রবিবার , ডিসেম্বর ২২ ২০২৪

পোল্ট্রির গাট হেলথের সমাধান

ডা. এ.এইচ এম সাইদুল হক : পোল্ট্রি খাদ্যে বিগত ৬০ বছর ধরে এন্টিবায়োটিক গ্রোথ প্রমোটার (AGP) হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। এরা খাদ্যের রূপান্তর হার উন্নত করা, ওজন বৃদ্ধি এবং কলস্ট্রডিয়াম পারফ্রিনজেস দ্বারা সৃষ্ট রোগের প্রার্দুভাব কমাতে ব্যবহৃত হয়ে আসছিল। সাম্প্রতি গত কয়েক বছর ধরে বিজ্ঞানী এবং ভোক্তাদের মাঝে AGP -এর ব্যবহার নিয়ে দুশ্চিন্তার উদ্ভব হয়েছে। বিজ্ঞানীদের মাঝে প্রাণীদেহে AGP ব্যবহারের কারণে সৃষ্ট রেজিস্ট্যান্টজনিত সমস্যা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। ইতিমধ্যে মানবদেহে এর স্থানান্তরের কারণে মানবস্বাস্থ্য হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে। যাকে ইদানিং ‘Super bug’ নামে আখ্যায়িত করা হচ্ছে। এ কারণে পোল্ট্রি শিল্পে AGP -এর ব্যবহার নিয়ে পুনরায় চিন্তাভাবনা চলছে যার কারণে ২০০৬ সনের পর থেকে AGP -এর প্রাকৃতিক বিকল্প নিয়ে আগ্রহ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বর্তমানে এন্টিবায়োটিকের বিকল্প হিসাবে প্রোবায়োটিক, প্রিবায়োটিক, জৈব এসিড, অপরিহার্য তৈল, এনজাইম, বায়োসারফ্যাকটেন্ট ইত্যাদি ব্যবহৃত হচ্ছে। এক্ষেত্রে আদর্শ কম্বিনেশন হিসাবে দুই বা ততোধিক প্রোডাক্ট একসাথে ব্যবহারে এন্টিবায়োটিতেশর বিকল্প হিসেবে ভালো ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে। নিম্নে এ সমন্ধে বিশদ আলোচনা করা হল-

প্রোবায়োটিক: প্রোবায়োটিকস হলো এমন কিছু জীবন্ত অনুজীব যা পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রয়োগের ফলে পোষক দেহের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়। প্রোবায়োটিক অন্ত্রে প্রতিযোগিতামূলক অপসারণ (Competitive exclusion) মাধ্যমে স্বাভাবিকভাবে অবস্থানরত অনুজীবের সংখ্যা বৃদ্ধি ঘটায় এবং অপকারি অনুজীবকে দমিয়ে রাখে। পোল্ট্রির অন্ত্রের স্বাস্থ্য ঠিক রাখার নিমিত্তে প্রোবায়োটিক প্রতিযোগিতামূলক অপসারণ ছাড়া ও এপিথেলিয়াল ব্যারিয়ারের সংযুক্তি (Integrity) বজায় রাখে, পুষ্টির চলাচল এবং অন্ত্রের ইমিউনিটি বৃদ্ধি করে। প্রতিটি প্রোবায়োটিকের তাদের জেনারেশনের ভিত্তিতে নির্দিষ্ট কাজের ধরন রয়েছে।

উদাহরনস্বরূপ, প্রথম প্রজন্মের (1st generation) প্রোবায়োটিক শুধুমাত্র প্রতিযোগিতামূলক অপসারণের মাধ্যমে কার্যকারিতা দেখায় এবং দ্বিতীয় প্রজন্মের (2nd generation) প্রোবায়োটিক প্রতিযোগিতামূলক অপসারণ ছাড়াও এন্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান তৈরির মাধ্যমে রোগ জীবাণুর ওপর তাদের সুনির্দিষ্ট কার্যকারিতা প্রর্দশন করে। সাধারণত প্রোবায়োটিকসমূহ নিম্নোক্ত উপায়ে তাদের কার্যাবলী প্রর্দশন করে বলে ধারণা করা হয়। এগুলো হলো-

১. অপকারী ব্যাকটেরিয়ার সাথে নিজের জায়গা, অন্ত্রে সংযুক্তির (ওIntestinal attachment site) জন্য স্থান এবং পুষ্টির জন্য প্রতিযোগিতার মাধ্যমে।
২. অন্ত্রের পরিবেশগত অবস্থা পরির্বতনের মাধ্যমে (উদ্বায়ী ফ্যাটি এসিড এবং ল্যাকটিক এসিড তৈরির মাধ্যমে পিএইচ কমিয়ে দিয়ে)।
৩. অন্ত্রের ইমিউন সাড়াকে চরিত্রগত পরিবর্তন (Modulation) করে।
৪. এন্টিমাইক্রোবিয়াল উপাদান তৈরির মাধ্যমে যেমন- ল্যাকটোপেরিন, লাইসোজাইম, ব্যাকটেরিওসিন ইত্যাদি।

পোল্ট্রিতে সাধারণত যেসব প্রোবায়োটিক ব্যবহৃত হয়ে থাকে তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- ব্যাসিলাস সাবটিলিস, বিফিডোব্যাকটেরিয়াম প্রজাতি এবং ল্যাকটোব্যাসিলাস প্রজাতি। একটি আদর্শ প্রোবায়োটিক অবশ্যই পোষক সুনির্দিষ্ট, ক্ষতিকর জীবাণুবিহীন, আন্ত্রিক পরিবেশে টিকে থাকতে সক্ষম (যেমন- অম্লীয় পিএইচ), এন্টিমাইক্রোবিয়াল উপাদান উৎপাদনে সক্ষম, মিথজীবী ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধিতে ত্বরান্বিত করা সহ ইমিউন সাড়াতে সক্ষম হবে। শুধু তাই নয়, খাদ্য তৈরির বিভিন্ন ধাপে এর গুনগত মান অক্ষুন্ন থাকবে।

জৈব এসিড : জৈব এসিড যেমন- ল্যাকটিক, এসিটিক, ট্যানিক, ফিউমারিক, প্রোপিয়নিক, ফরমিক, সাইট্রিক, বেনজোয়িক এবং বিউটারিক এসিড মুরগির অন্ত্রের ওপর উপকারি ভূমিকা প্রর্দশন করে এবং উৎপাদনে ভূমিকা রাখে। খাদ্যে বা পানিতে জৈব এসিড ব্যবহার করলে মুরগির দৈহিক ওজন বৃদ্ধি পায় এবং খাদ্যের রূপান্তর হার উন্নত করে। বর্তমানে পোল্ট্রিতে বিভিন্ন ভৌত ও রাসায়নিকধর্মী জৈব এসিড খাদ্যে বা পানিতে ব্যবহৃত হচ্ছে। এসব জৈব এসিড একক উপাদান বা একাধিক এসিডের যৌগ হিসেবে পাওয়া যাচ্ছে। সম্প্রতি এক্ষেত্রে আরো সচেতনতা বেড়েছে এবং বর্তমানে পোল্ট্রি শিল্পে সুরক্ষিত বা ক্যাপসুলের মোড়কে আবৃত (Protected or encapsulated) জৈব এসিডের ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। কারণ, এ ধরনের ফর্মুলেশনের ফলে এসিডের দুর্গন্ধ দূর হওয়ার সাথে সাথে এদের ধীরগতিতে নিঃসরণ এবং নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছানো সম্ভব হয়। সম্পূরক হিসেবে জৈব এসিড ব্যবহার করলে অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়ার পমিাণের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের পরির্বতন (Modify) করা সম্ভব যদি এর সাথে প্রোবায়োটিক যোগ করা হয়।

ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে জৈব এসিডের কার্যকারিতা নির্ভর করে ব্যাকটেরিয়া পিএইচ -এ সংবেদনশীল কি না তার ওপর। কিছু কিছু ব্যাকটেরিয়া আছে যারা পিএইচ এ সংবেদনশীল, তাদের বিরুদ্ধে জৈব এসিড খুবই কার্যকর, যেমন- ই কলাই, সালমোনেলা, কলস্ট্রিডিয়াম পারফ্রিনজেস।

জৈব এসিড (বিশেষত মধ্যম চেইন ফ্যাটি এসিড, MCFA, প্রধানত লরিক এসিড) ব্যাকটেরিয়ার কোষপ্রাচীর ভেদ করে সেখানে ছিদ্র তৈরি করে যার ফলে কোষ মধ্যস্থ উপাদানসমূহ বেরিয়ে আসে। এর ফলে ব্যাকটেরিয়া অন্ত্রের সাথে সংযুক্ত হতে পারেনা এবং ব্যাকটেরিয়ার কোষগুলো মারা যায়। অধিকাংশ মধ্যম চেইন ফ্যাটি এসিড গ্রাম পজিটিভ ব্যাকটেরিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করে আবার স্বল্প দৈর্ঘ্যের ফ্যাটি এসিডসমূহ (SCFA) গ্রাম নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করে। কিছু ব্যাকটেরিয়া পিএইচ সংবেদনশীল নয়, সেক্ষেত্রে জৈব এসিড কার্যকর নয় যেমন- বিফিডো ব্যাকটেরিয়া, ল্যাকটোব্যাসিলাস। যে সকল ব্যাকটেরিয়া পিএইচ এর প্রতি সংবেদনশীল নয়, তারা অভ্যন্তরীণ ও বাইরের পিএইচ এর তারতম্য সহ্য করতে পারে। যার কারণে জৈব এসিড আবার অবিকৃত অবস্থায় ফিরে আসে এবং ব্যাকটেরিয়ার ভেতর থেকে বের হয়ে আসে। এর ফলে ব্যাকটেরিয়ার ওপর কোন প্রভাব পড়ে না।

প্রিবায়োটিক: প্রিবায়োটিক হলো অহজমযোগ্য খাদ্য উপাদান (Non digestable feed ingredients) যা পরিপাকনালীর উপর অংশে আর্দ্র বিশ্লেষণ (Hydrolysis) ও শোষণ না হয়ে নীচের দিকে (কোলন বা সিকামে) যায় এবং এটি পরিপাকনালীর উপকারি ব্যাকটেরিয়ার জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে এবং অপকারি ব্যাকটেরিয়ার জন্য প্রতিকূল পরিবেশ তৈরি করে। অপকারী জীবাণু প্রিবায়োটিকস এর সাথে একটি বন্ধন তৈরি করে ফলে ক্ষতিকর জীবাণু পরিপাকনালীর সংর্স্পশে আসতে পারে না। সর্বোচ্চ সুবিধা পেতে প্রিবায়োটিকের সাথে প্রোবায়োটিক ব্যবহার করা যেতে পারে। প্রোবায়োটিক যেমন- ল্যাকটোবাসিলাই এবং বিফিডোব্যাকটেরিয়া প্রজাতি প্রিবায়োটিককে গাঁজানোর (Ferment) মাধ্যমে স্বল্প দৈর্ঘ্যের ফ্যাটি এসিড তৈরি করে যা অন্ত্রের পিএইচকে হ্রাস করার মাধ্যমে সুনির্দিষ্ট অপকারি ব্যাকটেরিয়ার বিস্তারকে বাধা দেয়। পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, খাদ্য সম্পূরক হিসেবে প্রিবায়োটিক, প্রোবায়োটিক অথবা জৈব এসিড একাকি অথবা এর সংমিশ্রণ ব্রয়লারের ওজন বৃদ্ধিতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে। তাই খাদ্যে প্রোবায়োটিক এর সাথে প্রিবায়োটিক ব্যবহার অধিকতর ফলপ্রসু।

একটি আদর্শ প্রিবায়োটিক শোষিত বা আর্দ্রবিশ্লেষিত হবে না, এক বা একাধিক উপকারি ব্যাকটেরিয়ার পুষ্টি যোগানের মাধ্যমে সমৃদ্ধ করবে বা আন্ত্রিক মাইক্রোবায়োটার কার্যক্রমকে উপকারী ভূমিকায় পরির্বতন করতে পারে। প্রিবায়োটিক হিসেবে বহুল ব্যবহৃত উপাদানগুলো হলো- অলিগোস্যাকারাইড যেমন- ফ্রুক্টো অলিগোস্যাকারাইড (FOS), ম্যান্নান অলিগোস্যাকারাইড (MOS), গ্যালাকটো অলিগোস্যাকারাইড (GOS)। এছাড়া ল্যাকটোজ এবং কিছু পেপটাইড, প্রোটিন ও লিপিড এর প্রিবায়োটিক বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান।

ফাইটোবায়োটিকস: এ জাতীয় উপাদান উদ্ভিদজাত হয়ে থাকে যা ঔষধি (Herb), মসলা (Spices) এবং সুগন্ধিযুক্ত উদ্ভিদ হতে আহরণ করা হয়ে থাকে এবং যাদের সুনির্দিষ্ট এন্টিমাইক্রোবিয়াল, এন্টিফাংগাল, এন্টিভাইরাল, এন্টিঅক্সিডেন্ট এবং প্রশান্তিধর্মী গুণাবলী রয়েছে। এদের ব্যবহারে ক্ষুধা বাড়ে, খাদ্যের সহজপাচ্যতা বাড়ায় এবং দেহ অন্তঃস্থ পরিপাকের জন্য দায়ী এনজাইমসমূহের নিঃসরণে উদ্দীপনা যোগায়। এরা অন্

চিত্র: প্রাণি পুষ্টিতে ফাইটোজেনিকস এর প্রভাব।

ত্রে ক্ষতিকর জীবাণুর সংখ্যা হ্রাস করে এবং ভিলাইয়ের দৈর্ঘ্য বাড়িয়ে পুষ্টির ব্যবহার বৃদ্ধি করে। এদের ফ্লেভার, সুগন্ধি এবং ঔষধি গুণের কারণে মানবদেহে প্রয়োগ হয়ে আসছে।

বর্তমানে পোল্ট্রিতে ফিড এডিটিভ (যেমন- Anta Phyt MO, Biostrong Forte) হিসোবে এ সমস্ত উপাদান ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ইতিমধ্যে বেশ কিছু বিজ্ঞান ও প্রয়োগভিত্তিক রিপোর্টে এ জাতীয় উপাদানগুলোর উৎপাদন বর্ধক উপকারিতা পাওয়া গেছে। প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য ও প্রমাণিত কার্যকারিতার কারণে নিরাপদ খাদ্য তৈরিতে এর ভূমিকা বর্তমানে প্রমাণিত যা চিত্রে ছক আকারে দেখানো হয়েছে।

এনজাইম: গত এক যুগ ধরে পোল্ট্রি রেশনে ব্যাপকভাবে এনজাইমের ব্যবহার হয়ে আসছে। পোল্ট্রি ফিডে এনজাইমের ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ বিশেষত যা ভুট্টা ও সয়াবিন নির্ভর। কারণ, এদের পুষ্টিবিরোধী কিছু ফ্যাক্টর (Anti nutritional factor) এবং এনজাইম ইনহিবিটর এদের পরিপূর্ণ হজমে ব্যাঘাত ঘটায়। এছাড়া উৎপাদন খরচ কমানোর জন্য প্রায়শই কিছু অপ্রচলিত খাদ্য উপাদান ব্যবহারের প্রবণতা দেখা যায়, যার পুষ্টিবিরোধী ফ্যাক্টরের কারণে এনজাইমের ব্যবহার অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়ে। এছাড়া এনজাইমের ব্যবহারে আন্ত্রিক জীবাণুসমূহের বৈশিষ্ট্যগত পরির্বতন করা যায়। সম্পূরক হিসেবে এনজাইমের ব্যবহার পরিবেশে বর্জ্য পদার্থের নিঃসরণ কমে আসায় পরিবেশ সুন্দর থাকে।

চিত্র: অপরিহার্য তৈলের অনুমিত ব্যাকটেরিয়ারোধী প্রক্রিয়া।

অপরিহার্য তৈল: ঔষধি ও উদ্ভিদজাত পণ্যসমূহে বিদ্যমান জৈবিকভাবে সক্রিয় উপাদানসমূহের ব্যবহারের মাধ্যমে অন্ত্রের সংযুক্তি, পরিপাকতন্ত্রের পরিবেশ এবং মাইক্রোফ্লোরার ওপর এদের উপকারি ভূমিকা বিভিন্ন রিপোর্টে প্রকাশিত হয়েছে। অপরিহার্য তৈলের ব্যবহারের (যেমন- Aviance, Activo) মাধ্যমে খাদ্য গ্রহণে উদ্দীপনা, আন্ত্রিক রস নিঃসরন, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উদ্দীপনা, এন্টিব্যাকটেরিয়াল, এন্টিভাইরাল, কক্সিডিওস্ট্যাট, প্রদাহরোধী এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট ধর্ম জাতীয় উপকার পাওয়া যায়।

বায়োসারফেকটেন্ট: পোল্ট্রি খাদ্যে চর্বি এবং তৈল ব্যবহার করা হয়। বিভিন্ন পরীক্ষায় দেখা গেছে প্রাথমিক অবস্থায় মুরগিতে নিম্ন মাত্রার ইমালসিফিকেশন এবং লাইপেজ এর সক্রিয়তা কম থাকায় চর্বির বিপাক খুব কম মাত্রায় হয়ে থাকে। চর্বি ও তৈলের শোষণ উন্নত করতে খাদ্যে বায়োসারফ্যাকটেন্ট এর ব্যবহার খুবই কার্যকর। কারণ, এর ফলে ইমালসিফিকেশন প্রক্রিয়া বেড়ে যাওয়ায় ক্ষুদ্রান্তে ছোট ছোট চর্বি বা তৈলের ড্রপলেট তৈরি হয় এবং চর্বির আর্দ্র বিশ্লেষণ উন্নত করে। এছাড়া লাইপোফসফোলিপিড -এর খুব নিম্ন মাত্রার ক্রিটিক্যাল মিসেলার ঘনত্ব (CMC) থাকায় সহজে এবং ছোট আকারের মিসেলি (micelle) তৈরি হয় যা ভিটামিন এ, ডি, ই এবং কে সহ ক্যারোটিনয়েড এর শোষণকে উন্নত করে। ফলে অন্ত্রের ভিলাই এবং আন্ত্রিক কোষের কোষ আবরণীতে সহজে প্রবেশ করতে পারে। বায়োসারফ্যাকটেন্ট (যেমন- Lysoforte, Jubidol, Lipidol) এর সাথে প্রবায়োটিক এর যুগপৎ ব্যবহার করলে উৎপাদন দক্ষতা বৃদ্ধি পায় ও লিটারের গুগগতমান বৃদ্বি পায়।

মাইকোটক্সিন বাইন্ডার: পোল্ট্রি খাদ্যে বিদ্যমান মাইকোটক্সিন মারাত্মক ঋনাতœক প্রভাব ফেলতে পারে। মাইকোটক্সিন এর ক্ষতিকর প্রভাব সুস্পষ্ট এবং দীর্ঘমেয়াদি। মাইকোটক্সিন সংক্রমিত খাদ্যের বিষক্রিয়া রোধ করতে বিভিন্ন ধরনের মাইকোটক্সিন বাইন্ডার (যেমন-Toxfin, Elitox, Mycofix) উদ্ভাবিত হয়েছে। এরা মাইকোটক্সিনকে বাইন্ড করে এবং পোল্ট্রিকে এর ঋনাত্মক প্রভাব থেকে মুক্ত রাখে।

ব্যাকটেরিওফাজ: এগুলো হলো এক ধরনের ভাইরাস যা ব্যাকটেরিয়াকে আক্রমণ করে এবং পোষকের বিপাকীয় ব্যবস্থাকে কাজে লাগিয়ে বৃদ্ধি পায় এবং অপকারী ব্যাকটেরিয়ার কোষকে ধ্বংস করে পরিবেশে নতুন জাতের নির্গমন করে। এরা প্রাণি এবং উদ্ভিদ কোষকে ক্ষতি করে না। কাজেই এদেরকে এন্টিবায়োটিকের নিরাপদ বিকল্প হিসেবে ভাবা হয়। ব্যাকটেরিওফাজ এর কলস্ট্রিডিয়াম পারফ্রিনজেস এর ওপর সুনির্দিষ্ট প্রভাব রয়েছে যা মুরগিতে নেক্রোটিক এন্টারটিস প্রতিরোধ করে।

লেখক: টেকনিক্যাল ম্যানেজার, থ্রি এস এগ্রো সার্ভিস; রেজিঃ নং: ২০২৮

Ref: 1.Avitech technical bulletin, October, 2008; 2.Delacon dossier: Intestinal health in poultry; 3. Vamso biotec technical bulletin; 4.Gastrointestinal microflora and its influence on the host, Biomin Megazine; 5. Recent trends in Gut health management, Biomin GmbH.

This post has already been read 9563 times!

Check Also

সাড়ে ৬ টাকা দরে ভারতীয় ডিম এলো বাংলাদেশে!

এগ্রিনিউজ২৪.কম ডেস্ক: ডিম আমদানির অনুমতির পর চতুর্থ চালানে এবার ভারত থেকে ডিম আমদানি হলো সাড়ে …