রবিবার , ডিসেম্বর ২২ ২০২৪

মোরগ-মুরগির পালক দিয়ে হবে বায়োডিজেল!

মো. সাজ্জাদ হোসেন : যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের বেশ কিছু বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে প্রাথমিক জ্বালানি হিসেবে পোল্ট্রি এবং টার্কি লিটার ব্যবহার করা হচ্ছে। আয়ারল্যান্ডে বায়োমাস এনার্জি’র উৎস হিসেবে পোল্ট্রি লিটার ব্যবহৃত হচ্ছে। ব্রয়লার হাউসের তাপ বা উষ্ণতা বাড়াতে আগে যেখানে ফসিল ফুয়েল বা এলপিজি গ্যাস ব্যবহার করা হতো এখন সেখানে এর পরিবর্তে পোল্ট্রি লিটার ব্যবহার করা হচ্ছে।

জ্বালানি তৈরিতেও পিছিয়ে নেই পোলট্রি। ‘এডভান্স ফাইবারস এন্ড পাউডারস’ এর মত বড় বড় কোম্পনি তাদের ইলেকট্রিক্যাল ও হিটিং অ্যাপ্লিকেশনে জ্বালানী হিসেবে পোল্ট্রি লিটার ব্যবহার করছে। এর পাশাপাশি তারা একটিভেটেড কার্বন এবং সারও তৈরি করছে। পোলট্রি বা মোরগ-মুরগির পালক ও অন্যান্য অংশ দিয়ে তৈরি হচ্ছে বায়োডিজেল।

নেভাদা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা ‘চিকেন ফেদার মিল’ থেকে এক নতুন ধরনের বায়োডিজেল ফুয়েল তৈরি করেছেন। নেভাদা’র প্রফেসর মনোরঞ্জন মিশ্রা ও তাঁর সহকর্মীরা লক্ষ্য করেন যে চিকেন ফেদার মিলে মুরগির পালক ছাড়াও রক্তসহ প্রসেসিং এর সময় মুরগির শরীর থেকে ছড়ে যাওয়া আরও কিছু অংশ থাকে। চিকেন ফেদার মিলে প্রচুর পরিমান প্রোটিন উপাদান মিশ্রিত থাকে। আরো থাকে নাইট্রোজেন। সেজন্যই পশুখাদ্য এবং জৈব সার তৈরিতে এর ব্যবহার বাড়ছে।

তবে চিকেন ফেদার মিল সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের আগ্রহ অন্য কারণে। আর তা হলো এতে প্রায় ১২% ফ্যাট কনটেন্ট (চর্বি)। বিজ্ঞানীদের অনুমান- শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রের পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রতেই যে পরিমাণ ফেদার মিল তৈরি হয় তা দিয়ে বছরে প্রায় ১৫৩ মিলিয়ন গ্যালন বায়োডিজেল উৎপাদন সম্ভব। আর সারাবিশ্বে যে পরিমাণ ফেদার মিল উৎপাদিত হয় তা দিয়ে বছরে প্রায় ৫৯৩ মিলিয়ন গ্যালন বায়োডিজেল উৎপাদন করা সম্ভব!

অবশ্য সাম্প্রতিককালে পোল্ট্রি ফেদার মিল নিয়ে যে গবেষণাগুলো পরিচালিত হচ্ছে তার উদ্দেশ্য মূলত: তিনটি (১) উন্নতমানের কম্পোজিট ফাইবার তৈরি করা; (২) এন্টিমাইক্রোবিয়াল প্রোপারটিজ দিয়ে ফাংশনাল কেরাটিন কম্পোজিট ফিল্ম তৈরি; এবং (৩) কমবুশন কে কাজে লাগিয়ে ওয়েস্ট-টু-এনার্জি প্রসেস তৈরি করা।

আগামী পৃথিবীর এনার্জি ইফিসিয়েন্ট গ্রীণ বিল্ডিংস তৈরিতে ফাইবার বোর্ডের ব্যাপক ব্যবহার হতে পারে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। বিশেষ করে জলবায়ুর পরিবর্তন মোকাবেলায় এর ব্যবহারকে যথেষ্ট সহায়ক বিবেচনা করা হচ্ছে। ওদিকে ফুড প্যাকেজিং ইন্ডাস্ট্রি এবং মেডিক্যাল ডিভাইস প্যাকেজিং -এ কেরাটিন কম্পোজিট ফিল্মের ব্যবহার নব দিগন্তের সূচনা করবে বলে ধারনা করা হচ্ছে।

কাজেই বলা যায় আগামীদিনগুলোতে ডিম, বাচ্চা, কিংবা মাংস উৎপাদনই কেবল নয় পোল্ট্রি শিল্পে যোগ হবে আরো সব নব নব আবিষ্কার। বাড়বে কর্মসংস্থান। উন্নত বাংলাদেশ গড়তে আগামীতে পোল্ট্রি শিল্পই হয়তো হবে সবচেয়ে বড় সহায়ক শক্তি।

পোল্টি আমার সাবজেক্ট নয়। আমার বিষয় হচ্ছে সাংবাদিকতা। বলতে পারেন অনেকটা শখের বসেই লিখতে বসেছি। পোল্ট্রি বিজ্ঞান নিয়ে যাঁরা পড়াশুনা করছেন, তাঁরা এ বিষয়ে আরো অনেক বেশি তথ্য ও জ্ঞান রাখেন। তাই তাঁরা যদি এ বিষয়গুলো নিয়ে লিখেন তবে আরো ইনডেপথ ইনফরমেশন জানতে পারবে সাধারণ মানুষ। পোল্ট্রি’র সম্ভাবনাময় এ দিকগুলো নিয়ে লেখালেখির পরিধি বাড়ালে সতীর্থ কিংবা অনুজ’রা তো বটেই এমনকি পোল্ট্রি উদ্যোক্তা এবং পোল্ট্রি শিল্পে এখনো যারা বিনিয়োগ করেননি এমন উদ্যোক্তারাও আগ্রহী হয়ে উঠতে পারেন।

যে কথাটি এখানে উল্লেখ করা দরকার সেটি হচ্ছে পোল্ট্রি রিসাইক্লিং কিছুটা ভিন্ন ঘরানার প্রকল্প। তাছাড়া ডিম কিংবা মুরগি পালন করে যে পরিমান আয় করা যায় ঠিক এই মুহূর্তে বাংলাদেশে পোল্ট্রি রিসাইক্লিং থেকে সে ধরনের আয়ের ক্ষেত্রটিও বেশ সীমিত। অনেক দেশেই শুরুতে এ ধরনের প্রকল্পকে উৎসাহিত করতে সরকারিভাবে প্রণোদনার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমাদের দেশে যে দু’একজন উদ্যোক্তা এ ধরনের প্রকল্প নিয়ে এগিয়ে এসেছেন তাঁরা স্বতঃপ্রণোদিত হয়েই অর্থ লগ্নি করেছেন। কেউ কেউ হয়ত ভেবেছিলেন সরকারের সহযোগিতা পাওয়া যাবে কিন্তু তেমনটি হয়নি। তবে একথাও সত্য যে পোল্ট্রি সম্পর্কে কিংবা পোল্ট্রি রিসাইকেল সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ও যে খুব বেশি ওকিবহাল সেটিও হয়তো বলা যাবেনা। পোল্ট্রি’র স্বতন্ত্র কোন অস্তিত্বও খুব একটা নজরে পড়েনা। প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে হলেও মাছের একটি পৃথক অধিদপ্তর আছে; গরু, মহিষ নিয়ে চোখে পড়ার মত বড় বড় প্রকল্প আছে কিন্তু পোল্ট্রিকে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ভেতরে অনেকটা হাতড়িয়েই খুঁজে বের করতে হয়। সে কারণেই আমার কাছে মনে হয় পোল্ট্রি নেতৃবৃন্দের উচিত পোল্ট্রি’র একটি পৃথক ‘অধিদপ্তর’ কিংবা নিদেনপক্ষে একটি ‘পোল্ট্রি উন্নয়ন বোর্ড’ গঠনের দাবিকে জোরালোভাবে উপস্থাপন করা। একই সাথে পোল্ট্রি রিসাইক্লিং এর প্রয়োজনীয়তা ও সম্ভাবনা এবং এ ধরনের প্রকল্পে সরকারিভাবে প্রণোদনা দেয়ার বিষয়টিতেও তাগাদা দেয়া দরকার।

খুবই সাধারণ প্রযুক্তি ব্যবহার করে পলিথিনের মত জটিল বর্জ্য থেকে জ্বালানি তৈল উৎপাদন করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন জামালপুরের তরুণ তৌহিদুল। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট, চট্টগ্রাম, পটুয়াখালি, দিনাজপুর, খুলনা কিংবা রাজশাহীতে কি এমন কেউ নেই যিনি আমাদের এভাবেই তাক লাগাতে পারেন? অপেক্ষায় থাকলাম।

লেখক: যোগাযোগ ও মিডিয়া উপদেষ্টা, বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাষ্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি)
ইমেইল: md.sazzad.hossain@gmail.com

This post has already been read 5448 times!

Check Also

সাড়ে ৬ টাকা দরে ভারতীয় ডিম এলো বাংলাদেশে!

এগ্রিনিউজ২৪.কম ডেস্ক: ডিম আমদানির অনুমতির পর চতুর্থ চালানে এবার ভারত থেকে ডিম আমদানি হলো সাড়ে …