মো. সোহেল রানা : নতুন ফিডমিল শুরু করতে কয়েকটি বিষয়ের ওপর সবসময় গুরুত্বারোপ করতে হয়। প্রাথমিকভাবে আপনি এই বিষয়গুলো গুরুত্ব না দিলে পরবর্তী সময় অনেক সমস্যায় পড়তে হয়। আপনাদের ধারনার জন্য কিছু প্রাথমিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হল। তবে বিনিয়োগ যদি অপর্যাপ্ত হয় তাহলে এরকম প্রকল্প শুরু না করাই ভালো।
প্রয়োজনীয় জমির পরিমাণ : একটি ফিড মিলের জন্য কতটুকু জমি দরকার তা নির্দিষ্ট করে বলা যায় না। কারণ ফিডের পরিমাণ, ফিডের ধরন, গুদামজাত খাদ্যের পরিমাণ, অফিস, বাসস্থান, পরিবহন ব্যবস্থা, বিভিন্ন অবকাঠামো, ভবিষ্যৎ সম্প্রসারণ নীতিসহ বিভিন্ন বিষয়ের ওপর জমির পরিমাণ নির্ভর করে। এই বিষয়গুলোর জন্য যে পরিমাণ জমির দরকার তা হিসেব করে নেয়া ভালো। সাধারণত ২ থেকে ৫ একর জমি একটি ফিডমিলের জন্য আদর্শ। প্রকল্পটির পাশেই যদি গাড়ী পার্কিং অথবা ট্রাক রাখার জায়গা থাকে; সেক্ষেত্রে এর থেকে কম পরিমাণ জমি হলেও চলবে।
জমির পরিমাণ বেশি হলে ক্ষতি নেই সেক্ষেত্রে ফিড মিলে সুন্দর একটি পরিবেশ তৈরি করে নেয়া যায়। ফিডের প্রকারভেদ-
কোর্স ফিড: লেয়ার ফিড, ক্যাটল ফিড, ইত্যাদি;
পিলেট ফিড: পোল্ট্রি ফিড, সিংকিং (ডুবন্ত) ফিস ফিড, শ্রিম্প ফিড, ক্যাটল সাপলিমেন্ট ফিড, ইত্যাদি;
এক্সট্রুডেড ফিড: ফ্লোটিং (ভাসমান) ফিস ফিড, পেট ফুড, শ্রিম্প ফিড, ইত্যাদি;
টিএমআর: (টোটাল মিক্সড রেশন) ফিড
বিভিন্ন প্রকার ফিড থেকে আপনাকে বেছে নিতে হবে কোন ধরনের ফিড তৈরি করবেন। আপনি একসাথে মাছের ডুবন্ত ও ভাসমান ফিড অথবা পোল্ট্রি পিলেট ফিড ও কোর্স ফিড তৈরির প্রযুক্তি গ্রহণ করতে পারেন। এমনকি আপনি একসাথে পোল্ট্রি ও মাছের ফিড তৈরির প্রযুক্তিও নিতে পারেন সেক্ষেত্রে অবশ্য একটির সাথে আরেকটির কাঁচামালের সংস্পর্শের সম্ভাবনা থাকে। দেখা গেছে অনেকেই প্রথমে এভাবে শুরু করে এবং ফিডের ভালো বাজার তৈরি হয়ে গেলে তারা প্রত্যেকটিকে আলাদা আলাদা লাইনে তৈরি করে।
ফিডমিলের উৎপাদনক্ষমতা : এটিও অবশ্যই আপনার পরিকল্পনার মধ্যে থাকতে হবে। ফিডের বাজার যাচাই করে এবং ফিডের প্রকৃতির ওপর নির্ভর করে ফিডমিলের উৎপাদনক্ষমতা সম্পর্কে আপনাকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। আমাদের দেশে এবং আপনার এলাকায় গত ১৫-২০ বছরে ফিডের চাহিদা কি পরিমাণ ছিল তা পর্যবেক্ষণ করতে হবে এবং ভবিষ্যতে কতোটুকু ফিডের চাহিদা বাড়বে তা এখনই ভেবে রাখতে হবে। নতুবা ভবিষ্যতে ফিডের চাহিদা বাড়ার সাথে সাথে হয়তো প্রকল্পটির সম্প্রসারণ করা সম্ভব নাও হতে পারে। ফিডমিলের উৎপাদনক্ষমতা ঘন্টায় হিসাব করা হয়।
আপনি ৩-৪ মেট্রিক টন/ঘন্টা, ৫-৭ মেট্রিক টন/ঘন্টা, ১০-১২ মেট্রিক টন/ঘন্টা, ২০-২২ মেট্রিক টন/ঘন্টা, ৩০-৩২ মেট্রিক টন/ঘন্টা অথবা আরো বেশি উৎপাদন ক্ষমতার ফিডমিল শুরু করতে পারেন।
বিনিয়োগ : জমির পরিমাণ, ফিড মিলের ধরন, স্থাপনা নির্মাণ, মেশিনপত্র, ব্যবস্থাপনা বিভিন্ন বিষয়ে আপনার সিদ্ধান্তের উপর বিনিয়োগের পরিমাণ নির্ভর করবে। ঝুঁকির সম্ভাবনা: যদি ফিডের মান ভালো হয়, শক্তিশালী বাজার তৈরী করা যায়, খামারী ও ডিলারদের সাথে ভালো সম্পর্ক তৈরী ও পারস্পরিক সহযোগীতা থাকে তবে বিনিয়োগটা লাভজনক হবে এবং দ্রুত মূলধন উঠে আসবে। আর যদি তা না হয় তবে ফিড ব্যবসায় বেশীদুর অগ্রসর হওয়া যাবে না।
বাজারজাতকরণ : আপনি পন্য তৈরি করলেন কিন্তু কোথায় বাজারজাত করবেন তা ঠিক করেননি তাহলে সবশেষ। তাই পন্য তৈরি করার পূর্বে আপনার পন্য বিক্রি করতে হবে, এ জন্য প্রথম অবস্থায় আপনার দরকার হবে ছোট করে একটি সেলস্ এন্ড মার্কেটিং টিম। অবশ্য খেয়াল রাখতে হবে আপনার সেলস্ টিমের প্রধান যেন হয় এই সেক্টরে সাথে জানাশুনা এবং প্রফেশনাল সেলস্ ব্যাক্তিত্ব।