রবিবার , ডিসেম্বর ২২ ২০২৪

পুকুরে চাষ করা যাবে খলশে মাছ : কৃত্রিম প্রজননে পোনা উৎপাদনে সফলতা

ছবি: ইন্টারনেট

এগ্রিনিউজ২৪.কম ডেস্ক: বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে খলশে মাছের পোনা উৎপাদনে সফল হয়েছেন। এতদিন মাছটি শুধু নদী-খাল-বিলের মতো প্রাকৃতিক জলাশয়ে এটি বড় হতো। পুকুরে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে এই মাছের পোনা উৎপাদন করা হতো না। ফলে পুকুরে বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা সম্ভব ছিল না। বিএফআরআই বিজ্ঞানীদের এই সফলতার ফলে খলশে মাছ পুকুরে চাষের উপযোগী করা সম্ভব হলো। ফলে জনপ্রিয় এই ছোট মাছ পুকুরে চাষে কোনো বাধা থাকল না।

মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের ময়মনসিংহে সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ইনস্টিটিউটের নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর স্বাদু পানি উপকেন্দ্র থেকে এ প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হয়েছে। গবেষক হিসেবে ছিলেন উপকেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. খোন্দকার রাশিদুল হাসান ও বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. শওকত আহমেদ।

গবেষণায় দেখা যায়, পুকুরে ৮ থেকে ১০ সেন্টিমিটার (১৫-২০ গ্রামের) খলশে মাছ পরিপক্ব হয়ে থাকে। মাছটির বয়স, আকার ও ওজন অনুপাতে ডিম ধারণ ক্ষমতা ৫ হাজার থেকে ১৩ হাজার এবং প্রজননকাল মে থেকে সেপ্টেম্বর। এসব তথ্যের ভিত্তিতে উপকেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা গবেষণা চালিয়ে ১২ জুলাই মাছটির কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে পোনা উৎপাদনের কলাকৌশল উদ্ভাবনে সাফল্য পান।

সংস্থাটির গবেষকেরা জানান, প্রজনন মৌসুমের আগেই প্রাকৃতিক উৎস থেকে কিশোর বয়সের মাছ সংগ্রহ করে উপকেন্দ্রের পুকুরে পোনা প্রতিপালন করা হয়। প্রজনন মৌসুমে পরিপক্ব স্ত্রী ও পুরুষ মাছ পুকুর থেকে সংগ্রহ করে হ্যাচারি ট্যাংকে পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা রাখা হয়। পরে হরমোন ইনজেকশন প্রয়োগ করা হয়। হরমোন ইনজেকশন প্রয়োগের ১৩ থেকে ১৫ ঘণ্টা পর মা খলশে মাছ ডিম দেয়। ২০ থেকে ২২ ঘণ্টা পর ডিম থেকে রেণু পোনা উৎপন্ন হয়।

সংস্থাটির বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এই প্রযুক্তি উদ্ভাবনের ফলে খলশে মাছ চাষের পোনা প্রাপ্তি সহজতর হবে এবং চাষাবাদ সম্ভব হবে। সেই সঙ্গে প্রকৃতিতে প্রজাতিটি সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে। বাংলাদেশে এ মাছকে খাবারের মাছ ছাড়াও অ্যাকুয়ারিয়াম বা বাহারি মাছ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাহারি মাছ হিসেবে এর চাহিদা রয়েছে।

উল্লেখ্য, খলশে বাংলাদেশের অতি পরিচিত ও দেশীয় প্রজাতির একটি মাছ। এর বৈজ্ঞানিক নাম কলিসা ফ্যাসিয়েটাস (Colisa fasciatus), যা আমাদের দেশে খৈলশা, খলিশা, খৈইলা নামে পরিচিত। প্রাকৃতিকভাবে এ প্রজাতি মূলত বাংলাদেশসহ, ভারত, নেপাল ও মিয়ানমারে পাওয়া যায়। মিঠা পানির জলাশয়ে, বিশেষ করে পুকুর, নদী, ঝরনা, খাল, বিলে একসময় এ মাছ প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যেত। ধান ও সবজি চাষে কীটনাশকের যথেচ্ছ প্রয়োগ, অপরিকল্পিতভাবে বাঁধ নির্মাণ, জলাশয় শুকিয়ে মাছ ধরা, কলকারখানার বর্জ্য নিঃসরণ ইত্যাদি কারণে এর বাসস্থান ধ্বংস হচ্ছে। এর প্রজননও কমে যাচ্ছে। এর প্রাচুর্যও ব্যাপক হারে কমছে।

এ পরিস্থিতিতে এই প্রজাতিকে বিলুপ্তির হাত থেকে বাঁচাতে ও চাষের জন্য পোনার প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে খলশের কৃত্রিম প্রজনন-কৌশল উদ্ভাবন করেন মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা। ২০১৬ সাল থেকে সংস্থাটির সৈয়দপুর উপকেন্দ্রে প্রাকৃতিক উৎস থেকে খলশে মাছ সংগ্রহ করে তা পুকুরে প্রতিপালন, ডিম ধারণ ক্ষমতা নির্ণয়, সঠিক প্রজননকাল চিহ্নিতকরণসহ অন্যান্য গবেষণা পরিচালনা শুরু করা হয়।

This post has already been read 5056 times!

Check Also

হাওরে ইজারা অবিলম্বে বন্ধ করা উচিত -মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা

নিজস্ব প্রতিবেদক: মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা মিজ্ ফরিদা আখতার বলেছেন, ‘আমি মনে করি, হাওরে ইজারা …