বুধবার , অক্টোবর ৩০ ২০২৪

চিনিকলের গাদ থেকে তৈরি হচ্ছে জৈব গ্যাস ও সার : কাগুজে জটিলতায় আটকে আছে বাজারজাতকরণ

নিজস্ব প্রতিবেদক: বৈশ্বিক উন্নয়নের গতিশীলতার জন্য জ্বালানি একটি গুরুত্বপূর্ন ভুমিকা পালন করে। কিন্তু জ্বালানির প্রধান উৎস ক্রমাগত কমতে থাকায় বিশ্বব্যাপী এর বিকল্প উৎস খুজছে দীর্ঘদিন ধরেই। প্রচলিত উৎস যেমন- তেল, গ্যাস, কয়লা ইত্যাদিন পরিবেশ দূষণের জন্যও দায়ী। তাছাড়া দিন যত যাচ্ছে পৃথিবীতে বর্জ্যের পরিমাণও বাড়ছে। এই বর্জ্য থেকে কীভাবে জ্বালানি তৈরি করা যায় সেটি নিয়ে সারা বিশ্বে চলছে গবেষণা, নিত্য নতুন আবিষ্কার। পিছিয়ে নেই বাংলাদেশও। দেশের শিক্ষা নগরী হিসেবে পরিচিত রাজশাহীতে নেয়া হয়েছে এমনি এক উদ্যোগ। ইফাত বায়ো সিএনজি লি. নামে একটি প্রতিষ্ঠান চিনিকলের বর্জ্য বা গাদ (প্রেস মাড) থেকে তৈরি করছে জৈব জ্বালানি। উক্ত জৈব জ্বালানি থেকে যানবাহনের জন্য বায়ো সিএনজি, শিল্প ও গৃহস্থালী কাজের জন্য বিদ্যুৎ এবং কৃষকদের জন্য জৈব সার উৎপাদন করছে যা সম্পূর্ণরুপে পরিবেশবান্ধব বলে দাবি করেছেন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. তফিকুল ইসলাম। কিন্তু নানা প্রতিবন্ধকতায় সেটি সুষ্ঠুভাবে বাজারজাত করতে পারছেননা বলে জানিয়েছেন।

মো. তফিকুল ইসলাম এগ্রিনিউজ২৪.কম কে বলেন, বর্তমানে আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষের ধারনা বায়োগ্যাস বলতে শুধুমাত্র গোবর থেকে উৎপন্ন গ্যাসকে বোঝায়। কিন্তু পরীক্ষা করে দেখা গেছে গোবর থেকে উৎপন্ন বায়োগ্যাসের পরিমাণ অতি নগণ্য, যেমন- এক টন গোবর থেকে বায়োগ্যাস উৎপাদিত হয় ১৬-২২ কিউবিক মিটার অন্যদিকে ইফাত বায়ো সিএনজি লি. কর্তৃক ব্যবহারকৃত সুগার মিলের প্রেস মাড থেকে প্রতি টনে সর্বনিম্ন ১৫০ কিউবিক মিটার বায়োগ্যাস উৎপাদিত হচ্ছে। আমাদের বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট দেশীয় গতানুগতিক বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট থেকে সম্পুর্ণ ভিন্ন। কারণ, প্লান্টটি সম্পুর্ণভাবে মাটির উপরে তৈরি। আমাদের কাঁচামাল ও পানি মিশ্রনের জন্য স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। সবোর্চ পরিমাণ বায়োগ্যাস উৎপাদনের লক্ষে এবং ক্ষতিকর জীবাণু ধ্বংস করার জন্য হিটিং সিস্টেম ব্যবহার করা হচ্ছে। এর সাথে প্রধান ডাইজেস্টারে স্লো মিক্সিং সিস্টেম ব্যবহার করা হচ্ছে যার ফলে সর্বোচ্চ পরিমাণ বায়ো গ্যাস উৎপাদন হচ্ছে। আমরা বায়োগ্যাস পিউরিফিকেশনের জন্য আধুনিক পিএসএ পদ্বতি ব্যবহার করছি এবং কমপ্রেশনের মাধ্যমে বোতলজাত করছি। কিন্তু এত কিছুর পরও আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে আমরা সেটি বাজারজাত করতে পারছিনা।

তিনি বলেন, ইতিমধ্যে ইফাত বায়ো সিএনজি লি. কর্তৃক বাংলাদেশ সরকারের বিস্ফোরক অধিদপ্তরের প্রধান বিস্ফোরক কর্মকর্তার চিঠির মাধ্যমে অনুমোদন চেয়ে গত বছর আগস্ট মাসে যোগাযোগ করা হয়েছে। কিন্তু, এখনো পর্যন্ত আমরা সে চিঠির লিখিত কোন জবাব পাইনি। যার ফলে ইফাত বায়ো সিএনজি লি. বাসা বাড়ীর জ্বালানী ও যানবাহনের জ্বালানি হিসাবে সরবরাহ করতে পারছে না এবং বিপুল আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। এছাড়াও একই সময়ে উৎপাদিত ইফাত জৈব সারের লাইসেন্সের জন্য বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলে আবেদন করা হলে তারা মৌখিকভাবে প্রমোশনাল মার্কেটিং এর অনুমতি দেন কিন্তু লাইসেন্স প্রাপ্তিতে বিলম্ব হওয়ার কারণে সারাদেশে বাজারজাত করা যাচ্ছেনা। ফরে কৃষকগণ অতি সুলভ মূল্যে জৈব সার প্রাপ্তিতে বঞ্চিত হচ্ছেন।

এ ব্যাপারে এগ্রিনিউজ২৪.কম এর পক্ষ থেকে বাংলাদেশ সরকারের বিস্ফোরক অধিদপ্তরের প্রধান বিস্ফোরক কর্মকর্তা মো. শামসুল আলম এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমরা এ ধরনের একটি আবেদন পেয়েছি এবং তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটিও গঠন করেছি। কিন্তু ইফাত এর পক্ষ থেকে আমাদের সাথে আর যোগাযোগ করা হয়নি। তারা যোগাযোগ করলে আমরা সহযোগিতা করবো।

মো. তফিকুল ইসলাম আরো উল্লেখ করেন, বর্তমানে প্রচলিত পদ্বতিতে কমপোস্ট সার উৎপাদন করা হয় তা সম্পুর্ণরুপে পরিবেশবান্ধব নয়। কারণ, সেটিতে ব্যবহারকৃত কাঁচামাল বা ফিড স্টক থেকে কোনরুপ নবায়নযোগ্য জ্বালানি তৈরি হয়না। বিপরীতে ইফাত বায়ো সিএনজি লি. সম্পুর্ণরুপে পরিবেশবান্ধব পদ্বতিতে নবায়নযোগ্য জ্বালানিরুপে বায়োগ্যাস ও জৈব সার উৎপাদন করছে।

তিনি বলেন, আমরা উন্নত প্রযুক্তির স্লারি ডিওয়াটারিং মেশিনের মাধ্যমে জৈব সার এবং পানি পৃথক করছি। উক্ত পানি পূণরায় বায়ো গ্যাস উৎপাদনে ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে আমাদের প্রযুক্তি সম্পুর্নরুপে ‍সাসটেইনেবল। বর্তমানে আমরা দৈনিক ২ টন প্রেস মাড বায়োগ্যাস প্লান্টের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করছি। এখান থেকে দৈনিক ৩০০ কিউবিক মিটার বায়োগ্যাস এবং ১.৫ টন জৈব সার উৎপাদন করছি।

তিনি দাবী করেন, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সার্বিক সহযোগিতা এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি পেলে আরো বড় পরিসরে নবায়নযোগ্য জ্বালানী উৎপাদন করে জাতীয় গ্রীডে বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং প্রত্যেক বাসা-বাড়ী, কলকারখানার জ্বালানীর চাহিদা পূরণ করা সম্ভব।

উল্লেখ্য, বর্তমানে রাজশাহীর বসুয়াস্থ ইফাত বায়ো সিএনজি লি. নিজস্ব প্লান্টে নবায়নযোগ্য বর্জ্য থেকে বায়োগ্যাস উৎপাদন করছে। এরপর কার্যকর প্রযুক্তির মাধ্যমে উক্ত বায়োগ্যাস থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড এবং হাইড্রোজেন সালফাইড পৃথকীকরণের মাধ্যমে বিশুদ্ধ মিথেন গ্যাস উৎপাদন করা হচ্ছে এবং উক্ত গ্যাসকে কমপ্রেস করে বায়ো সিএনজি উৎপাদন করা হচ্ছে, যা বোতলজাতকরণের মাধ্যমে স্বল্পমূল্যে বাসা বাড়ির জ্বালানি চাহিদা পূরণ করা হচ্ছে। এছাড়াও বায়ো সিএনজিকে যানবাহনের জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যাচ্ছে।

 

This post has already been read 3546 times!

Check Also

অর্থনীতির চলমান ধীরগতি দেশে মন্দা ডেকে আনতে পারে

 রাজধানী সংবাদদাতা: বর্তমানে রাজস্ব নীতির (ফিস্কাল পলিসি) মাধ্যমে যেই পদক্ষেপই গ্রহণ করা হোক না কেন, …