মো. মুস্তাফিজুর রহমান পাপ্পু (পবিপ্রবি): বিদেশের মাটিতে নিজ কাজের মাধ্যমে বিভিন্ন সময় বাংলাদেশী বিজ্ঞানীরা প্রিয় মাতৃভুমির নাম উজ্জল করেছেন। তাদেরই একজন পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদালয়-এর মেডিসিন, সার্জারী ও অবস্টেট্রিক্স বিভাগ-এর সহযোগী অধ্যাপক ড. দিব্যেন্দু বিশ্বাস। সম্প্রতি দক্ষিণ কোরিয়াতে তিনি এক অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছেন।
প্রায় দীর্ঘ ১০ মাস দক্ষিণ কোরিয়াস্থ চনবুক ন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা করার পর তিনি এই সাফল্য পান। তার গবেষণা বিষয়বস্তু ছিলো গবেষণাগারে ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশনের (IVF) মাধ্যমে সফলভাবে স্বাস্থ্যবান শুকরের ভ্রূণ তৈরি করা। এ যাবতকাল পর্যন্ত মাইক্রোড্রপ (Microdrop culture) পদ্ধতিতে IVF -এর মাধ্যমে গবেষণাগারে শুকরের ভ্রূণ তৈরি করা হয়ে আসছিল।
এ বিষয়ে ড. দিবেন্দু বলেন, “মাইক্রোড্রপ পদ্ধতিতে IVF -এর মাধ্যমে স্বাস্থ্যবান ভ্রূণ তৈরির প্রধান অন্তরায় হলো পলিস্পার্মি অর্থাৎ একসংগে অনেকগুলো শুক্রানু ডিম্বানুর ভিতর প্রবেশ করা। যার কারণে, পলিস্পার্মি যুক্ত ডিম্বাণু ভ্রূণ তৈরি করতে পারে না। যদিও এ পর্যন্ত মাইক্রোড্রপ-এর পরিবর্তে আরো অনেক পদ্ধতি আবিস্কৃত হয়েছে। কিন্ত সেসব পদ্ধতি অনেক ব্যয়বহুল ও জটিল এবং সময়সাপেক্ষ যা সব গবেষণাগারে করা সম্ভব নয়। তারপরেও এখন পর্যন্ত এই Microdrop culture সব ধরনের ভ্রূণ তৈরিতে ব্যবহার হয়ে আসছে।”
ড. বিশ্বাস এই বহুল ব্যবহৃত Microdrop culture -এর পাশাপাশি “Column Culture” পদ্ধতি ব্যবহার করেন। তিনি দেখতে পান নুতন এই পদ্ধতিতে তৈরিকৃত ভ্রূণ বহুল ব্যবহৃত Microdrop culture -এর ভ্রূণ থেকে অনেক স্বাস্থ্যবান ও প্রতি ভ্রুনে কোষের সংখ্যাও অনেক বেশি। তিনি আরো দেখতে পান তুলনামূলকভাবে নুতন পদ্ধতিতে একটিমাত্র শুক্রাণুযুক্ত ভ্রূণ (Monospermic zygote)-এর সংখ্যা অনেক বেশি।
Apoptosis সম্পর্কযুক্ত জীনগুলোর আধিক্যও নুতন পদ্ধতিতে তৈরিকৃত ভ্রুনে তুলনামূলক কম। প্রাকৃতিকভাবে ডিম্বাণুর সাথে শুক্রাণু মিলিত হওয়ার পূর্বে তাকে অনেকখানি পথ পাড়ি দিতে হয়। গবেষণাগারে Microdrop culture মাধ্যমে শুক্রাণুর দৌড়ানোর ব্যবস্থা খুবই সীমিত এবং একই জায়গার ভেতর জীবিত ও মৃত অনেক সংখ্যক শুক্রাণু থাকার কারণে গবেষণাগারে বিশেষ করে শুকরের ডিম্বাণুর ভেতর একের অধিক শুক্রাণু প্রবেশ করা স্বাভাবিক। কিন্তু তার উদ্ভাবিত পদ্ধতিতে সমস্ত শুক্রাণুকে কিছুটা পথ দৌড়ানোর পর সবচেয়ে ভালো এবং স্বাস্থ্যসম্মত শুক্রানুই ডিম্বাণুর সাথে মিলিত হওয়ার সুযোগ পায়, যার কারণে নুতন পদ্ধতিতে উৎপাদিত ভ্রূণগুলো অনেক স্বাস্থ্যবান ও গুনগতমানসম্পন্য হয়।
ড. বিশ্বাস আশা করেন, তাঁর এই নুতন উদ্ভাবিত “ভ্রূণ উৎপাদন কৌশল” ভ্রূণবিদ্যায় স্বাস্থ্যসম্মত ভ্রূণ তৈরিতে নুতন পথের নিশানা দেখাবে। তার গবেষণার ফলাফল শীঘ্রই আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশের অপেক্ষায়। উক্ত গবেষণা কার্যের সার্বিক তত্ববধায়ক ছিলেন প্রফেসর ড. স্যাং হান হেয়ন।
উল্লেখ্য, তিনি শুকরের ভ্রূণ ক্লোনিং ও ভ্রূণ উৎপাদন বিষয়ে কৃতিত্বের সাথে পি.এইচ.ডি. ডিগ্রী অর্জন করেন। তিনি বর্তমানে “Research Professor” হিসাবে দক্ষিণ কোরিয়ার চনবুক ন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়-এ কর্মরত আছেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি বিবাহিত ও এক কন্যা সন্তানের জনক।