাম দীর্ঘ ১৫ বছর। ১৯৯৮ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত। তারপর মাঝখানে দুই বছর গ্যাপ ছিল। ২০০৩ সাল থেকে আবার টানা ১২ বছর কাজ করেছি।

খুব সম্ভবত ১৯৯৬ বা ৯৭ সালের দিকে প্যারাগন বাংলাদেশে প্রথম ইনভা্রনমেন্ট কন্ট্রোল হাউজ তৈরি করে। সেখানে কাজ করার সৌভাগ্য হয় আমার। আমার সাথে আরো একজন ছিলেন নাম জিন্নাতুল ইসলাম। বাংলাদেশে আমরাই প্রথম ইনভা্রনমেন্ট কন্ট্রোল হাউজে কাজ করার সুযোগ পাই প্যারাগন গ্রুপে যোগদান করার মাধ্যমে।

এগ্রিনিউজ২৪.কম: মাঝখানে দুই বছর গ্যাপ ছিল, বিষয়টা খুলে বলবেন?

কৃষিবিদ মো. জাহিদুল ইসলাম: এক সময় আট-দশটা শিক্ষিত যুবকের মতো আমার মাথায়ও সরকারি চাকুরি করার ইচ্ছে জাগলো।বিআরডিবি (Bangladesh Rural Development Board) তে সরকারি চাকুরি হয়েও গেল।কিন্তু সরকারি চাকুরিতে বেশিদিন মন টিকলোনা, অনেক কিছু মানিয়ে নিতে পারছিলামনা। কারণ, হয়তো পৈত্রিকসূত্রে রক্তে সততার একটা প্রভাব ছিল। তাই চাকুরিটা ছেড়ে দেই। তাছাড়া আমার চাকুরির বেইজটা কিন্তু হয়েছিল বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে। তাই আমি আবার প্যারাগন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জনাব মসিউর রহমান স্যারের সাথে যোগাযোগ করি। তিনি সবকিছু শুনে আবার আমাকে সুযোগ দিলেন তাঁর কোম্পানিতে কাজ করার।

তখন আমি ফার্ম এবং ফিডমিল দু’টোতেই একসাথে কাজ করি। আস্তে আস্তে দায়িত্ব আরো বেড়ে গেল। এক সময়  টেকেনিক্যাল কো-অর্ডিনেটর হিসেবে ফিড নিউট্রিশন এবং ফার্ম ম্যানেজমেন্ট দু’টোতেই কাজ করি।সর্বশেষ প্যারাগন গ্রুপের কোয়ালিটি কন্ট্রোল ও কারিগরি বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পাই।

এগ্রিনিউজ২৪.কম: যতটুক জানি, আপনি ডেইরি সাইন্স নিয়ে পড়াশুনা করেছেন  ডেইরি থেকে পোল্ট্রিতে কিভাবে আসলেন?

কৃষিবিদ মো. জাহিদুল ইসলাম: ডেইরি সাইন্স পড়ার সময় আমাদের স্যাররা একটা সুবিধা দিয়েছিলেন চাকরির পাশাপাশি ভার্সিটিতে ক্লাস করা ও পরীক্ষা দেয়া যেত। এইজন্য ডেইরি সায়েন্সে পড়া।  ডেইরি সায়েন্সে এমএস করার পর যখন মাঠ পর্যায়ে কাজ করার জন্য গেলাম তখন চিন্তা করলাম যে, বাংলাদেশ তো অনেক ছোট একটা দেশ। বাংলাদেশে ডেইরিকে প্রাতিষ্ঠানিক আকারে করতে গেলে অনেক সময়ের ব্যাপার বা আদৌ এটা পুরোপুরি হবে কিনা, তখন সেটা অনুমান করা যায়নি। যদিও আমার মাস্টার্স ছিলো ডেইরি সায়েন্সের ওপর কিন্তু আমার অনার্স ছিল পশুপালন অনুষদে। তাই আমি ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে পোল্ট্রি শিল্পে আত্মনিয়োগ করলাম।

এগ্রিনিউজ২৪.কম: এবার আপনার বর্তমান কর্মস্থল সম্পর্কে জানতে চাই?

কৃষিবিদ মো. জাহিদুল ইসলাম: বর্তমানে আমি বেঙ্গল ফিড এন্ড ফিসারিজ লিমিটেড -এ জেনারেল ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত আছি। বাংলাদেশের প্লাস্টিক ও টেক্সটাইল জগতে বেঙ্গল অনেক সুপরিচিত হলেও পোলট্রি ও মৎস্য সেক্টরে নতুন। এখানে কাজ করার এক ধরনের চ্যালেঞ্জ আছে বৈকি। তবে চ্যালেঞ্জিং জব আমার পছন্দ। আমার ম্যানেজমেন্টও চায় সেক্টরটিকে ডেভেলপ করতে। এ ব্যাপারে তাঁরা আন্তরিকভাবে আমাকে সহযোগিতা করছেন।আমি তাদের আস্থা ও বিশ্বাসকে পূর্ণাঙ্গ রুপ দিতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।আপাতত আমাদের ইউনিটের প্রতি ঘন্টায় ফিস ফিড এবং পোল্ট্রি ফিড উৎপাদন ক্ষমতা ৩০ টন।

আশা করা যায়, ভবিষ্যতে আরো বাড়বে। তবে বর্তমানে এই সেক্টরটা খুব একটা ভালো যাচ্ছে না। এই জন্য একটু সাবধানে, সতর্কতার সাথে, ভেবে চিন্তে পদক্ষেপ নিচ্ছি।  ভবিষ্যতে প্যারেন্ট স্টক ফার্ম ও হ্যাচারি করারও চিন্তা ভাবনা চলছে। সেই সাথে মৎস্য খামার ও হ্যাচারি করার পরিকল্পনা রয়েছে।

এগ্রিনিউজ২৪.কম: আপনি একটু আগে কথা বললেন যে, বর্তমানে বাংলাদেশে এই সেক্টরটা খুব একটা ভালো যাচ্ছে নাপোলট্রি সেক্টরে একজন অভিজ্ঞ ব্যাক্তি হিসেবে, ‘এই ভালো না যাওয়ার’ পেছনে কি কারণ থাকতে পারে বলে আপনি মনে করেন?

কৃষিবিদ মো. জাহিদুল ইসলাম: আসলে একটা বিষয়ে লক্ষ্য করবেন যে, আমাদের দেশে অবাস্তব হলেও সত্যি আমরা যেসব তথ্য বা ডাটার ওপর ভিত্তি করে কাজ করি সেগুলোর কোনোটার ওপরই শতভাগ ভরসা করা যায় না। যেমন-হঠাৎ করে একটা ঘোষণা আসলো যে, আগামি ৫ বছরের মধ্যে পোলট্রি সেক্টরে প্রবৃদ্ধি হবে ১০০%। সুতরাং, আমরা অনেকটা না বুঝেই একযোগে সেক্টরে বিনিয়োগ ও উৎপাদন বাড়াতে শুরু করলাম। কিন্তু এটাতো কনজিউম হতে হবে তাই না? শুধু উৎপাদন করলাম কিন্তু কনজিউম হলো না, তাহলে সবাই ক্ষতির সম্মুখীন হবে। আবার এই কনজিউমটা নির্ভর করে ভোক্তা বা কনজ্যুমারের ওপর। ভোক্তা কখন কি খাবে সেটা বলা খুব মুশকিল। তারা ইচ্ছে করলে ডিম খাবে, আবার মন চাইলে মাছ বা মাংস খাবে। এখানে তাদের ওপর চাপিয়ে দেয়ার কিছু নাই। আমরা কিন্তু আমাদের গ্রোথটা ১০০% ঠিকই করেছি। তবে সেটি সঠিক সময়ে না। তাই ফাইনালি দেখা যায় মুরগি, মাংস, মাছ ও ডিম সব জায়গাতেই আমরা অধিক উৎপাদন এবং এতে করে ছোট-বড় সব ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

আর এই অতিরিক্ত উৎপাদনের কারণে, আমরা কম বেশি সবাই সাফারার হচ্ছি। তবে প্রান্তিক খামারিরার স্বাভাবিকভাবেই একটু বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। বিগত এক বছর ধরে ডিম উৎপাদকদেরতো খুবই খারাপ অবস্থা। যেখানে একটা ডিমের উৎপাদন খরচই পড়ে মিনিমাম প্রায় পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচ টাকা, সেখানে একজন খামারী ডিমপ্রতি দাম পাচ্চে মাত্র ৪.৫০ থেকে ৪.৭৫ টাকা। তার মানে প্রতি ডিমে খামারিকে লস গুনতে হচ্ছে ০.৫০ থেকে ০.৭৫ পয়সা। এ সমস্ত কারণে, পোলট্রি শিল্পের আমরা সবাই ভীতির মধ্যেই আছি।

এগ্রিনিউজ২৪.কম: প্রান্তিক খামারিরার বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণ কি বলে আপনি মনে করেন?

কৃষিবিদ মো. জাহিদুল ইসলাম: আমাদের পোলট্রি নীতিমালায় অনেক গ্যাপ রয়ে গেছে। আমাদের গুটিকয়েক দেশি, বিদেশি কোম্পানি মনে করছেন- আমরাই ফিড উৎপাদন করবো, আমরাই বাচ্চা উৎপাদন করবো, এমনকি ডিম, লেয়ার, ব্রয়লার সব নিজেরাই উৎপাদন করবো যাকে ইন্টিগ্রেশন ফার্ম বা সমন্বিত খামার বলা হয়।  এ ব্যাপারে কিন্তু আমাদের দেশের পলিসি মেকার বা সাইনটিস্টরা কোনো বাধা দিচ্ছেন না। অথচ এসব একটা নিয়ম নীতির মধ্যে থাকা দরকার। অপরদিকে আমি যদি রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে ফার্মার ডেভেলপের কথা বলি তাহলে কিন্তু দেখবেন- আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কি বলছেন? উনি সব সময়ই বলেন যে, আমাদের প্রতিটি বাড়িই হবে একটি খামার। আপনি চায়নাতে গেলে দেখবেন, সেখানে প্রতিটি বাড়িই এক একটি ইন্ডাস্ট্রি। এ কারণেই আজকে তারা এত উন্নত।

আমাদের দেশের রাষ্ট্রীয়ভাবে ঘোষণা করা হয়েছে দেশের প্রতিটি বাড়ি হবে এক একটি খামার। অথচ সামগ্রিক উৎপাদন ব্যবস্থা গুটিকয়েক বড় উৎপাদক ও বিদেশি কোম্পানির হাতে চলে যাচেছ। তাহলে, ‘একটি বাড়ি, একটি খামার’ হওয়া কীভাবে সম্ভব? আমরা বার বার বলি যে, ছোট ছোট খামারগুলো ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আমরা কখনো চিন্তা করি না যে, প্রায় ১০০ টা ছোট খামার সমান ইন্টিগ্রেশন কোম্পানিগুলোর ১টা প্রোডাকশন সেড।

এগ্রিনিউজ২৪.কম: এই অবস্থা থেকে উত্তরণের কি উপায় আছে বলে আপনি মনে করেন?

কৃষিবিদ মো. জাহিদুল ইসলাম: যেহেতু আমাদের দেশে সম্পদ কম, জনসংখ্যা বেশি, বেকারত্বের হার বেশি সেহেতু আমি মনে করি, আমাদেরকে এত দ্রুত ইন্টিগ্রেশন নিয়ে দৌড়ালে হবে না। ইন্টিগ্রেশন করলেও সেটি একটা নিয়ম কাঠামোর মধ্যে করতে হবে।

আমাদের দেশে বিভিন্ন বিদেশি প্রতিষ্ঠান আছে তারা বিনা ট্যাক্সে উৎপাদন করে আমাদের দেশেই ব্যবসা করে যাচেছ। তাছাড়া তারা খুব কম সুদে বিদেশ থেকে ঋণ সুবিধা পায়। ফলে দেশীয় যেকোন কোম্পানি থেকে তাদের উৎপাদন খরচ কম পড়ে। এক ধরনের অসম প্রতিযোগিতা চলছে এ শিল্পে। এজন্য  বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর বাড়তি ট্যাক্স আরোপ করতে হবে।

ইন্টিগ্রেশনের ক্ষেত্রে যেটি করা যায়, তা হলো- ফিডমিল, বাচ্চা, কমার্শিয়াল মিট বা ব্রয়লার মুরগি ও ডিম -এই সমস্ত ক্ষেত্রে ট্যাক্সের একটা স্তর করে দিতে পারে। যেমন- ফিড এবং বাচ্চা উৎপাদক একটা গ্রুপ থাকবে। তারা যখন প্রধান পণ্য (যেমন-বাচ্চা ও ফিড) উৎপাদন করবে তখন ট্যাক্স দেয়ার দরকার নাই। আবার ধরেন, এই শ্রেণীভুক্ত উৎপাদকেরা কমার্শিয়াল লেয়ার বা ব্রয়লার বাচ্চা করতে চাইলে প্রথম ৫০ হাজার বাচ্চা উৎপাদনের জন্য কোনো ট্যাক্স দিতে হবে না। এরপর না হয় ধাপে ধাপে ট্যাক্স বাড়ালো। ডিম উৎপাদনের ক্ষেত্রেও এমন একটা কৌশল হতে পারে। এতে করে যে সমস্ত প্রান্তিক খামারি যারা লাভবান হতে পারছেননা, তারা অধিক উৎপাদন খরচ থেকে একটু রেহাই পাবেন এবং শিল্পটার দিকে তাদের মনোযোগ বাড়বে। এর ফলে আমাদের গ্রাম্য অর্থনীতির চাকা সচল থাকবে। সরকার যদি যুক্তিসংগত পলিসির মাধ্যমে ট্যাক্স আদায় করে, তাহলে দেখা যাবে পোল্ট্রি সেক্টর থেকেই বড় অংকের ট্যাক্স আদায় করতে পারবে। তবে কোনকিছুই চাপিয়ে দেয়া চলবেনা, স্টেকহোল্ডারদের সাথে আলোচনার ভিত্তিতে সেটি হতে পারে।

এগ্রিনিউজ২৪.কম: পোলট্রিতে এন্টিবায়োটিক ব্যবহার নিয়ে এক ধরনের আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে দেশে – এ ব্যাপারে আপনার বক্তব্য কি?

কৃষিবিদ মো. জাহিদুল ইসলাম: খুব সুন্দর প্রশ্ন। একটা ব্যাপার খেয়াল করবেন, আমাদের দেশের অনেক নীতি নির্ধারক এবং যারা বিজ্ঞানী আছেন তাঁরা কথায় কথায় উন্নত বিশ্বের প্রসঙ্গ টানেন। কিন্তু সবক্ষেত্রে বাংলাদেশকে উন্নত বিশ্বের সাথে তুলনা করে চললে চলবে? আমাদের সে অবস্থা বা সামর্থ্য, সম্পদ, জায়গা, পরিবেশ যাই বলেননা কেন- সেটি আছে? এই যে, বর্তমানে ফিডে বা পোল্ট্রিতে এন্টিবায়োটিক নিয়ে এত কথা হচ্ছে- এন্টিবায়োটিক বাদ দিতে হবে, কেন এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হচ্ছে ইত্যাদি।  ওয়ার্ল্ডে ব্রাজিল সবচেয়ে বড় মাংস রপ্তানিকারক দেশ হয়েও, সেখানে এন্টিবায়োটিক ব্যবহার চলছে। কিন্তু আমরা কখনো আমাদের নিজেদের অবস্থার কথা চিন্তা করি না। আমরা একটা জিনিস খুব ভালো পারি সেটা হলো কোনো কিছুকে চাপিয়ে দেয়া। এফএও (FAO) বা ইউরোপীয় ইউনিয়ন (EU) যা বলছে তার বেসিসে চাপিয়ে দেয়া হয়। এই চাপিয়ে দেয়ার মনোভাব পরিত্যাগ করে বাস্তবিক অবস্থার নিরিখে পরিকল্পনা করতে হবে।

এগ্রিনিউজ২৪.কম: তাহলে কী আপনি এন্টিবায়োটিক ব্যবহার বন্ধ হোক সেটি চাইছেন না?

কৃষিবিদ মো. জাহিদুল ইসলাম: দেখুন আমি এন্টিবায়োটিক ব্যবহার বন্ধ কিংবা চালু কোনটারই পক্ষেনা। আমার কথা হলো আমাদের অবস্থার নিরিখে ব্যবস্থা নিতে হবে। আমরা যদি ইউরোপীয় ইউনিয়ন দেশগুলোর কখা বলি, সেখানে কিন্তু বছরে প্রায় ৮ মাস ঠাণ্ডা থাকে। সেক্ষেত্রে তারা এন্টিবায়োটিক বন্ধ করার বিষয়ে যতটা সহজে ঘোষণা দিতে পারে, আমরা সেটি পারিনা। কারণ, আমাদের দেশের যে গড় তাপমাত্রা ও আদ্রর্তা সেক্ষেত্রে অবাস্তব এবং সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।

এগ্রিনিউজ২৪.কম: অনেকের ধারণা ফার্মের মুরগির চেয়ে দেশি মুরগি বেশি নিরাপদ। একজন পুষ্টিবিদ হিসেবে আপনি কী মনে করেন?

কৃষিবিদ মো. জাহিদুল ইসলাম: না না, এটা আমাদের ভুল ধারনা। কারণ, আমাদের ইনভায়রনমেন্টটা কি সেটা আগে বুঝতে হবে। দেশি মুরগিতে যে সাবক্লিনিক্যালি সালমোনেলা নাই, ই-কোলাই নাই -এর গ্যারান্টি কে দেবে? আমি মনে করি, আমাদের দেশে থাকাটাই বরং স্বাভাবিক। এখানে গরু, মুরগি, হাস, ছাগল সব একসাথে পালন করা হয়। যেখানে বায়োসিকিউরিটির কোনো ব্যবস্থা নাই। তাহলে এখান থেকে আমরা কিভাবে সেইফ চিকেন আশা করতে পারি?

এ প্রসঙ্গে আমরা একটা অভিজ্ঞতা আপনার সাথে শেয়ার করতে চাই। আজ থেকে প্রায় ১২ বছর আগে আমরা একটি এক্সপেরিমেন্ট করেছিলাম দেশি ও ফার্মের ডিম নিয়ে। তখন ডিমের অভ্যন্তরে ব্যাকটেরিয়াল কাউন্ট করেছিলাম। সেই সময় এমনকি এখনো অনেকে বলেন- দেশি ডিম ভালো, পুষ্টি বেশি, টেস্টও বেশি। কিন্তু আপনি শুনলে অবাক হবেন যে, সেই পরীক্ষাতে ফার্মের ডিমের তুলনায় দেশি ডিমে অনেকগুণ বেশি ব্যাকটেরিয়াল কলোনী পাওয়া গিয়েছিল যা বাচ্চাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। তারমানে, আমরা আমাদের বাচ্চাদের সেইফ চিকেন মনে করে যা খাওয়াচ্ছি সত্যিকার অর্থে সেগুলো সেইফ ফুড না। একটা ফার্ম যেভাবে বায়োসিকিউরিটি মেইনটেইন করে, যেভাবে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখে সেখানে একটা দেশি মুরগির ক্ষেত্রে করা হয় না। কারণ, সে মুরগিটা বিভিন্ন জিনিস খুটে খুটে খায়, বিভিন্ন জায়গায় যাচ্ছে সেখান থেকে সে কিন্তু ব্যাকটেরিয়া বহন করে নিয়ে আসছে। যদিও সে মুরগিটা মারা যাচ্ছে না। হয়তো তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি। আমরা অনেকে জানিইনা, নিজেদের অজান্তে আমাদের বাচ্চাদের সেই ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়াযুক্ত ডিম খাওয়াচ্ছি নিরাপদ মনে করে।

এগ্রিনিউজ২৪.কম: পোলট্রি শিল্পে ক্যারিয়ার গঠনের পেছনে কার অবদানকে আপনি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন?

কৃষিবিদ মো. জাহিদুল ইসলাম: আমাকে যদি এক কথা উত্তর দিতে হয় তাহলে বলবো, প্যারাগন গ্রুপের মাননীয় ব্যবস্থাপনা পরিচালক জনাব মসিউর রহমান স্যার ও পরিচালক মিসেস ইয়াসমিন রহমান ম্যাডাম। ব্যাক্তিগতভাবে আমি তাদের কাছে ঋণী, কারণ অনেক কিছু শিখেছি তাঁদের কাছ থেকে।

This post has already been read 8149 times!

Check Also

পোল্ট্রি বিষয়ক জ্ঞান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সম্মিলন ঘটিয়েছে ‘আন্তর্জাতিক পোল্ট্রি শো ও সেমিনার’-মসিউর রহমান

জনাব মসিউর রহমান- বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি) এবং পোলট্রি সায়েন্স এসোসিয়েশন -বাংলাদেশ শাখা …