মোহাম্মদ শাহ জাহান: ইভেন্ট দেয়া হয়েছে কয়েকদিন আগেই। খুব ধুমধাম করে প্রচারণা চালানো হলো। কিন্তু শেষ মুহুর্তে এসে বৃষ্টির কারণে ৮/১০ জন ট্যুর বাতিল করলো। কিন্তু তাতেও আমাদের ভ্রমণের উত্তেজনা থামলো না। See Bangladesh এর মাধ্যমে গত ৩ মে রাত ১১.১০ মিনিটে ইউনিক পরিবহনে রওনা দিলাম চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে। বৃহস্পতিবার রাত বিধায় চৌদ্দগ্রাম থেকে ফেনী পযর্ন্ত প্রচন্ড জ্যামের কারণে লাকসাম-চৌমুহনী-মহিপাল রুট দিয়ে ড্রাইভার ভোর ৫ টায় আমাদেরকে গন্তব্যে পৌছে দিলো।
সীতাকুন্ড: নাস্তা সেরেই আমরা চলে গেলাম সীতাকুন্ড। সেখান থেকে হাল্কা বিস্কুট ও পানি নিলাম। কারণ, পাহাড়ে উঠার সময় পানি লাগবে। সিএনজিতে (ভাড়া জনপ্রতি ২০ টাকা) করে চন্দ্রনাথ পাহাড়ের কাছে গেলাম। আমরা এক সিএনজিতে করে ৬ জন গেলাম।
তারপর দোকান থেকে সবাই লাঠি নিলাম ২০ টাকা করে (লাঠি ফেরত দিলে ১০ টাকা ফেরত দিবে)। শুরু হলো পাহাড়ের ট্যাকিং। আমরা সকাল ৯ টায় শুরু করলাম (যদিও পাহাড়ে ভোর বেলা উঠা ভাল)। আমাদের টার্গেট ছিলো আস্তে আস্তে অতি সতর্কতার সহিত। সিঁড়ি ও কাঁচা রাস্তা রয়েছে। সবাই খুব সাবধানে উঠছে। শুক্রবার বিধায় অনেক পর্যটক আসছে। আমাদের বামের রাস্তা অর্থাৎ বামের সিঁড়ি দিয়ে উঠতে হবে। এর মধ্যেই যেখানে ভালো লাগছে সেখানেই দাড়িয়ে গ্রুপ বা সিংগেল ছবি তুলছি। একটু পরেই দিপু ভাই অসুস্থ হয়ে গেল। দিপু ভাইকে সুস্থ করার জন্য ইব্রাহিম ভাই মাথায় পানি দিতে লাগলো। আমি তাকে বললাম শরীর যেন না ছাড়ে। যাক পরে সুস্থ হয়েই আমাদের সাথে উপরে উঠতে লাগলো। সীতাকুন্ড শহরের পূর্বে অবস্থিত চন্দ্রনাথ পাহাড় ১১৫২ ফুট উঁচু এবং চট্টগ্রাম জেলার সর্বোচ্চ স্থান। সীতাকুন্ড অপরুপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের লীলাভূমি। এ এলাকাকে হিন্দুদের বড় তীর্থস্থান বলা হয়। এখানে সর্বোচ্চ পাহাড় চুড়ায় অবস্থিত চন্দ্রনাথ মন্দির। এখানে আরো রয়েছে ক্রমধেশ্বরী কালী মন্দির, ভোলানন্দ গিরি সেবাশ্রম, শ্রী শ্রী লোকনাথ ব্রাহ্মচারী সেবাশ্রম, শ্রী রামকৃষ্ণ সেবাশ্রম। আমরা সীবের মন্দিরে উঠার পর হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হলো। যাওয়ার সময় রাস্তার দুই ধারে প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হলাম।
গুলিয়াখালী: সীতাকুন্ডে দুপুরের অল্প খরচে ও মজাদার খাবার, লইট্যা মাছ ও পোয়া মাছ দিয়ে খেলাম। খাবার খেয়েই অটোতে উঠলাম আমরা ৬ জন। গুলিয়াখালী নেমেই আমরা একটা ট্রলারে উঠলাম ভাড়া ৪০ টাকা করে (দরদাম করতে হবে)। একটা কথা বলে রাখা ভালো, গুলিয়াখালীতে গেলে ট্রলারে উঠতে ভুলবেন না। কারণ, অসাধারণ অনুভুতি হবে। সাগরের টেউ আছড়ে পড়বে আপনার ট্রলারে। কি এক মজা ও অন্য রকম অনুভুতি। ট্রলার থেকে নেমে আমরা গ্রুপ ছবি তুললাম। তারপর গোসল করতে নেমে গেলো সবাই। গুলিয়াখালীর সবচেয়ে আকর্ষণীয় জিনিস হলো বিভিন্ন জায়গায় গর্ত। এক একটা গর্তের সামনে গেলে মনে হবে, এই যেন একটা শাপ বা লতা আমাকে আকড়ে ধরবে। অনেক সময় অতিবাহিত করলাম। শুক্রবার বিদায় অনেক লোক বেড়াতে আসলো। হঠাৎ বৃষ্টির সম্ভাবনা দেখা দেয়ায় আমরা চলে আসলাম তা না হলে সন্ধ্যা পযর্ন্ত থাকার ইচ্ছা ছিলো। সীতাকুন্ড হতে কুমিরা জেটিতে আসতে আসতে আমাদের সন্ধ্যা হয়ে গেল। তারপর জেটিতে গিয়ে গান বাজনা করলাম অনেকক্ষণ। রাতের গাড়ীতে করেই ঢাকা চলে আসলাম। এভাবে একদিনের একটা রোমাজ্ঞকর ভ্রমণ করে আসলাম See Bangladesh এর সাথে।
কখন যাবেন
*শীতকালে ভোরের সকালে
* যেকোনো দিন ভোরে
কিভাবে যাবেন
*ঢাকা থেকে সায়েদাবাদে যেকোনো বাসে (চট্টগ্রামের) ভাড়া 480 টাকা।
*সীতাকুন্ড নেমে চন্দ্রনাথ পাহাড় পযর্ন্ত ২০ টাকা অটো
*চন্দ্রনাথ পাহাড় থেকে ২০ টাকায় সীতাকুন্ড
* সীতাকুন্ড থেকে পশ্চিমে গুলিয়াখালী ২০ টাকা অটো
*আমরা ভ্রমণ করতে গিয়ে যেখানে সেখানে ময়লা, শুকনো খাবারের প্যাকেট, প্লাস্টিক বোতল/জার, কলার খোসা, ইত্যাদি ফেলা থেকে কঠোরভাবে বিরত থাকবো। এগুলা আমাদের পরিবেশ দূষণ করার সাথে সাথে আমাদের ভ্রমণের জায়গাগুলোও নষ্ট করছে।
সবাইকে অনুরোধ করছি আমরা আমাদের পরিবেশ দূষণ করবো না।