রবিবার , ডিসেম্বর ২২ ২০২৪

খুলনার ডুমুরিয়ায় খালে বাঁধ দিয়ে চলছে মাছ চাষ

ফকির শহিদুল ইসলাম (খুলনা) : খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার আটলিয়া ও মাগুরাঘোনা ইউনিয়নের নোনাডোরা ও বিষের খাল দু’টি দীর্ঘ দিন ধরে স্থানীয় ভূমিদস্যু কর্তৃক অবৈধভাবে খালে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করছেন। একশ্রেণীর রাজনৈতিক প্রভাবশালীর ছত্রছায়ায়  খালে আড়াআড়ি বাঁধ দিয়ে করছে মাছ চাষ। এর ফলে বর্ষাকালে পানি নিস্কাসনসহ নানা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে এলাকাবাসীর। খালের অবৈধ দখল মুক্ত করতে স্থানীয় সংসদ ও মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রীর নির্দেশনা থাকলেও অদৃশ্য কারণে দখলদ্বারদের উচ্ছেদ কার্যকর হয়নি। এর ফলে দুটি ইউনিয়নের প্রায় ২০টি বিলের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ব্যাহত হচ্ছে। এলাকার কৃষকরা জলাদ্ধতার কারণে তাদের জমি চাষাবাদ করতে পারেনা। এসব কারণে খাল দুটি থেকে বাঁধ অপসারণের দাবি জানিয়ে আসছে এলাকার আপামর জনসাধারণ।

এলাকাবাসী জানায়, উপজেলার আটলিয়া ও মাগুরাঘোনা ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত নোনাডোরা ও বিষের খাল। প্রায় চার কিলোমিার দীর্ঘ এই দুটি খাল দিয়ে ইউনিয়নের প্রায় ২০টি গ্রামের পানি কুলবাড়িয়া স্লুইস গেট দিয়ে ঘ্যাংরাইল নদীতে পড়ত। কিন্তু কয়েক বছর ধরে খাল দুটিতে বাঁধ দেয়ার কারণে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ব্যাহত হয়ে গ্রামগুলোতে মৌসুমি জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আটলিয়া ইউনিয়নের মালতিয়া, চুকনগর দক্ষিণপাড়া, চাকুন্দিয়া, কুলবাড়িয়া, উড়াবুনিয়া, গাদর চক, মাগুরাঘোনা ইউনিয়নের মাগুরাঘোনা, হোগলাডাঙ্গা, বেতাগ্রাম, আরশনগর গোদার ডাঙ্গিসহ বিভিন্ন গ্রাম ও বিলে পানি নিষ্কাশনের একমাত্র মাধ্যম হল নোনাডোরা ও বিষের খাল। কিন্তু মহল বিশেষ দীর্ঘদিন ধরে খাল দুটি দখলে নিয়ে ৪০/৪৫টি বাঁধ ও নেটপাটা দিয়ে মাছ চাষ করার ফলে সাধারণ মানুষ দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। বিশেষ করে বর্ষাকালে পানি নিষ্কাশন না হওয়ার কারণে একদিকে যেমন এলাকাবাসীকে মৌসুমী জলাবদ্ধতার কবলে পড়তে হয়, অন্যদিকে রবি মৌসুমে তাদের চাষাবাদের বিঘ্ন ঘটে।

এ প্রসঙ্গে আব্দুল গফুর মোড়ল, রবিউল ইসলাম মিঠু, অচিন্ত্য ঘোষসহ এলাকার শ’ শ’ মানুষ এই অভিযোগ করেন, স্থানীয় প্রভাবশালী আব্দুল জলিল, আলতাফ সরদার, সাত্তার গাজী, দৌলত সরদার, কামরুল ইসলাম লাভলু, সিরাজ ও সজলসহ ২০/২৫ জন দীর্ঘদিন ধরে খাল দুটি দখলে রেখে ব্যবহার করছে। ইচ্ছামত ভেঁড়ি বেঁধে ও নেটপাটা দিয়ে তারা মাছ চাষ করছে। এভাবে বাঁধ দেওয়ায় পানি নিস্কাসন হতে পারে না। আবার রবি মৌসুমে পানির অভাবে কৃষিকাজ ব্যাহত হয়। আমরা অনেক দিন ধরে খাল দুইটি উচ্ছেদের চেষ্টা করছি।

কিন্তু ক্ষমত্সীনদের প্রভাবের কারণে আজও খাল দুটির অবৈধ দখলদারদের কাছ থেকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। ইউপি চেয়ারম্যান এ্যাড. প্রতাপ কুমার রায় বলেন,  এই খাল দুইটির বিষয়ে আমি অবগত রয়েছি। সম্প্রতি দুই ইউনিয়নের জনগণ মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রীর নিকট খাল দুটি দখল মুক্ত করতে আবেদন করেছে। তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ৩১ শে মার্চ মন্ত্রী মহোদয় খাল দখলের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য খুলনা জেলা প্রশাসক মহোদয়কে নির্দেশ দেন। কিন্তু মন্ত্রীর সেই নির্দেশ জেলা প্রশাসনের লাল ফিতায় বন্ধি থাকায় খাল দখল মুক্ত করতে কার্যকর কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি জেলা প্রশাসন।

This post has already been read 4634 times!

Check Also

পরিবেশ সুরক্ষা ও পানি সাশ্রয়ে এডব্লিউডি সেচ পদ্ধতি

ড. এম আব্দুল মোমিন: ধান বাংলাদেশের প্রধান খাদ্যশস্য। আউশ, আমন  বোরো মৌসুমে আমাদের দেশে ধান …