শুক্রবার , নভেম্বর ২২ ২০২৪

পোল্ট্রি ও ডেইরির বিষমুক্ত পণ্য উৎপাদক একজন মাহামুদুল হাসানের গল্প

সেখ জিয়াউর রহমান (রংপুর) : অফিসের এক সহকর্মি সেদিন বলেছিলেন, আজকাল বিষেও ভেজাল। বিষ খেলেও কোনো কাজ হয় না। এ কথার যথার্থতা নেই, এমনটা বলা যাবে না। বর্তমানে নামিদামি শপিং মলগুলোতে যে খাবার পাওয়া যায় সেখানেও বিষের অস্তিত্বের খবর প্রায়ই শোনা যায়। প্যাকেটজাত খাবার থেকে শুরু করে খোলা বাজার পর্যন্ত সবকিছুতেই ভেজালের ছড়াছড়ি। স্বাস্থ্যসম্মত বিষমুক্ত খাবারের পর্যাপ্ততা আজকাল বড়ই অভাব। প্রতিনিয়ত ভেজাল খাবার খেয়ে বাড়ছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি। কমছে গড় আয়ু। খাবারে থাকা কীটনাশকের প্রভাব বয়ে চলছে বংশগতিতেও। এমন সংকটময় পরিস্থিতিতে সুখবর বয়ে আনতে পারে কোনো ভেজালমুক্ত এবং কীটনাশকমুক্ত খাবারের সন্ধান। এমনি এক খামারের সন্ধান মিলেছে রংপুর সদরের অদূরে গঙ্গাচড়া উপজেলায়। খামারের নাম ‘ক্রিয়েটিভ পোল্ট্রি এন্ড ডেইরি ফার্ম’।

গঙ্গাচড়া উপজেলার নীলকচন্ডি গ্রামে এ খামারের প্রধান উদ্যোক্তা কৃষিবিদ হাফেজ মো. মাহামুদুল হাসান। নীলকচন্ডিতে যান্ত্রিক শহুরে জীবনের কোনো ছাপ নেই বলেই চলে। চারদিকে দিগন্ত জোড়া ধানক্ষেত। কোথাও কোথাও গড়ে উঠছে ফুল ও ফলের বাগান, আছে রাস্তার দু’পাশে নার্সারিও। গ্রামের দিকে তাকালে চোখ পড়েছে ছোট ছোট পুকুর। সেগুলোতে করা হয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ। এমন অবস্থা দেখে মনে হয় ওই গ্রামে অভাব খুব কম।

এমন এক পরিবেশে কৃষিবিদ হাফেজ মো. মাহামুদুল হাসানের নিজস্ব উদ্যাগে তৈরি করেছে এন্টিবায়োটিকমুক্ত স্বাস্থ্যসম্মত মুরগি ও গরুর খামার। এ খামারে উৎপাদন হয় দুধ ও মাংস। তবে খামারের প্রধান পণ্য ডিম। বাজারে সচরাচর যে ডিম পাওয়া যায় এ ডিম সেই ডিম নয়। ক্রিয়েটিভ খামারে যেসব ডিম উৎপাদন করা হয় সেসব ডিম এন্টিবায়োটিক, বিষ, ব্যাকটেরিয়া এবং জীবাণুমুক্ত বলে দাবী করেন হাফেজ মাহামুদুল। কেবল নিরামিষ খাদ্য দ্বারা পালিত মুরগি থেকে এসব ডিম সংগৃহীত হয়। এমনকি আন্তর্জাতিক মানের মেশিনে বাছাইকৃত নিদিষ্ট ওজনের এবং মেশিনে ধৌত করে জীবাণুমুক্ত করা হয় এসব ডিম।

ডিমের সাধারণত তিনটি স্তর থাকে। কিন্তু বাজারে যেসব ডিম পাওয়া যায় তাতে তিনটি স্তর লক্ষ করা যায় না। কিন্তু ক্রিয়েটিভ খামারের উৎপাদিত ডিমে তিনটি স্তর ষ্পষ্ট, যা ডিমের শতভাগ স্বাস্থ্যসম্মত নিশ্চিত করে। এসব ডিমের কুসুমের রঙ আন্তর্জাতিক এগ কালার মিটার স্কেলের ১৭ দাগের মধ্যে কাক্সিক্ষত ১০ দাগ পর্যন্ত মান অর্জন করেছে। যা বাংলাদেশের বিরল কয়েকটি ঘটনার একটি। বাজারে বিক্রিত ডিমগুলো সর্বোচ্চ মিটার স্কেলের ৬ দাগ পর্যন্ত মান অর্জন করেছে। ক্রিয়েটিভ খামারে উৎপাদিত ডিমের প্রধান গ্রাহক রংপুরের সচেতন মহলের লোকজন। এদের মধ্যে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উচ্চ পদস্থ কর্মচারীরাই বেশি। রংপুরের কয়েকশত পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে এসব ডিম বিক্রি হচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে।

বর্তমানে তার খামারে উৎপাদিত ডিম উন্নতমানের প্যাকেটজাত করে ঢাকার ভালো মানের শপিং মলে বিক্রি করা হচ্ছে। ১২টি ডিমের একটি প্যাকেট ১৪৪ টাকা থেকে শুরু করে ২০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা হয়ে থাকে। তার খামারের ডিম রংপুর মহানগরে হোম ডেলিভারির মাধ্যমে বিক্রি করা হয়। এই হোম ডেলিভারির জন্য দু’জন লোক নিয়োগ করা হয়েছে। প্রতিদিন তার খামার থেকে ডিম ও দুধ নিয়ে এসে রংপুর শহরের বিভিন্ন বাসাবাড়ি ও অফিসে সরবরাহ দিয়ে থাকে। ডিমের পাশাপাশি তিনি গড়ে তুলেছেন একটি গাভীর খামার। ওই খামার থেকে উৎপাদিত দুধ ডিমের সাথে হোম ডেলিভারী দিয়ে থাকেন। ক্রিয়েটিভ খামারের একপাশে তিনি জমি ক্রয় করে করেছেন এবং সেখানে তিনি দেশীয় পদ্ধতিতে মুরগি পালন করে থাকেন। গ্রামগঞ্জের মতো ছাড়া পদ্ধতিতে এখানে মুরগি পালন করা হয়। এসব ডিম তিনি বাজারে বেশি দামে বিক্রি করে থাকেন। মাহামুদুল হাসান বলেন, মানুষ যেন ভালো মানের ডিম দুধ পায় সে লক্ষে কাজ করে যাচ্ছি। এ রকম মাহামুদুল হাসান যদি বাংলাদেশের প্রতি জেলা একজন করে তৈরি হয় তাহলে ভেজালের ভিড়ে ভালো মানের ডিম ও দুধের চাহিদা অনেকাংশে মিটানো সম্ভব হবে।

This post has already been read 9073 times!

Check Also

স্নাতক পাশ করেই নার্সারী থেকেই পিন্টুর মাসিক আয় ৫ লাখ টাকা

মিঠুন সরকার (যশোর সংবাদদাতা) : কৃষি কাজকে অনেকে কটুক্তির চোখে দেখলেও স্নাতক পাশ করেই কৃষিতে …

One comment

  1. মাহামুদুল হাসান ভাইয়ের ফোন নাম্বার বা যোগাযোগ এর একটা মাধ্যম চাই।